মোঃ রেজাউল করিম, ঈদগাঁও(৭ সেপ্টেম্বর) :: মিয়ানমারে ১৫ কানি জমি, বিপুল সহায়-সম্পত্তি ও গবাদি পশু ফেলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে উখিয়া হয়ে ঈদগাঁওতে এসেছে এক নির্যাতিত যুবক। এখানে এসে সে ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে অসুস্থ মাকে দেখতে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
বার্মার উগ্র বৌদ্ধ ভিক্ষু, চরমপন্থী, জাতীয়তাবাদী এবং সরকারী বর্বর বাহিনীর অত্যাচারে দীর্ঘ ৪ দিন গভীর জঙ্গলের আঁকাবাঁকা পথ হেঁটে সে সীমান্তে পৌঁছে। যুবকটির নাম মোহাম্মদ সালাম। বয়স আনুমানিক ১৫। সে এ প্রতিবেদককে মিয়ানমারের মংডু শহরের বলি বাজার থানার সাহেব বাজারের মৃত আবদু শুক্কুরের পুত্র বলে জানান।
সে জানায়, তার মো. আরকান নামে আরো এক ভাই রয়েছে। ষোড়শী বোন ছেনু আরাকে নিরাপত্তা বাহিনী ঘর থেকে তুলে নিয়ে গভীর জঙ্গলে ধর্ষণ ও পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করেছে। এ নির্মম দৃশ্য দেখে অসহায় এ যুবক তার চাচাত ভাই ফয়সালের মাধ্যমে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। যুবকটি জানায়, তার গ্রামটি ৪/৫ হাজার মুসলিম অধ্যুষিত জনবহুল এলাকা।
এ গ্রামের অনেককে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতি ঘর থেকে উঠতি মেয়েদের নিয়ে পাহাড়ে ধর্ষন ও হত্যা করা হয়েছে। মগের মুল্লুকে মগ দস্যুরা সেনাবাহিনীর সাথে এসে গ্রামের পর গ্রামে অগ্নি সংযোগ চালিয়েছে। তারা তাদেরকে কলা (বাঙ্গিলী) আখ্যা দিয়ে নিজস্ব বসতভিটা থেকে দমন পীড়নের মাধ্যমে বিতাড়িত করছে। সেখানে তার ছিল তক্তার বেড়া, টিনের ছাউনির সুখের সংসার। সাহেব বাজারে ছিল তার কাপড় বিক্রির দোকান।
উক্ত সুখের সংসারে আগুন দিয়েছে বৌদ্ধ বাহিনী। পালিয়ে আসার সময় তার মা আমেনা বেগম তার সাথে চলে আসে। তাদের সাথে নৌকা যোগে হাজারো রোহিঙ্গা বালুখালি তুমব্রু সীমান্ত হয়ে কুতুপালং শরনার্থীসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। ইতোমধ্যে তার বৃদ্ধা মা অসুস্থ হলে তাকে সাথে থাকা লোকজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন।
যুবকটি মিয়ানমার সরকারী বাহিনীর নির্মম বর্বরতার কথা জানিয়ে বলেন, তারা গুলি করে, জবেহ করে, মুখে প্লাস্টার বেঁধে, পোড়ানো টায়ার মেয়েদের গলায় ঝুঁলিয়ে, হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের মাধ্যমে নিরীহ জনগণকে হত্যা করছে। এখানে আসার পর সে শুমারী অন্তর্ভূক্ত স্লিপও লাভ করে। যার গণনা এলাকা নং ২০৬।
বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদকের সাথে ঈদগাঁও বাজারে ভিক্ষাবৃত্তির সময় তার দেখা হয়। তার সাথে আলাপকালে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতির অনেক কিছু জানা যায়।
এসময় অন্যদের মধ্যে জেলা মানবাধিকার ট্রাস্ট সহ-সভাপতি নুরুল হুদা, সহ-সভাপতি দুবাই ফরিদ, মানবাধিকার নেতা মিছবাহ উদ্দীন অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, এক মাদ্রাসা পড়–য়া শিক্ষার্থীর মাধ্যমে সে উখিয়া থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে ঈদগাঁও বাজারে নামে।
এদিকে ঈদগাঁওর অন্যান্য স্থানেও এভাবে অনেক রোহিঙ্গা এসে মূল স্রোতের সাথে মিশে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে আত্মীয় স্বজনরা তাদের এখানে পুনর্বাসনে সহযোগিতা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
Posted ২:০৯ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Chy