শনিবার ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

একান্ত আলাপে সালাহউদ্দিন আহমেদ : ১৮টা ঈদ গেছে নির্বাসনে, সন্তানদের একসঙ্গে পাইনি কখনো

রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫
89 ভিউ
একান্ত আলাপে সালাহউদ্দিন আহমেদ : ১৮টা ঈদ গেছে নির্বাসনে, সন্তানদের একসঙ্গে পাইনি কখনো

বিশেষ প্রতিবেদক :: নিখোঁজ হওয়ার পর এক সময় নিজেকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের মাটিতে খুঁজে পান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কক্সবাজার-১(পেকুয়া-চকরিয়া) আসনের সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদ। সাবেক এই যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর জন্য ঈদ কোনো উৎসব ছিল না। ছিল না নতুন পোশাক, নাড়ির টান কিংবা প্রিয়জনের হাসিমুখ। বরং ঈদ হয়ে উঠেছিল এক দীর্ঘ অপেক্ষা, একাকিত্ব আর বেদনার প্রতিচ্ছবি।

একান্ত আলাপে সালাহউদ্দিন আহমেদ ফিরে দেখেছেন তার শৈশবের ঈদ, প্রতিমন্ত্রী থাকার সময়ের ঈদ এবং সেই হৃদয় বিদারক নির্বাসনের ঈদগুলো—যেখানে প্রিয় মুখগুলো ছিল কেবল স্মৃতির পাতায়।

প্রশ্ন : শুরু করি একেবারে ছোটবেলার গল্প দিয়ে। আপনার শৈশবের ঈদ কেমন ছিল?

সালাহউদ্দিন আহমেদ: বাল্যকালের স্মৃতি তো এখন তেমন মনে নাই। বাল্যকালের ঈদের আনন্দ সবার যেমন উৎসবমুখর হয়, আমারও তেমন ছিল।

প্রশ্ন : আপনি যখন নিখোঁজ ছিলেন, ভারতে ছিলেন—সেই সময় ঈদ এসেছে, ঈদ গেছে। সেই ঈদগুলো কেমন ছিল? সবচেয়ে কষ্টের কিংবা সবচেয়ে অবিস্মরণীয় কোনো ঈদের কথা কি মনে পড়ে?

সালাহউদ্দিন আহমেদ: ভারতে নির্বাসিত জীবনে ৯ বছরের বেশি সময় ছিলাম। কমবেশি ১৮টা ঈদ ওখানে আমাকে উদযাপন করতে হয়েছে—পরিবার-পরিজনবিহীন, আত্মীয়-স্বজনবিহীন, বন্ধু-বান্ধববিহীন। সেই উদযাপনটা আসলে ঈদ উদযাপন বলা যায় না। আমি ওখানে ঈদের সময় কাটাতে বাধ্য হয়েছি। দু-একটা ঈদের সময় আমার পরিবার আমাকে দেখতে গিয়েছিল। আমার সন্তানরা সবাই একত্রে যেতে পারেনি। আমার চার সন্তানের মধ্যে কোনো সময় দুজন গেছে, কোনো সময় একজন গেছে।

সেরকম হয়তো দুই-একবার আমার স্ত্রীসহ গেছে। নির্বাসিত জীবনের যে বেদনা, সেটা সঙ্গে নিয়েই ঈদের সময় কেটেছে। ওইখানে অনেকদিন থাকার কারণে আমার পরিচিত কিছু লোকজন হয়ে গিয়েছিল, ছোট একটা সার্কেল। তাদের সঙ্গে ঈদের সময় শুভেচ্ছা বিনিময়, ঈদের আনন্দ-বেদনাগুলো ভাগাভাগি করেছি।

প্রায় ১৮টা ঈদ গেছে নির্বাসনে, সন্তানদের একসঙ্গে পাইনি কখনো

প্রশ্ন : দীর্ঘ নির্বাসনের পর বাংলাদেশে ফিরে প্রথম ঈদ কেমন কাটিয়েছেন? গ্রামের বাড়িতে পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

সালাহউদ্দিন আহমেদ: বাংলাদেশে আসতে পারার পরে একটা ঈদ আমার গ্রামের বাড়িতে—গ্রামের মানুষ, আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন সবাইকে নিয়ে উদযাপন করতে পেরেছি। সামনে হয়তো ঈদগুলো আগে যেভাবে করতাম—আমার রাজনৈতিক জীবনে যখন আমি এমপি ছিলাম, মন্ত্রী ছিলাম বা তারও আগে যে সময়টা বাংলাদেশে কাটাতে পেরেছি—সবাইকে নিয়ে সেরকম উদযাপন সামনে হবে, ইনশাআল্লাহ এটা আশা করি।

প্রশ্ন : যখন আপনি রাজনীতিতে সক্রিয় হলেন, বিশেষ করে প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর—তখনকার ঈদ আর সাধারণ জীবনের ঈদের মধ্যে কী পার্থক্য আপনি টের পেয়েছেন?

সালাহউদ্দিন আহমেদ: সাধারণ আর অসাধারণ নয়। আমাদের রাজনীতির মধ্যে ব্যস্ত সময় অনেক বেশি যায়। কখনো সরকারে ছিলাম, কখনো বিরোধী দলে। কিন্তু ছিলাম তো জনগণকে নিয়েই, পরিবার-পরিজনকে নিয়েই। রাজনীতিতে উত্থান আছে, পতন আছে, ক্ষমতায় থাকা আছে, বাইরে থাকা আছে। সে সময় বিভাজনটা এভাবে করা যায়—কোন সময় বেশি ব্যস্ত, কোন সময় কম ব্যস্ত। কিন্তু ব্যস্ততা সব সময় থাকে রাজনৈতিক জীবনে এবং জনগণকে নিয়েই আমাদের জীবন। তাদের সঙ্গে থাকা, ঈদ উদযাপন করা—সব সময়ের মতো। যখন আমি রেগুলার জীবনে ছিলাম, সেগুলোর মধ্যে বিরোধী দলে থাকলেও যেমন আমরা জনগণের সঙ্গে ছিলাম, সরকারে থাকলেও জনগণের সঙ্গে ছিলাম।

সেটা কখনো ভাবিনি, কোনটা কেমন বা কিভাবে কাটিয়েছি। কোনো ব্যবধান আছে কিনা—সেভাবে ভাবিনি। এজ ইউজুয়াল কাটিয়েছি। আমরা জনগণের সঙ্গে থাকি। সুতরাং ক্ষমতায় থাকলাম, কি না থাকলাম—এটা বেশি ডিসটেন্স থাকে না। সুতরাং, মানুষের মধ্যে থাকা, মানুষের সুখে-দুঃখে থাকা।

প্রায় ১৮টা ঈদ গেছে নির্বাসনে, সন্তানদের একসঙ্গে পাইনি কখনো

প্রশ্ন : এই ঈদে আপনার বার্তা কী—বিশেষ করে যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, গুমের শিকার হয়েছেন কিংবা এখনও অপেক্ষায় আছেন?

সালাহউদ্দিন আহমেদ: গুমের শিকার হয়েছে যারা—তাদের পরিবার খুব বেদনা-বিধুর অবস্থায় ঈদ উদযাপন করবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ ওই সময় খুব কাছের মানুষদের মানুষ স্মরণ করে। ঈদের সময় তাদের আত্মীয়-স্বজন যারা তাদের ছেড়ে চলে গেছেন—তাদের স্মৃতিগুলো অনুভূত হয় তাদের কাছে। ঠিক একই রকম, যারা গুম হয়ে এখনো ফিরে আসার সৌভাগ্য হয়নি—সে সমস্ত পরিবারের বেদনা তো সীমাহীন। সেটা কিছুটা হলেও আমি, আমার পরিবার বুঝতে পারে। আমি অনেক সৌভাগ্যবান যে আবার দেশে ফিরে আসতে পেরেছি। অনেক সহকর্মী আমার মতো সৌভাগ্যবান হতে পারেনি—জীবিত অবস্থায় দেশে ফেরত আসতে। মন খারাপ লাগে—যাদের কবরের ঠিকানাও খুঁজে পায়নি।

যারা এখনো পরিবারের কাছে ফেরত আসেনি, সেই সমস্ত গুমের শিকার পরিবারগুলো তাদের স্বজনদের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করে। তাদের মা-বাবা, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, ভাই-বোন আশা করে যে তাদের গুমের শিকার সেই আত্মীয় একদিন ফিরে আসবেন। এ সমস্ত বেদনা নিয়েই তাদের ঈদ কাটে। এটাকে উদযাপন বলা যাবে না। অনেকের কাছে ঈদ উদযাপন আনন্দ-উৎসব। আর তাদের কাছে একটা বেদনা-বিধুর সময়।

প্রশ্ন : এবারের ঈদে দেশের মানুষের উদ্দেশে কী বার্তা দেবেন?

সালাহউদ্দিন আহমেদ: সবাই ফ্যাসিস্টমুক্ত এই বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক আবহাওয়ায়, উন্মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছে—এটা আগের তুলনায় আকাশ-পাতাল পার্থক্য। মানুষ এখন উন্মুক্ত পরিবেশে শ্বাস নিতে পারে। মানুষ কথা বলতে পারে, মত প্রকাশ করতে পারে। স্বাধীনতা আছে—মেলামেশার স্বাধীনতা আছে, অ্যাসোসিয়েশন করার স্বাধীনতা আছে। এইসব স্বাধীনতা নিয়ে মানুষ মুক্ত পরিবেশে বসবাস করে। এই আনন্দ নিয়ে মানুষ গত ঈদ কাটিয়েছে, এবারও কাটাবে।

২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদকে তুলে নেওয়া হয় বলে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ তখন অভিযোগ করেন। অন্যদিকে, তখন বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সালাহউদ্দিনকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। সে সময় সালাহউদ্দিন বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

একই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ সালাহউদ্দিনকে উদ্ধার করে। ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, সালাহউদ্দিন শিলংয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করার সময় স্থানীয়দের ফোন পেয়ে তাকে আটক করা হয়।

সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। ২০১৫ সালের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।

২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন আহমেদ। আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই বছরের ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য আসাম রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তার বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ভারতে থাকার কারণে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি। ভ্রমণ অনুমোদন দেওয়া হলে তিনি নিজের দেশে ফিরতে চান। দেশবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে চান।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর পর ৬ আগস্ট সালাহউদ্দিন আহমেদ দেশে ফেরার জন্য ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।

89 ভিউ

Posted ১২:১৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com