কক্সবাংলা ডটকম(২৫ ডিসেম্বর) :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখনও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে থাকা না-থাকা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। পাঁচদলীয় এই জোটের একটি পক্ষ নির্বাচন থেকে সরে যেতে চাইছে। তবে আরেক পক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই আগামীদিনের রাজনীতি নির্ধারণ করতে আগ্রহী।
বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠক হলেও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ ব্যাপারে আগামী বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) ফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা বিস্তারিত আলোচনা করে এর সুরাহা করবেন। এদিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ হওয়ারও কথা আছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার বৈঠকে অংশ নেওয়া ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, আগামী পরশুদিন বৃহস্পতিবার শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
এদিনের গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী, জেএসডির আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না উপস্থিত ছিলেন না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একাধিক শীর্ষনেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী, সমর্থক ও নেতাকর্মীদের ওপর প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের হামলা দিন দিন বাড়ছে।
নেতারা বলছেন, সশস্ত্রবাহিনী নির্বাচনি মাঠে নামার পর পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার প্রত্যাশা করলেও গতকাল সোমবার প্রার্থীদের ওপর সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে।
ঐক্যফ্রন্টের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের প্রচারণার সুযোগ দিন দিন কমতে থাকায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে পরবর্তী কৌশল কী হবে তা নিয়ে মঙ্গলবার সারাদিন ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হওয়া বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে, এমন আভাস দিয়েছিলেন ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির একাধিক সদস্য।
জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আগামী বৃহস্পতিবার সবাই মিলে বসে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবো। তবে এখন পর্যন্ত আমরা নির্বাচনে আছি।
সিইসি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) দলীয় ক্যাডারদের মতো আচরণ করছেন। আমরা আমাদের বিষয়গুলো নিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেও তিনি কোনও সমাধান দিতে পারেননি। এসব পরিস্থিতিই আমরা বৃহস্পতিবার বসে আলোচনা করে আমাদের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো।’
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন বয়কট করতে একটি পক্ষ ইতোমধ্যে কথাবার্তা বলছে। তাদের যুক্তি, যেভাব প্রার্থীদের ওপর, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চলছে, তাতে পরিষ্কার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতারা নির্বাচন কমিশন গিয়ে প্রচারণায় বাধার বিষয়টি নিয়ে জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করলেও ইসির তেমন কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ আছে। পরে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ফ্রন্টের নেতারা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠক থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে যারা প্রতিনিধিত্ব করেন, রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ, র্যা ব এবং ল অ্যান্ড অর্ডার ফোর্সের যারা আছেন, তাদের যে ভূমিকা— বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপরে আক্রমণ, তাদের আহত করা, তাদের গ্রেফতার করা, পোস্টার ছেঁড়া, গাড়ি ভেঙে দেওয়া—এই পরিস্থিতি প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তাকে যখন আমরা জানিয়েছি, তখন আমরা সেই ধরনের আচরণ পাইনি যে, তিনি এটাতে কোনও গুরুত্ব দিচ্ছেন।’
বিএনপির সিনিয়র পর্যায়ের এক নেতার ভাষ্য, ‘নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে ক্ষমতাসীনরা আরও চেপে বসতে পারে। সেক্ষেত্রে দলের নেতাকর্মীদের বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবীদের ওপর নির্যাতন আরও বেশি মাত্রায় পড়বে। এছাড়া ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে দলের নেতাকর্মী ও দলের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ফলে এই নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কোনও চিন্তা নেই।’
বিএনপির মধ্যম সারির একজন নেতা বলছেন, ‘নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে নিবন্ধন নিয়ে কোনও ঝুঁকি থাকছে না। কাগজে-কলমে ধানের শীষের প্রার্থীদের আর প্রত্যাহারের কোনও সুযোগ নেই। ফলে আইনত নির্বাচনে থাকবে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা।’
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে আছি। শেষ পর্যন্ত থাকবো। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনও চিন্তা আমাদের নেই।’
আর সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে থাকবো শেষ পর্যন্ত। বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরবো।’
Posted ৮:২০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Chy