কক্সবাংলা রিপোর্ট(৯ অক্টোবর) :: কক্সবাজারের উখিয়া ও কুতুপালং এলাকায় সংঘাতের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলেছে, ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কারণে ওই এলাকায় ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
পর্যাপ্ত খাদ্যনিরাপত্তা, আশ্রয়স্থল, স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি, এলাকা ব্যবস্থাপনা, বিশুদ্ধ পানি, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়ায় সেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গারা অথবা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ার পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যা সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
‘হিউম্যানিটারিয়ান রেসপন্স প্ল্যান; সেপ্টেম্বর ২০১৭-ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রোহিঙ্গা রিফিউজি ক্রাইসিস’ শীর্ষক জাতিসংঘের প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় চলতি অক্টোবরে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা জনগোষ্ঠীকে ঘিরে কক্সবাজারের উখিয়া ও কুতুপালং ক্যাম্পে সৃষ্ট মানবিক সংকট ও এর প্রভাব এবং জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা ব্যবস্থার বিস্তারিত তুলে ধরেছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে জাতিসংঘ বলছে, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্রমাগত বাড়ছে। যে পরিমাণে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে, তার ফলে সেখানে মানবিক জরুরি অবস্থা দেখা দিতে পারে। এ অবস্থা মোকাবেলায় এখনই ব্যাপক উদ্যোগ না নেয়া হলে জীবননাশের ঘটনা ঘটতে পারে। যেসব রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে এসেছে, তারা খুবই কম সম্বল নিয়ে এসেছে।
শরণার্থীরা তাদের সঞ্চয়ের সিংহভাগ বাংলাদেশে আসতে এবং এখানে বাঁশ ও পলিথিন কিনে আশ্রয় তৈরিতে ব্যবহার করেছে। তাদের এখন খাদ্যসহ জীবন বাঁচানোর জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
জাতিসংঘ বলেছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এমন অনেক জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে, যেখানে পানি ও পয়োনিষ্কাশন সেবা নেই। পুরনো ক্যাম্পের পাশে নতুনদের যে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেখানে বিশুদ্ধ পানি, পয়োনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। রোহিঙ্গাদের অনেকে ধানক্ষেতের পানিকে খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করছে।
সীমিত সুবিধার মধ্যে অন্যান্য স্থান থেকে অতিরিক্ত রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসায় বিশুদ্ধ পানি, শৌচাগার ও অন্যান্য অবকাঠামো যা ছিল, তার ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি হয়েছে। গড়ে ১০০ জন মানুষ একটি শৌচাগার ব্যবহার করছে। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের প্রায় ৭৬ শতাংশ বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না।
ফলে কলেরাসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকার দুই হাজার একর বনভূমিতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল তৈরির ঘোষণা দেয়ার পর থেকে উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের প্রবাহ বেড়ে যায়। নতুন ক্যাম্পের কাছাকাছি স্থানে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি শুরু করে। ক্যাম্প তৈরি এবং প্রয়োজনীয় সেবাগুলো নিশ্চিত করার আগেই সেখানে মানুষগুলোকে নিয়ে যাওয়া হয়, যা এ এলাকা ঘিরে ঝুঁকি আরো বৃদ্ধি করেছে।
ঝুঁকি নিরসনের উপায় হিসেবে জাতিসংঘ বলেছে, কোনো ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা ছাড়া এক জায়গায় বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি বিস্ফোরণ ও সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকাকে কেন্দ্র করে এখনই অনেক বড় আকারের সহায়তা কার্যক্রম চালাতে হবে। নয়তো সেখানে সংঘাত নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না এবং প্রাণহানির আশঙ্কাও থেকে যাবে।
জরুরি ভিত্তিতে স্থানীয় জনগণ এবং রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্যনিরাপত্তা, আশ্রয়স্থল, স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি, বিশুদ্ধ পানি, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যবিধির ব্যবস্থা করতে হবে। মানবিক সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো এখনো সবার কাছে পৌঁছাতে পারেনি। যেকোনো পরিস্থিতিতে কক্সবাজারে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গাদের কাছে যাতে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছানো যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে এবং রোহিঙ্গাদের নিজেদের মধ্যেও সংঘাত এড়ানো ও জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।
নিরাপত্তাহীনতা ও মহামারী থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে জমি, বিভিন্ন অবকাঠামো ও সেবার পর্যাপ্ত সরবরাহ জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সংস্থাটির মতে, নতুন করে রোহিঙ্গাদের আসার আগেই উখিয়া-কুতুপালং এলাকা জনবহুল ছিল। তখন থেকেই বিষয়টি উদ্বেগের কারণ ছিল, যা এখন সংকটপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে। সীমিত অবকাঠামোর কারণে এরই মধ্যে ত্রাণ বিতরণ বা সেবা দেয়ার স্থানগুলো জনাকীর্ণ হয়ে উঠেছে। শক্ত হাতে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।
সেসঙ্গে স্থানীয়দের সঙ্গে পর্যাপ্ত ও ধারাবাহিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। পুরো এলাকার সার্বিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া ব্যাপক ত্রাণ কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয় বলে মনে করছে জাতিসংঘ।
Posted ৪:১৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৯ অক্টোবর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Chy