শনিবার ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

আলুর অতিরিক্ত উৎপাদনই কি চাষিদের জন্য কাল হলো?

বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
133 ভিউ
আলুর অতিরিক্ত উৎপাদনই কি চাষিদের জন্য কাল হলো?

কক্সবাংলা ডটকম(২০ মার্চ) :: অনুকূল আবহাওয়ায় এ বার আলুর উৎপাদন ভালোই হয়েছে। কিন্তু মাঠ থেকে আলু তোলার পরে দাম নিয়ে নাকাল হচ্ছেন তাঁরা।

তাদের ভাষ্যমতে, গত মৌসুমে আলুর ভালো দাম পাওয়ায় এবার দেশে আলুর আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি জমিতে। উৎপাদনও ১ কোটি ২০ লাখ টন ছাড়ানোর আশা করা হচ্ছে। যদিও কৃষক পর্যায়ে আলুর উৎপাদন খরচও উঠছে না এখন। কৃষি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত হিমাগার ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়ায় আলু সংরক্ষণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

তাই ছয় মাস বাড়তি ভাড়া দিয়ে আলু সংরক্ষণের ঝুঁকি না নিয়ে মাঠেই কম দামে আলু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এতে ভরা মৌসুমে আলুর দাম খুচরা বাজারে কেজিতে ২০ টাকার নিচে নেমে এলেও মৌসুম শেষে বাজার চড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার অভাবে একই অবস্থা পেঁয়াজ ও টমেটোর বাজারেও।

কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কৃষিপণ্যের মধ্যে নিত্যপণ্য হিসেবে চালের পরই আলুর অবস্থান। পণ্যটির মূল্য পড়ে গেলে তা অন্যান্য কৃষিজাত ভোগ্যপণ্যের দামকেও প্রভাবিত করে। অনুকূল আবহাওয়ায় দেশে এবার আলুর উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে ভাড়া বাড়ায় কৃষকরা এখন হিমাগারে পণ্যটি সংরক্ষণ করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। পচনশীল পণ্যগুলো বাধ্য হয়েই কম দামে ছেড়ে দিচ্ছেন তারা।

বাজারে আলুর দাম কমে আসায় দেশের কোথাও কৃষকরা উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না বলে অভিযোগ করছেন। হিমাগারে সংরক্ষণ করতে না পেরে রাস্তায় আলু ফেলে প্রতিবাদও করছেন তারা। এমনই এক কৃষক চাঁদপুর সদর উপজেলার রালদিয়া গ্রামের কৃষক মরু বেপারী।

তিনি বলেন, ‘খেত থেকে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করেছি ১৩ টাকা দরে। অথচ আবাদে গড়ে খরচ হয়েছে কেজিতে ১৪ টাকা। অবশিষ্ট আলু হিমাগারে রেখে বছরের মাঝামাঝি সময়ে দাম বাড়লে বিক্রি করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এর মধ্যে হুট করে হিমাগার মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিল। বাড়তি ভাড়ায় সংরক্ষণ করতে গেলে লাভ তো দূরের কথা, লোকসান বেড়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ভাড়া বৃদ্ধির ফলে কৃষক হিমাগারে আলু রাখতে না পারায় সামনের দিনগুলোয় আলুর বাজার আবারো মধ্যস্বত্বভোগীদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে। এতে মৌসুম শেষে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে কৃষিপণ্যটির বাজারদর আবারো অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার জোর আশঙ্কা করছেন তারা। ফলে বিপুল উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও আলু-পেঁয়াজের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য আমদানির প্রয়োজন পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।

দেশে উৎপাদিত আলুর বড় একটি অংশের জোগান আসে বগুড়া থেকে। জেলার পাইকারি কাঁচাবাজার মহাস্থানহাট ঘুরে জানা যায়, গত বছর মৌসুমের শুরুর দিকে অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আলুর দাম ছিল মণপ্রতি ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। ফেব্রুয়ারির শেষদিকে তা ৭০০ টাকায় নেমে যায়। কিন্তু এবার ২০২৫ সালের আলু উত্তোলন মৌসুমের শুরুতে ১ হাজার ১০০ টাকা মণ দরে কেনা-বেচা হলেও জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই জাতভেদে তা ৪৫০ থেকে ৬৫০ টাকায় নেমে আসে। এ পরিস্থিতি বজায় রয়েছে এখনো।

বগুড়ার অর্থকরী ফসলগুলোর মধ্যে আলু অন্যতম। কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, এ জেলায় চলতি মৌসুমে আলুর মোট উৎপাদন দাঁড়াতে পারে প্রায় ১৪ লাখ টনে। এসব আলু সংরক্ষণে এ অঞ্চলে হিমাগার রয়েছে ৪২টি। এসব হিমাগারে প্রায় চার লাখ টন আলু সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে। তাই একদিকে বাড়তি হিমাগার ভাড়া, অন্যদিকে সংরক্ষণের স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিপাকে পড়ছেন প্রান্তিক কৃষকরা। ফলে মৌসুম শেষে এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আরেক বৃহৎ উৎপাদনকারী জেলা রংপুরে গত বছরের এ সময়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকায়। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৯-১০ টাকায়। আলুর বাজারদর দ্রুত নেমে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়তি ভাড়ায় আলু সংরক্ষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। দেশের সব স্থানেই উৎপাদনের তুলনায় হিমাগারের সংখ্যা ও ধারণক্ষমতাও কম।

এসব প্রান্তিক কৃষকের সুরক্ষার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বেশি ভাড়ায় আলু সংরক্ষণ করলে কৃষকের খরচ অনেক বেড়ে যাবে। তাই উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামে কৃষক আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ পরিস্থিতি থেকে সুরক্ষা দিতে সরকার প্রান্তিক কৃষকদের জন্য হিমাগারে ৩০ শতাংশ জায়গা সংরক্ষিত রাখার ঘোষণা দিতে পারে। একই সঙ্গে হিমাগার ভাড়ার ক্ষেত্রে কেজিতে ২ টাকা করে ভর্তুকিও দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া পাঁচ-সাত লাখ কেজি আলু সরকার নিজে সংরক্ষণ করতে পারে। যাতে অফ সিজনে দাম বাড়লে বাজারে আলু ছেড়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’

আলু উৎপাদনে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা জয়পুরহাট। এ জেলায় এবার আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৫০০ টন। আর হিমাগারে সংরক্ষণক্ষমতা প্রায় দুই লাখ টন। তবে দাম না পেয়ে হতাশ এখানকার কৃষকরাও। জয়পুরহাট সদর উপজেলার কৃষক নাজির হোসেন বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে যে আলু আর কখনো চাষ করব না। আমরা অনেক কষ্ট করে মাঠে ফসল ফলানোর সময় খরচ বাড়ে। ফসল মাঠ থেকে তোলার সময়ও খরচ বাড়ে। কিন্তু বিক্রি করতে গেলেই লোকসান গুনতে হয়।’

এক সংবাদ সম্মেলনে গত ৮ ফেব্রুয়ারি আলু সংরক্ষণে ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)। সেখানে হিমাগারে সংরক্ষণে কেজিপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৮ টাকা। আর প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি আলু রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। যদিও আগে কৃষকরা ৭০ কেজির বস্তা ৩৫০ টাকায় কোল্ড স্টোরেজে রাখতেন। এতে কেজিপ্রতি ভাড়া পড়ত ৫ টাকা। কিন্তু নতুন নিয়মে কেজিপ্রতি ভাড়া ৬০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮ টাকায়। যদিও হিমাগার মালিকদের দাবি, কেজিপ্রতি ভাড়া ৭ থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়ার হিমাগার মালিক পরিমল প্রসাদ বলেন, ‘এখন বিদ্যুৎ খরচ বেশি। সে কারণে ভাড়া কেজিতে ৮ টাকা হলেও পরে সরকারিভাবে তা ৬ টাকা ৭৫ পয়সা করা হয়। এখন স্টোরেজে আলু রাখার জায়গা সংকট আছে। তার পরও সরকারি রেটেই আলু সংরক্ষণ করা হচ্ছে।’

কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ অনুযায়ী, হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধি বা নির্ধারণ করতে হবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পরামর্শক্রমে সরকারি গেজেটের মাধ্যমে। কিন্তু ভাড়া বাড়ানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলন করে। পরে অবশ্য কৃষকদের আন্দোলনের পর কৃষি বিপণনের পক্ষ থেকে কেজিতে ১ টাকা ২৫ পয়সা দাম কমিয়ে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করা হয় ৬ টাকা ৭৫ পয়সা। কিন্তু কৃষকরা সে ভাড়াও প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতি কেজি আলুর হিমাগার ভাড়া দেড় টাকা করা, ধানের মতো চাষীদের কাছ থেকে আলু কিনে সংরক্ষণ, রফতানির ব্যবস্থা করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবিও তুলছেন তারা। রংপুরে গত সপ্তাহেই এসব দাবি তুলে জেলা আলুচাষী ও ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি দেয়া হয়।

জেলার আলুচাষী সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু ও সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আলুর দাম না পেয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে চাষীরা। প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ২০ টাকার ওপরে। হিমাগার ভাড়া বেশি হওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু হিমাগারে রাখতে পারছেন না। উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আলুচাষীরা ভাড়া দেড় টাকা করার দাবি করেছিলেন।’

হিমাগার মালিকদের দাবি, ব্যাংকের সুদহারসহ ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে হিমাগারের ভাড়া বাড়িয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যয় সুদের পেছনে ও বিদ্যুৎ বিলে। সরকার যদি কৃষকদের সুরক্ষা দিতে চায়, তাহলে আমাদের ব্যাংকের সুদহার কমিয়ে দিক। সুদহার ৯ থেকে ১৭ শতাংশে উঠে গেছে। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমরা লসে আছি। আমাদের ১১ টাকার মতো খরচ পড়ে কেজিতে। সেখানে আমরা আমরা ৮ টাকা করেছিলাম। কিন্তু সরকার সেটা কমিয়ে দিয়েছে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সেটা আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এভাবে চাপিয়ে দেয়া যায় না। সরকার চাইলে কৃষকদের জন্য নিজে হিমাগার তৈরি করতে পারে। আর ভাড়া কমানোর জন্য কৃষকদের নামে মূলত ফড়িয়ারা আন্দোলন করছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার ৪ লাখ ৬৭ হাজার হেক্টরে আলু চাষাবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ৫ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে। গতবার বাজারে আলুর দাম বাড়তি থাকায় এবার কৃষকরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে আলুর চাষ করেছেন। দেশে আলুর সর্বোচ্চ বার্ষিক চাহিদা ৮০-৯০ লাখ টন। আর গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টনের কাছাকাছি।

ভাড়া বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এবার আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় কারসাজি শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুতেরও দাম বাড়েনি। তাহলে কোন যুক্তিতে ভাড়া দ্বিগুণ করা হয়েছে? তাদের (হিমাগার মালিকদের) জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার।’

আলু ছাড়াও এবার অন্যান্য কৃষিপণ্যের বাজারদরও কমছে। এবার শীত মৌসুমে কৃষকরা ফুলকপির দাম পাননি। উৎপাদন খরচ ১০ টাকা হলেও ২-৩ টাকায় ফুলকপি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। এমনকি কোথাও বিক্রি না করে গরুকে খাওয়ানোরও নজির দেখা গেছে। এবার আলুর পাশাপাশি টমেটোর দামও বেশ কম। প্রতি কেজি ৮-১৮ টাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। যদিও রাজধানীতে ২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। আর ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দামও কোনো কোনো স্থানে ৩৫ টাকায় নেমে এসেছে। যদিও কৃষকের উৎপাদন ব্যয় ৩৮-৪০ টাকার মতো।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘কৃষকের স্বার্থ দেখার জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছি। কৃষকের পণ্য সংরক্ষণের জন্য আমরা সারা দেশে ১০০ মিনি কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করছি। পেঁয়াজ সংরক্ষণে ছোট সংরক্ষণাগার করা হচ্ছে। মাত্র ৩৫-৪০ হাজার টাকায় কৃষক বাড়িতেই এটা তৈরি করতে পারবে। আমরা এর মধ্যে ২৫ হাজার টাকার মতো সহায়তা দেব। এটিকে কাজে লাগিয়ে ছয়-সাত মাস পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে।

আলুর হিমাগার ভাড়া আমরা পুনর্নির্ধারণ করেছি। এবার আলুর উৎপাদন অনেক হয়েছে। তাই আমরা আলু রফতানির জন্য রফতানিকারকদের সঙ্গে বসেছি। তাদের সমস্যা দূর করার চেষ্টা করছি। তাছাড়া শাকসবজির জন্য কৃষক পর্যায়ে হিমাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’

দেশের বাজারে আলুর দাম কম, বাড়ছে রপ্তানি

উৎপাদন খরচের তুলনায় স্থানীয় বাজারে আলুর দাম কম থাকায় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে গত অর্থবছরের তুলনায় আলু রপ্তানি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২৪ হাজার টন আলু রপ্তানি হয়েছে। এটি গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

শুধু ফেব্রুয়ারিতেই প্রায় ১২ হাজার টন আলু রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের মোট রপ্তানির সমান।

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক কৃষক প্রতি কেজি আলু গড়ে ১১ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ টাকা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আলু চাষের কারণেই রপ্তানি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি।

এ বছর নেপাল, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে প্রায় নয় হাজার টন আলু রপ্তানি হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক হাফিজুর রহমান মিন্টু বলেন, দাম কম থাকায় এ বছর আলু রপ্তানি বেড়েছে।

তিনি আরও জানান, গত অর্থবছরের মোট রপ্তানির তুলনায় চলতি অর্থবছরে রপ্তানি প্রায় ৮০ শতাংশ বেড়েছে।

এ বছর রপ্তানিকারকরা স্থানীয় বাজার থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে পারছেন, যেখানে গত বছর কিনতে হয়েছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে।

আরেক রপ্তানিকারক তাওহীদুল ইসলাম জানান, চলতি অর্থবছরে তিনি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নেপাল ও বাহরাইনে প্রায় আট হাজার ৪০০ টন আলু রপ্তানি করেছেন। এ বছর তিনি প্রতি কেজি আলু প্রায় ১০ টাকায় কিনতে পেরেছেন, যেখানে গত বছর কিনতে হয়েছিল ৩০ টাকায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক রপ্তানিকারক জানান, এ বছর কম দামের কারণে তিনি শ্রীলঙ্কায় এক হাজার ৩০০ টন আলু রপ্তানি করতে পেরেছেন।

ব্যবসায়ীরা গ্রানোলা, ডায়মন্ড-৭ ও ম্যাজেস্টিকের মতো উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন আলু রপ্তানি করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও ভালো মানের আলুর পরিমাণ কম হওয়ায় রপ্তানিকারকরা সংকটে পড়ছেন।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের গ্রানোলা, সান্তানা ও কুমারীর মতো রপ্তানিমুখী জাত চাষের পরামর্শ দিয়েছে। ভবিষ্যতে এই জাতগুলোর চাষ বাড়ানো ও হিমাগার সংকট সমাধানের ওপর জোর দেন আফজাল হোসেন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. রফিকুল আমিন বলেন, ‘রপ্তানি বাড়লে আলু চাষিরা স্বস্তি পাবেন।’

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় আলুর খুচরা দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা থাকলেও কৃষক পর্যায়ে দাম বাড়তে শুরু করেছে।

কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে মোট উৎপাদন ১ কোটি ২০ লাখ টন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. রফিকুল আমিন আরও বলেন, রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কৃষকদের যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি মনে করেন, ভালো ফলন হওয়ায় গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে রপ্তানিকারকরা কম দামে আলু কিনতে পারছেন। তাই রপ্তানি বেড়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ আলু রপ্তানি শুরু করে, যদিও সে সময় খুব সামান্য রপ্তানি হয়েছিল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে গত নয় বছরে বাংলাদেশ গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টন আলু রপ্তানি করেছে। তবে গত অর্থবছরে রপ্তানি আগের অর্থবছরের তুলনায় কমে যায়।

133 ভিউ

Posted ৬:৫১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com