মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(১৯ অক্টোবর) :: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী শরনার্থী ক্যাম্পে নিয়ে আসা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নাফনদীর সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে তাদেরকে সরিয়ে নিয়ে ভাড়া করা গাড়িতে করে আশ্রয় শিবিরে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে গত ১০দিন আগে মিয়ানমারের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার নারী পুরুষ ও শিশু দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ফাতেয়ার ঢালার মুখে অবস্থান নিয়েছে।
বৃহপতিবার সকাল থেকে আইওএম, ইউএনএইচসিআর, রেডক্রিসেন্ট সংশ্লিষ্টরা পানি, শুকনা খাবার দিয়ে তাদেরকে ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া এমএসএফ কর্মীরা অসুস্থ রোগিদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে।
আইওএম সেচ্ছাসেবক কর্মী জানিয়েছেন গত ৪ দিনে নাফনদীর তীরে অবস্থান করা এ পর্যন্ত ৫শ ৫৯ পরিবারের ৬ হাজার ৮শ ৫২ সদস্যকে তালিকাভুক্ত করে উখিয়া ও বালুখালী অস্থায়ী ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়েছে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমারের ওই ঢালার মুখে আরো ১০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নারী পুরুষও শিশু বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা যুবক বুচিদং মুন্নাপাড়া গ্রামের আলী আহমদের ছেলে ইউসুফ (১৮) বলেন, পরিবারের ৭ সদস্য নিয়ে গত ৮দিন আগে দুর্গম পাহাড়ি, টিলা ও মেটো পথ পাড়ি দিয়ে আনজিমানস্থ নাফনদীর এপারে আসি। আসার সময় সামান্য কিছু খাবার ছিল তাও ৪ দিনের মাথায় শেষ হয়ে যায়।
বুচিদং মগনামা গ্রামের শামিমের স্ত্রী সাজিদা বেগম (২৫) বলেন, তার গ্রাম থেকে বের হয়েছে ৮দি আগে। সেখানে মা বাবাকে রেখে এসেছে। এখন তাদের কি অবস্থা জানিনা। হাতে টাকা পয়সা নেই। ২ ও ৩ বছরের শিশুর মুখে এখনো খাবার দিতে পারিনি। একই গ্রামের মৃত কবির আহমদের স্ত্রী মুছুদা খাতুন (৫০) বলেন, তারা পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে এপারে পাড়ি দেয়। পথিমধ্যে পরিবারের ৩ সদস্য হারিয়ে যায়। তারা এখন কোথায় কেমন আছে জানিনা। গত চারদিন ধরে মুখে খাবার জুটেনি।
এ ভাবে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পথে অনেকেই হারিয়েছে মা বাবাকে, আবার কেউ হারিয়েছে নিজের সন্তানকে। নিজ বাস্তভিটা ও মাতৃভুমি ত্যাগ করে পালিয়ে আসার সময় পথিমধ্যে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের কষ্ট, দুভোর্গ, ক্ষুধা, আতংক তাদের চোখে মুখে। গত কয়দিনে উখিয়ার সীমান্তের নাফনদী পেরিয়ে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। অপেক্ষায় রয়েছে আরো ১০ হাজারের অধিক।
এ ভাবে উখিয়ার পালংখালীর আনজিমান, ধামনখালী, ওলুবনিয়া, তমব্রুসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা। তাদের বর্মী ভাষায় বাঙগালী লিখা কার্ড নিতে জোর করে চাপ দেয়া হচ্ছে। কার্ড না নিলে মেরে ফেলার হুমকি সহ হিংসাত্মক আচরণ করছে। বুচিদংয়ের ১৪টি গ্রামে মিয়ানমারের উগ্রপন্থি মগ সেনারা আতংক ছড়িয়ে দিচ্ছে। যে কারণে রোহিঙ্গারা দলে দলে এপারে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছে।
৩৪ বিজিবি’র উপঅধিনায়ক আশিকুর রহিম দুপুরে উখিয়ার পালংখালী আনজিমান সীমান্তে সাংবাদিকদের বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে মানবিক সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। বিজিবির একটি বিশেষ টিম কাজ করছে। রোহিঙ্গারা যাতে বিষ্ফোরক জাতীয় কোন দ্রব্য বহন করে নিয়ে যেতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আসা এসব রোহিঙ্গাদের পরিবার গুলোকে ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়ার আগে পানি শুকনো খাবার ও অন্যান্য সহায়তা করা হচ্ছে। এনজিও সংস্থা গুলো যে মানবিক সাহায়তা দিচ্ছে বিজিবির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
Posted ১১:৪৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Chy