এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া(২৪ জুন) :: চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বর্তমান ইজারাদারদের বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত প্রবেশ মূল্যের দ্বিগুণের বেশি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দুই মেয়াদে পার্কের গেইট ইজারা নিয়ে বর্তমান ইজারাদারপক্ষ ইচ্ছেমত প্রবেশ মুল্য হাতিয়ে নিচ্ছেন পর্যটক-দর্শনার্থীদের কাছ থেকে।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারিভাবে জনপ্রতি শিশুদের প্রবেশমুল্য ২০ টাকা থাকলেও বর্তমানে পার্কের সংশ্লিষ্ট ইজারাদার সিন্ডিকেট প্রতিজন শিশুর প্রবেশমুল্য হাতিয়ে নিচ্ছে ৫০ টাকা হারে। এ অবস্থার কারনে রোজার ঈদের পর থেকে সাফারি পার্কে দর্শনার্থী আগমনে ভাটা পড়েছে।
সাফারি পার্ক সুত্রে জানা গেছে, সরকারের বন মন্ত্রণালয় ২০১৭ সালের ১জুলাই ২০১৭ সাফারি পার্কে নতুনভাবে প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করেন। এতে প্রতিজন বয়স্ক দর্শনার্থীর ৫০ টাকা ও ১৫ বছরের নিচের শিশুদের জনপ্রতি ২০টাকা করে প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়।
সাফারি পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আশপাশের দোকানীরা অভিযোগ করেছেন, সরকারিভাবে প্রবেশমুল্য নির্ধারণ থাকলেও বর্তমান গেইট ইজারাদার সিন্ডিকেট তা অমান্য করে বয়স্কদের পাশাপাশি সকল বয়সের শিশু এমনকি ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও ৫০টাকা হারে প্রবেশ মূল্য আদায় করছে।
সরেজমিনে রোজার ঈদের দিন থেকে তৃতীয় দিন পর্যন্ত পার্কে গেলে এ ধরণের অনিয়মের ঘটনা ধরা পড়ে। ওইসময় অতিরিক্ত প্রবেশমুল্য আদায়ের কারনে ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে সাফারি পার্কজুড়ে ছোট ও মাঝ বয়সের শিশুদের ভিড় দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্কের টিকিট কাউন্টারে দেখা গেছে, সেখানে কোন ধরণের ২০টাকা মূল্যের টিকেট বিক্রি হচ্ছে না। এসময় সরকারিভাবে নির্ধারণ করে দেয়া ২০টাকা দামে টিকেট না পেয়ে শতাধিক শিশু বাইরে ঘোরাফেরা করতে থাকে।
পার্কের একটি সুত্র দাবি করেছেন, পার্কের গেইট ইজারাদার সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে শিশু দর্শনার্থীদের কাছ থেকে টিকিট বিক্রিতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে আসলেও পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাতে বাঁধা দিতে সাহস পাচ্ছেনা। এ অবস্থার কারনে ইজারাদার সিন্ডিকেট চক্র ক্ষমতার জোরে সরকার ঘোষিত মুল্য তালিকাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রোজার ঈদের পর থেকে এই পর্যন্ত দর্শনার্থীদের কাছ থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, পার্কের গেইট ইজারাদার পক্ষের ব্যাপক অনিয়মের কারনে শিশুদের প্রবেশমূল্য ২০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা করে আদায় করার প্রেক্ষিতে বর্তমানে পার্কে দর্শনার্থী আগমন একেবারে কমে গেছে। এমনকি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ক্ষুদে শিক্ষার্থী, শিশুসহ অভিভাবকরা।
অপরদিকে রোজার ঈদের দুইদিন পর মঙ্গলবার সরকারি বন্ধের দিনে পার্ক না খোলার জেরে ইজারাদার পক্ষের হামলা, ভাংচুর ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় ইতোমধ্যে সাফারি পার্কের পক্ষ থেকে আদালতে বর্তমান ইজারাদারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আদালতের বিচারক মামলার অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছেন।
সাফারি পার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম বলেন, বর্তমান ইজারাদার পক্ষ সরকারিভাবে নির্ধারণ করা প্রবেশমুল্য অনুসরণ না করে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের কাছ থেকেও তাঁরা বয়স্কদের সমপরিমাণ টিকেটমুল্য নিচ্ছেন। তাতে সাফারি পার্কের দুর্নাম হচ্ছে। তিনি বলেন, অনিয়ম ও শৃঙ্খল ভঙ্গের এসব ঘটনায় সব ধরণের ইজারা কার্যক্রম থেকে অযোগ্য হিসেবে ঘোষনা করতে যাচ্ছেন বর্তমান গেইট ইজারাদারকে। এব্যাপারে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বনকর্মকর্তার দপ্তর ইতোমধ্যে সিদ্বান্ত নিচ্ছেন।
এদিকে জানতে চাইলে সাফারি পার্কের গেইট ইজারাদার পক্ষের অংশিদার রফিক উদ্দিন স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের পর থেকে নিয়মিত ২০ টাকা দামে ছোটদের টিকেট বিক্রি হচ্ছে। ২০টাকা দামের টিকেট বন্ধ করে সকল বয়সী দর্শনার্থীদের ৫০টাকা দামের টিকেট বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে কর্তব্যরত টুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, ঈদের তৃতীয় দিন আমার অফিসে উপস্থিত হয়ে ২০-৩০ জন শিশু দর্শনার্থী এসে আমাকে জানায় তাদের কাছ থেকে টিকেটের মুল্য ৫০টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। ওইসময় আমি তাৎক্ষণিক কাউন্টারে বলে দিয়েছি, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শিশুদের কাছ থেকে ২০টাকা করে প্রবেশমূল্য নিতে।
Posted ১১:৫৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৪ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Chy