কক্সবাংলা ডটকম(৮ জুলাই) :: গুজব ছড়িয়ে শনিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের নাম করে বেশ কিছু বহিরাগতও অংশ নিয়েছিল এই হামলায়। সেখানে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।
রবিবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে।
শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মিছিল জিগাতলা মোড় পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি দেয় পুলিশ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের একাংশ যখন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকেই যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে তখনই বাঁধে বিপত্তি। পুলিশ ব্যারিকেড দিলে তারা ব্যারিকেড ভেঙে অগ্রসর হতে উদ্যত ঠিক তখনই দু পক্ষে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বেশ কিছু কর্মী ছাত্রদের ধাওয়া করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীতে সব জায়গায়ই শিক্ষার্থীরা মিছিল সমাবেশ করছে। সরকারের তরফ থেকে তাদের সহযোগিতাই করা হচ্ছে। কোথাও পুলিশ তাদের উপর চড়াও হয়নি। ছাত্রলীগ নেতারাও চকলেট দিয়ে শাহবাগে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করেছে। তাহলে কেন আওয়ামী লীগ অফিস তাদের টার্গেট হবে? প্রধানমন্ত্রী তো শুরুতেই শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। কিছু দাবি ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। বাকীগুলোও পর্যায়ক্রমে করা হচ্ছে। তাহলে নিশ্চয় এর পেছনে কোন অসত্ উদ্দেশ্য আছে।
প্রধানমন্ত্রী রবিবার গণভবনে বলেছেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগ নিতে ‘তৃতীয় পক্ষ’ নেমেছে। তাই আন্দোলনরতদের এখন ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার শিক্ষার্থীদের মধ্যে গুজব ছড়ানো হয় আওয়ামী লীগ অফিসে কয়েকজনকে আটকে রাখা হয়েছে। এমনকি ধর্ষণ ও মৃত্যুর গুজবও ছড়ানো হয়। এরপর আওয়ামী লীগ নেতারা শিক্ষার্থীদের পার্টি অফিসে নিয়ে যান। সেখানে পুরো অফিস তাদের ঘুরিয়ে দেখানো হয়। পরে তারা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন, আসলে সেখানে কিছুই হয়নি। গুজব ছড়িয়ে তাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, তাহলে রবিবারও কেন মিছিল নিয়ে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ের দিকে যেতে হলো? রাজধানীতে কি মিছিল বা সমাবেশ করার আর কোন জায়গা নেই? এই অফিসই কেন টার্গেট?
শিক্ষার্থীরা বলছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শনিবার ছাত্রলীগ-যুবলীগের মারাত্মক হামলার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে জিগাতলা এলাকায় গেলে তাদের ওপর আবারও একই ধরনের হামলা করা হয়।
এসময় সন্ত্রাসীদের হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত চার শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও সন্ত্রাসীদের লাঠিসোটার আঘাতে আরও অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে আন্দোলনরতরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হামলাকারীরা ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মী। এ ঘটনার তথ্য সংগ্রহের সময় দুর্বৃত্তদের হাতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও মারধরের শিকার হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার সকাল ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, বারডেমসহ বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। ফলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন হঠাত্ই তীব্র গতি পায়। শিক্ষার্থীরা শাহবাগ এলাকা থেকে বিক্ষোভ করতে করতে সায়েন্স ল্যাবরেটরি হয়ে জিগাতলা এলাকার দিকে রওনা দেয়। আগের দিন জিগাতলা ও ধানমন্ডি এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় ওই এলাকায় আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নেয় পুলিশ।
এর মধ্যে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা থেকে পিলখানা পার হয়ে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের দিকে গেলে পুলিশ তাদের সেখান থেকে ঘুরে চলে যেতে বলে। কিন্তু, তারা পুলিশের অনুরোধ উপেক্ষা করে ধানমন্ডি ৩/এ সড়কে অবস্থিত আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে শিক্ষার্থীদের একাংশ সেখান থেকে ঘুরে সায়েন্স ল্যাবরেটরির পথ ধরে। কিন্তু, অপর অংশ সেখানেই অবস্থান করে আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে হঠাত্ই ধানমন্ডি লেকের দিক থেকে একদল মানুষ লাঠিসোটা, রামদা, কিরিচ ইত্যাদি নিয়ে এসে তাদের ওপর চড়াও হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হামলাকারীরা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মী। সংঘর্ষ চলাকালে বহু শিক্ষার্থী ধানমন্ডি লেকের মধ্যে পড়ে যান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।
এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর হামলে পড়ে। তাদের হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী মারধরের শিকার ও অন্তত চার শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। তারা আরও অভিযোগ করেন, হামলাকারীদের অনেকেই হেলমেট পরে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
আহতদের মধ্যে অন্তত তিনজনের মাথায় জখম হয়েছে বলে ঢাকা মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও একজনের গাল ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কেটে গেছে। রক্তক্ষরণ ঠেকাতে ও প্রাথমিক চিকিত্সার জন্য তাত্ক্ষণিক তাদের পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে। এদের একজনের পরিচয় জানা গেছে। তার নাম মাহমুদুর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র।
এদিকে, ঘটনাস্থল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেল বহর নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় মহড়া দিতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, পিলখানা-জিগাতলা এলাকায় বিজিবি প্রহরা দেওয়া শুরু করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) সূত্রে জানা গেছে, আহত ৮ শিক্ষার্থী সেখানে ভর্তি হয়েছেন। তারা হলেন ঢাবির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান (২১), সুসমিতা রয়েল লিসা (২৩), তুষার (২৪), মারুফ (২৫) ও শিমন্তী (২৬), বুয়েটের রাকিন (২৩) আইইউবি’র ছাত্র এনামুল হক (২৪) ও তামিম (২৩)।
শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার বিষয়ে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘কারা হামলা চালিয়েছে তা আমরা জানি না। আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি।’
সড়কে মৃত্যুর সাজা দণ্ডবিধিতে ছেড়ে দিয়ে গত বছরের ২৭ মার্চ সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদন পায়। এরপর তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু পরিবহন নেতারা খসড়ার বিভিন্ন ধারা ও শাস্তির বিধান শিথিল করতে চাপ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের বাধায় প্রায় দেড় বছর আইন মন্ত্রণালয়ে আটকে থাকে খসড়াটি।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সমকালকে জানিয়েছেন, খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উঠবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সংসদে পাঠানো হবে। সেখানে পাস হলে আইনটি কার্যকর হবে।
দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে চালকের ফাঁসিতে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। গত সপ্তাহে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হলে আইনের খসড়া ভেটিং সাপেক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হয়। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে সংসদে পাস হয়ে কার্যকর হবে সড়ক পরিবহন আইন।
Posted ১:৫৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৬ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Chy