কক্সবাংলা ডটকম(৩ আগস্ট) :: বারমুডা ট্র্যাঙ্গেল এমন একটি রহস্য যা নিয়ে ভাবতে গিয়ে কালঘাম ছুটছে সাধারণ মানুষ থেকে চিন্তাশীল ব্যক্তিদের। কিন্তু সমাধান সূত্রে পৌছতে পারেননি কেউই। অবশেষে সেই রহস্যেরই জট খুলল বলে মনে করছেন অনেকে।
জানা গিয়েছে, ৭৫ টি বিমান ও প্রায় ১০০ টির কাছাকাছি জাহাজ বারমুডা ট্র্যাঙ্গেলে প্রবেশের পরই উধাও হয়ে গিয়েছে। এই রহস্যের মৃত্যুপুরী ‘ডেভিলস ট্র্যাঙ্গেল’ নামে বেশি পরিচিত। এই রহস্য জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নের। পাশাপাশি আশঙ্কা, ভয় ও চক্রান্তের।
এটি আটলান্টিক মহাসাগরের উপর ৫ লক্ষ কিমি বর্গক্ষেত্রের একটি এলাকা যা ফ্লোরিডা, পিওরটো রিকো এবং বারমুডার মধ্যে অবস্থিত। জানা যায় এই বারমুডা ট্র্যাঙ্গেলে ১০০ বছরে ১০০০ জন মানুষের জীবন নিয়েছে। প্রতি বছর গড়ে চারটি বিমান এবং ২০টি জাহাজ নিখোঁজ হয় এখানে। অনেক সময় আবহাওয়া শান্ত থাকা সত্ত্বেও কোন রকম বিপদের বার্তা না পাঠিয়েই এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গালে জাহাজ ও বিমান নিখোঁজের ঘটনাও ঘটেছে।
বর্তমানে ‘চ্যানেল ৫’ তাদের ‘দ্যা বারমুডা ট্র্যাঙ্গেল এনিগমা’ তথ্যচিত্রে দাবি করেছে সম্ভবত এই রহস্যজনকভাবে বিমান বা জাহাজ উধাও হয়ে যাওয়ার পিছনে রয়েছে ১০০ ফুট উচ্চতার ‘রাফ ওয়েভ’ বা ‘ভয়ঙ্কর ঢেউ।’ কিন্তু কি এই ‘রাফ ওয়েভ’?
বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা যায় ‘অত্যন্ত ঝোড়ো ঢেউ।’ এই ঢেউগুলি ১০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত উপরে উঠতে পারে। ১৯৯৭ সালে প্রথম একটি স্যাটেলাইটের সাহায্যে দক্ষিণ আফ্রিকার সমুদ্র উপকুলে এই ভয়ঙ্কর ঢেউ লক্ষ্য করা যায়। এই ঢেউগুলি সম্পর্কে আগে থেকে কোনও আভাস পাওয়া যায় না।
চ্যানেল ৫ এর তথ্যচিত্রে বিজ্ঞানীরা আভ্যন্তরীণ উদ্দীপকের সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে একটি ভয়ঙ্কর ঢেউ তৈরি করেন।
সাদাম্পটনের বিজ্ঞানীরা ‘ইউএসএস সাইক্লোপস ‘ নামে একটি জাহাজ তৈরি করেন যা ১৯১৮ সালে ৩০০ জনকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। জাহাজটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জ্বালানি সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৯১৮ সালে বাহিয়া থেকে বাল্টিমোর যাওয়ার সময় এটি উধাও হয়ে যায় । উল্লেখ্য , এই জাহাজটির ভগ্নাবশেষ বা ৩০৬ জনের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
সমুদ্র বিজ্ঞানী সাইমন বক্সবল বলেন , আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর তিনটি ভিন্ন জায়গা থেকে তিনটি ভয়ঙ্কর ঝড় আশার ফলে ওইসময় ভয়ঙ্কর ঢেউের সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি আরও বলেন এইরকম ঢেউ জাহাজটিকে টুকরো টুকরো করেও দিয়ে থাকতে পারে।
বিজ্ঞানী ডঃ ক্রসজেলনেইকি বলেন এমন নয় যে শুধুমাত্র বারমুডা ট্র্যাঙ্গেলেই এইরকম ঘটনা ঘটেছে। পৃথিবীর বহু জায়গাতেই এইরকম ঘটনার ইতিহাস রয়েছে । কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে উত্তর মিললেও বারমুডা ট্র্যাঙ্গেলের রহস্যের সমাধান হয়নি । দ্যা ন্যাশনাল ওসিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাট- মওস্ফোরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিজ্ঞানী ডঃ ক্রসজেলনেইকির সঙ্গে একমত হয়ে জানিয়েছেন, যে এই ট্র্যাঙ্গেলের সঙ্গে অন্যান্য জায়গার কোনও তফাৎ নেই। একই ধরনের বাতাস ও সমুদ্রের অবস্থান রয়েছে সেখানে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে বিনা কারণেই এখানে জাহাজ অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার একটি বড় কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক বিষয়। মূলত দৈত্যাকার ঢেউয়ের মধ্যে হারিয়ে যায় জাহাজ এবং বিমান। এই ঢেউগুলো এতো বিশাল যে আকাশে উড়ে যাওয়া বিমানকেও গ্রাস করে ফেলে নিমিষেই। ইউনিভার্সিটি অব সাউথাম্পটনের একটি দল বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের এই রহস্য উদঘাটনে দীর্ঘদিন গবেষণা করে এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
গবেষকদের ধারণা, এই ঢেউগুলো ১০০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার হয়ে থাকে। কোন জাহাজ এই ঢেউয়ের মুখে পড়লে কোনভাবেই আর রক্ষা পাওয়ার কোন উপায় থাকে না। গবেষণার অংশ হিসেবে তারা ১৯১৮ সালে বারমুডা ট্রায়াঙ্গালে নিখোঁজ হওয়া ৫৪২ ফুট লম্বা কয়লা বোঝাই ইউএসএস সাইক্লোপস জাহাজটির একটি মডেল তৈরি করেন। একই সাথে মডেল ঢেউও সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে সেই ঢেউয়ের মাঝে মডেল জাহাজটিকে ফেলে দেখা যায় ঢেউয়ের মধ্যে অনায়াসেই ডুবে যায় জাহাজটি।
ইউনিভার্সিটি অব সাউথাম্পটনের সমুদ্র এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ড. সিমোন বোক্সাল বলেন, মূলত বারমুডা, ফ্লোরিডা এবং পুয়ের্তো রিকোর প্রত্যেকটি দিক দিয়ে ঢেউ এসে ঐ নির্দিষ্ট অঞ্চলে যখন মিলিত হয় তখন বিশাল আকার ধারণ করে।
ঝড়ের মধ্যে ঢেউগুলো ভয়াবহ রূপ নেয়। উত্তর দিক এবং দক্ষিণ দিক থেকে আসে তীব্র ঝড়। ঐ ঝড়ের সাথে যখন আবার ফ্লোরিডার দিক থেকে ঝড়ো বাতাস এর সাথে মিলিত হয় তখন তা রুদ্ররূপ নেয়। ঢেউগুলো ৩০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতার হয়ে থাকে।
Posted ১:৩৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৩ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta