মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়াু(২২ আগস্ট) :: বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে আনা হয় গাছের শেকড় (মূল)। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সাধারণ যন্ত্রপাতি দিয়ে এসব শেকড়কে রূপ দেয়া হয় নানা শৈল্পিক আসবাবপত্রে। একাগ্র শৈল্পিক মন দিয়ে সুনিপুণ হাতে তৈরি করেন চোখ ধাঁধানো সব বাহারি শিল্পকর্ম। বিভিন্ন কারুকাজ দিয়ে তৈরি করা হয় চেয়ার, টেবিল ও খাট।
পাঁচ বছর আগে শখের বসে এ কাজটি শুরু করেন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের সুরাজপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আজিজুর রহমান। বেকারত্ব দূরীকরণে তিনি নিজেকে এ কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন। তাঁর কোনো কর্মচারী নেই।
আজিজুর রহমান বলেন, ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলাম। নানা কারণে আর নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্ধতা করিনি। এরপর বেকার সময় কিভাবে পার করবো চিন্তা করতেই গাছের শেকড় থেকে আসবাবপত্র বানানোর বিষয়টি মাথায় আসে। এমন আসবাবপত্র তৈরি করবো যেন প্রচলিত ধারণা পাল্টে দেওয়ার মতো। এরপর থেকে শুরু হয় গাছের পরিত্যক্ত শেকড় সংগ্রহের কাজ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আজিজুর রহমান গাছের পরিত্যক্ত শেকড়কে শৈল্পিক রূপ দিয়ে বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করেন। সেগুলো তিনি বিক্রি করে নিজের এবং পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। অনেক দূরদূরান্ত থেকে মানুষ তার এসব শিল্পকর্ম দেখতে ছুটে আসেন। অনেকেই কিনেও নেন। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে তার তৈরি এসব শৈল্পিক আসবাব। এতে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।
আজিজুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত চেয়ার, ডাইনিং টেবিল, টি টেবিল ও খাট-এই চার ধরণের আসবাবপত্র আমি শেকড় থেকে তৈরি করেছি। প্রতিটি আসবাবের মূল্য ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো মেলা বা প্রদর্শনীতে নিতে পারিনি। বাড়িতে এসে বিভিন্নজন এসব আসবাব কিনে নেন। সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে আমি একটি কারখানা করতে চাই।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশের বেড়া ও টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি বসতঘরের আঙিনায় বসে আজিজুর আসবাবপত্র তৈরির কাজ করছেন। যন্ত্রপাতি হিসেবে ব্যবহার করছেন বাটালি, হাতুড়ি, করাত, রেতি, রাঁধা, বর্মাসহ ছোট ছোট কিছু যন্ত্র। উঠানের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে বানানো আববাবপত্র। সেখানে ঠাঁই পেয়েছে ছয়টি ডাইনিং ও চারটি টি টেবিল, দুটি চেয়ার ও একটি খাট। উঠানের এক কোণে কিছু গাছের শেকড় রাখা হয়েছে। লোকজন এসে তাঁর শিল্পকর্ম দেখছেন।
আজিজুর রহমান বলেন, গাছের শেকড়গুলো প্রায়সময় মানুষ রান্নার জন্য লাকড়ির কাজে ব্যবহার করে। নয় তো পরিত্যক্ত রয়ে যায়। ফলে এগুলোর পচে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। তাই আমি শেকড়গুলো সংগ্রহ করি। সেগুলো আকার-আকৃতি বুঝে কেটে-ছেঁটে চেহারা বদলে দেই। পরিণত করি শৈল্পিক আসবাবে।
একটি আসবাব বানাতে এসব শেকড়ের অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেওয়া হয়। পরে বার্নিশ ও ফিনিশিং করে ব্যবহার উপযোগী ও দৃষ্টিনন্দন করা হয়। সৌখিন মানুষেরা সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য এ শৈল্পিক আসবাব কিনছেন।
সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, ‘নিজের বেকার সময়কে কাজে লাগিয়ে শৈল্পিক আসবাব তৈরির মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন সাবেক ইউপি সদস্য আজিজুর রহমান। যা আমাদের বেকার সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা। বেকারত্ব দূরীকরণে যে কেউ চাইলে নিজের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। যার উদাহরণ আজিজুর। তার এ অভিনব উদ্ভাবনী শক্তিকে সারা দেশের জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে আমরা তৎপরতা চালাচ্ছি।’
কক্সবাজার বিসিকের শিল্প সহায়ক কেন্দ্রের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রিদুয়ানুর রশিদ বলেন, পরিত্যক্ত বা পচে যাওয়া গাছের শেকড় থেকে শৈল্পিক কিছু তৈরি করা নি:সন্দেহে ভালো কাজ। আজিজুরের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে তাকে কিভাবে উৎসাহিত করা যায়, সেটি দেখব।
এদিকে কয়েকদিন আগে আজিজুর রহমানের শৈল্পিক আসবাবপত্র দেখতে ছুটে যান চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ। তিনি আজিজুর রহমানের হাতে তৈরী করা শৈল্পিক আসবাব দেখে খুব অনুপ্রাণিত হন। এ ধরনের একটি শিল্পকর্ম যে চকরিয়ার একটি গ্রামীন জনপদে হচ্ছে তা দেখে হতবাক হয়ে যান।
তিনি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজিজুর রহমানকে সব ধরনের সহায়তা দেবেন বলেও আশ^স্ত করেন।
Posted ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৩ আগস্ট ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy