কক্সবাংলা ডটকম(১২ নভেম্বর) :: সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে উল্লেখযোগ্য সব রাজনৈতিক দল ও জোট। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তা ছিল সরকারবিরোধী প্রধান জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে।
ঘোষিত তফসিল বাতিল করে ভোট এক মাস পেছানোর দাবি জানিয়ে রবিবার ভোটে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আটটি বাম দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোটও ভোটে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
ফলে নিবন্ধিত, অনিবন্ধিত, ডান, বাম ও ইসলামী সংগঠন কেউ আর ভোটের বাইরে থাকছে না। এর মধ্য দিয়ে দেশে সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আপাতত একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আবহ তৈরি হলো।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় স্বাগত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারাকে শক্তিশালী করবে।
’ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সব রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটাতে আমরা একসঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো।’
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা সম্বলিত ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান ফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘ভীষণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সাত দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, তারা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আচরণের প্রতি কড়া নজর রাখবেন।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না হলে প্রয়োজনে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিতে পারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। উল্লেখ্য, বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত।
২৩ ডিসেম্বর ভোটের দিন রেখে নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে তফসিল ঘোষণা করেছে, সেখানে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা এবং ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় রাখা হয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এই তফসিল বাতিল করে ভোট এক মাস পেছানোর দাবি তুলেছে। আর অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ভোটের তারিখ এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করতে গতকাল নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে।
অন্যদিকে, আগামী ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের পরে ভোট গ্রহণের জন্য খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ইসিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ভোট পেছানোর দাবির এই পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাজনৈতিক জোটগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে ইসি ভোটের তারিখ পিছিয়ে দিলে তাতে তারা আপত্তি করবে না। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোট পেছানো না পেছানোর বিষয়ে ইসি আজ সোমবার সিদ্ধান্ত জানাবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নুরুল হুদা গত বৃহস্পতিবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পরদিন শুক্রবার থেকেই দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আজ সোমবার মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ হবে। আগামী বুধবার থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রার্থীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ শুরু করবে দলটি। অবশ্য নির্বাচনের তারিখ পেছানো হলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিক্রি ও মনোনয়ন প্রার্থীদের সাক্ষাতকার গ্রহণের সময়সূচি হেরফের হতে পারে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক নিবন্ধিত দলগুলো দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করেছে। ১৪ দল শরিক জাতীয় পার্টি-জেপি শনিবার থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করেছে।
উক্ত আবেদন ফরম যথাযথভাবে পূরণ করে আগামী ১৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবারের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিতে বলেছে জেপি। জেপি’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে জেপি’র পার্লামেন্টারি বোর্ডও ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে। ১৪ দল শরিক জাসদও শনিবার থেকে দলীয় মনোনয়নফরম বিতরণ শুরু করেছে।
নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর আজ থেকেই দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করছে বিএনপি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল জানান, ১২ ও ১৩ নভেম্বর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করতে পারবেন।
দলীয় অফিসে বিভিন্ন বুথ থাকবে, সেখান থেকে ফরম কেনা ও জমা দিতে পারবেন। মনোনয়ন ফরম পূরণ করে আগামী ১৩ ও ১৪ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে এই কার্যালয়ে জমা দিতে পারবেন। অর্থাত্ দুইদিন মনোনয়নফরম তোলা ও দুইদিন জমা দিতে পারবেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ, দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও দলীয় মনোনয়ন প্রার্থীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ প্রক্রিয়ার মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ নেই রাজনৈতিক দলগুলো। কোন দল কোন কোন দলকে নিয়ে জোটগত নির্বাচন করবে সেই সিদ্ধান্তও চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। এছাড়া কোন দল জোটের কোন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী তাও গতকাল ইসিকে জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান জোট ও সম্ভাব্য মহাজোট এবং বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের মধ্যে আসন ভাগাভাগির বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইসিকে জানানো হয়েছে, ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচন করবে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, এরশাদের জাতীয় পার্টিও (জাপা) আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করবে, এছাড়া বি. চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টও মহাজোটে সম্পৃক্ত হতে পারে।
এ ব্যাপারে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান রবিবার বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমরা মহাজোটে যাওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি, তবে সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে ইসিকে জানানো হয়েছে তারা বিএনপিসহ ২০ দলের ৮টি নিবন্ধিত দল জোটগতভাবে নির্বাচন করবে। এক্ষেত্রে অন্য সাতটি শরিক বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ‘ধানের শীষ’ ব্যবহার করতে পারবে।
এদিকে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রধান শরিক সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম রবিবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভোট না হওয়ার চেয়ে একটি খারাপ নির্বাচনও ভালো। ৫ জানুয়ারির মতো সরকারকে এবার ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেওয়া হবে না। জানা গেছে, আজকালের মধ্যেই বাম জোট নির্বাচনে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারে।
Posted ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১২ নভেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Chy