কক্সবাংলা ডটকম(১৮ সেপ্টেম্বর) :: আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে আগামী ১৫ দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে অবস্থান করবেন।কারণ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে রবিবার সকালে তিনি নিউইয়র্কে গেছেন। আগামী ৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এই ১৫ দিন প্রধানমন্ত্রী দেশে থাকবেন না। আর এই ১৫ দিনই রোড মার্চসহ রাজপথে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারকে অচল করে দিতে চায় বিএনপি।
রবিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,আগামী ১৫ দিনের জন্য নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। নতুন কর্মসূচি ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এই রোডমার্চ তখনই শেষ হবে যখন সরকারের পতন হবে।
বিএনপির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, আজ থেকে টানা ১৫ দিনের কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি। এই ১৫ দিনের কর্মসূচি হবে বিভিন্ন এলাকায় রোডমার্চ এবং পর্যায়ক্রমে এই রোডমার্চ গুলো ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করবে বলেও বিএনপি নেতারা বলছেন। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশে নেই এই সুযোগটাই বিএনপি নিতে চাইছে।
এছাড়া অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর আগামী এই তিন মাসকে কঠিন চোখে দেখছে সরকার। নির্বাচনের আগের এ সময়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিরোধী দলগুলোর নানা পরিকল্পনা ভাবিয়ে তুলছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
সম্প্রতি একাধিক সংস্থার গোপনীয় প্রতিবেদনে তাদের পরিকল্পনার বিষয়টি উঠে এসেছে।
বিশেষ করে অক্টোবর মাস টার্গেট করে বিরোধী দলগুলোর নানা আয়োজনের বিপরীতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা।
তারা বলছেন, এ সংক্রান্ত একটি বিশেষ নির্দেশনা এরই মধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে সব ইউনিট, মহানগর, রেঞ্জ এবং জেলা পর্যায়ে পৌঁছানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সব বাহিনীকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অক্টোবর এবং নভেম্বরকে কেন্দ্র করে তাদের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন প্রশ্নে একটা সমঝোতায় আসতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। জানা গেছে, আগামী নভেম্বরের মধ্য বা শেষ সপ্তাহ নাগাদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ওই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসি সূত্রের দাবি। বিএনপি চাইছে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে মাঠে থাকতে। বিএনপি এরই মধ্যে ১৬ তারিখ থেকে রোডমার্চের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু করেছে। অক্টোবরের ৩ তারিখ কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের অভিমুখে রোডমার্চের মধ্য দিয়ে তারা চলমান কর্মসূচি শেষ করবে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের মধ্যে চিন্তা রয়েছে, অক্টোবরে মধ্য থেকে যে কর্মসূচি থাকবে তাতে প্রাধান্য পাবে ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি। এসব কর্মসূচি নিয়ে এরই মধ্যে বিএনপির অভ্যন্তরে আলোচনা হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে সরকার পক্ষ বাধা দিলে একপর্যায়ে অসহযোগ বা অবরোধের মতো আন্দোলনের দিকেও যেতে বাধ্য হতে পারে দলটি। তাদের নীতিনির্ধারকদের মতে, আক্রমণাত্মক পথে না গিয়ে একের পর এক কর্মসূচির মাধ্যমে তারাও দাবি আদায়ের পরিস্থিতি তৈরি করবেন।
তবে তাদের মধ্যে এ আলোচনাও রয়েছে, সরকারি দল আওয়ামী লীগ বরাবরই আগামী নির্বাচন দেশের সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। সেটি যাতে করতে না পারে এ জন্য বিএনপি চেষ্টা করবে, যত বেশি সম্ভব রাজনৈতিক দলকে নিজেদের দিকে নিয়ে আসা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখা এবং সরকারবিরোধী কর্মসূচি দিয়ে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে রাখা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমাদের কর্মসূচি এখনো নিয়মতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ রয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমেই সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। সরকার যদি আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়, তাহলে জনগণ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। সরকারের মনোভাবের ওপর নির্ভর করে আন্দোলন কতটুকু সহিংস বা অহিংস হবে।
তবে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, শুধু আগামী তিন মাস কেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সদস্যরা সবসময়ই প্রস্তুত থাকে। সে অনুযায়ীই তো ডিএমপির প্রতিটি সদস্য কাজ করে। কেউ যদি নাশকতার প্রস্তুতি নেয় কিংবা ফৌজদারি অপরাধ করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আমরা পিছপা হব না।
এদিকে বিএনপির একটি সূত্র বলছে, সরকারি যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারকে চাকরির শর্ত লঙ্ঘন করে সহায়তা করবে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি তালিকা করার কাজ শুরু হয়েছে। এসব তালিকায় প্রশাসন, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নাম থাকছে।
সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও বলছেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে থাকলে তারা চিন্তাহীন থাকেন, ভার মুক্ত থাকেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী দ্রুত এবং তাৎক্ষণিক সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। যেকোনো সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীকে পাওয়া যায় এবং তিনি এই ধরনের কঠিন এবং জটিল সিদ্ধান্ত সহজেই দিতে পারেন।
একজন সরকারি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাও বলেছেন, দীর্ঘদিনের রাজনীতির অভিজ্ঞতা এবং দেশ পরিচালনায় দূরদর্শিতার কারণে যেকোনো সংকটে প্রধানমন্ত্রী বিচলিত হন না। বরং ঠান্ডা মাথায় সংকট সমাধানের চেষ্টা করেন। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী দেশে থাকবেন না এবং সময়ের একটা বড় পার্থক্য রয়েছে। এ কারণেই এই সুযোগটি বিএনপি নিতে চাইছে।
বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যদি তারা একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে সেটি হবে তাদের আন্দোলনের সফলতা। আর এই কারণেই বিএনপি হিসেবে-নিকেশ করে প্রধানমন্ত্রী যখন দেশে নেই তখনই কর্মসূচি দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী রবিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এখন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা এই মুহূর্তে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। আর এই সুযোগটি কাজে লাগাতে চাচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও এটি ডিজিটাল যুগ, সার্বক্ষণিকভাবে তিনি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, নেতাকর্মীদের ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এবং যেকোনো অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তিনি দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন।
আগামী দুই সপ্তাহ অর্থাৎ আগামী ১৫ দিন বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য ভয়ঙ্কর সময় হিসেবে সামনে আসতে পারে বলে মনে করছেন কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
Posted ১:১৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Chy