বুধবার ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারের বন উজাড় করছে রোহিঙ্গারা : প্রতিদিন পুড়ছে পাঁচ কোটি টাকার কাঠ

শুক্রবার, ২০ অক্টোবর ২০১৭
1396 ভিউ
কক্সবাজারের বন উজাড় করছে রোহিঙ্গারা : প্রতিদিন পুড়ছে পাঁচ কোটি টাকার কাঠ

আবু তাহের,সমকাল(২০ অক্টোবর) :: কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় উখিয়ার ইনানী সৈকতের অদূরে শামলাপুরে দৃষ্টিনন্দন ঝাউবনের আর কয়েকটি গাছ অবশিষ্ট রয়েছে। সৈকতের পাশেই গড়ে উঠেছে বিশাল রোহিঙ্গা বস্তি। সেখানে অর্ধলক্ষ রোহিঙ্গার বসবাস। তারাই সৈকতের ঝাউগাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রথমে তারা গাছের ডালপালা কেটে নিয়ে আসে। এরপর গাছের গোড়াটিও কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। দেড় মাস ধরে রোহিঙ্গা স্রোত অব্যাহত থাকায় জ্বালানির অভাবে এভাবেই দিনের পর দিন উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল।

কক্সবাজার বন বিভাগের তথ্যমতে, রোহিঙ্গারা প্রতিদিন জ্বালানি হিসেবে পোড়াচ্ছে গড়ে সাড়ে ৭ লাখ কেজি কাঠ। টাকার হিসাবে দৈনিক এই ক্ষতির পরিমাণ ৫ কোটি টাকারও বেশি। বন বিভাগের এই তথ্যের ভয়াবহতা দেখা যায় উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাল্ফেপ গিয়ে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা প্রতিদিন যে হারে বনজ সল্ফপদ উজাড় করছে বিষয়টি নিয়ে সরকারও চিন্তিত। তাদের জন্য বিকল্প জ্বালানি সরবরাহের বিষয়ে এনজিওগুলোকে নিয়ে সমন্বয় সভায় ইতিমধ্যে আলোচনা হয়েছে। এর জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন হবে।

বৃহস্পতিবার সকালে শামলাপুর রোহিঙ্গা বস্তির সামনে নতুন ব্রিজের কাছেই দেখা হলো বেলাল উদ্দিন নামে এক রোহিঙ্গার সঙ্গে। সামনের ঝাউবন থেকে গাছ টুকরো টুকরো করে কেটে ঝুড়িতে ভরে বস্তিতে নিয়ে যাচ্ছেন বেলাল।

তিনি জানান, নিকটস্থ সংরক্ষিত বনই রোহিঙ্গাদের জীবন-জীবিকার প্রধান অবলম্বন। বনের কাঠে তাদের জ্বালানি ও বিক্রি করেই তাদের জীবিকা চলে। ক্যাল্ফেপর ভেতরে দেখা হয় আরেক রোহিঙ্গার সঙ্গে। তার কাঁধে কচি গাছের ভারী এক বোঝা। নিকটস্থ সংরক্ষিত বন থেকে এক বছর বয়সী শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে এসেছেন তিনি।

স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার মো. ইউনুছ জানান, শামলাপুর সৈকতে বন বিভাগের গড়ে তোলা ঝাউবনে ১৫ হাজারের বেশি গাছ ছিল। বিশাল সেই বনে এখন চার-পাঁচশ’ গাছ অবশিষ্ট রয়েছে। রোহিঙ্গারা ঝাউবনের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার কারণে শামলাপুরের সংরক্ষিত বনও এখন হুমকির মুখে। বনের ছোট থেকে বড়- কোনো গাছই বাদ যাচ্ছে না। কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে রোহিঙ্গারা।

উখিয়ার বালুখালীতে নতুন স্থাপিত রোহিঙ্গা ক্যাল্ফেপর অবস্থা আরও ভয়াবহ। উত্তরে কুতুপালং, দক্ষিণে হাকিমপাড়া জামতলী পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় এক লাখেরও বেশি বসতি গড়ে উঠেছে এখানে।

স্থানীয় লোকজন জানান, কয়েক দিন আগেও সবুজ বন ছিল এখানে। এখন ন্যাড়া পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের বস্তিঘর। রোহিঙ্গা ক্যাল্ফেপর প্রায় প্রতিটি ঘরের সামনে জ্বালানি কাঠের স্তূপ। রোদে শুকানোর জন্য রেখেছে তারা। কেউ কেউ ভবিষ্যতের জন্য মজুদও করেছে। ক্যাল্ফেপ নারী-শিশু থেকে বয়স্ক পুরুষ সবাই এখানে বনমুখী। বন থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে অনেকে তা রোহিঙ্গাদের কাছে বিক্রি করছে।

বালুখালী ক্যাল্ফেপর এক নম্বর ব্লকে গিয়ে দেখা যায় কিছু রোহিঙ্গা রান্নার কাজে জ্বালানি কাঠের সঙ্গে প্লাস্টিকের বোতল পোড়াচ্ছে। চুলা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় ক্যাল্ফেপর পরিবেশ হয়ে উঠেছে বিষাক্ত।

বালুখালী থেকে সামান্য দূরে উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা ক্যাল্ফপ। এই ক্যাল্ফেপ এখন অর্ধলক্ষ রোহিঙ্গার বসবাস। ক্যাল্ফপটি গড়ে উঠেছে সংরক্ষিত বনের ভেতরে। বনের সবুজ বৃক্ষগুলো রোহিঙ্গারা কেটে উজাড় করে ফেলছে।

স্থানীয় রহমতের বিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের দ্বারা যেভাবে বন উজাড় হচ্ছে তাতে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে। দশ লাখ রোহিঙ্গা যদি রান্নার কাজে প্রতিদিন জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুরো কক্সবাজার বৃক্ষশূন্য হয়ে যাবে।

কক্সবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলী কবির জানান, রোহিঙ্গারা বন বিভাগের আড়াই হাজার একর সংরক্ষিত বন দখল করে নিয়েছে। সেখানে তারা বসতি গড়ে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করছে। তিনি বলেন, প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা পরিবার এখন এখানে আশ্রয় নিয়েছে। রান্নার কাজে একমাত্র জ্বালানি হিসাবে তারা বনের কাঠ ব্যবহার করছে।

প্রতিটি পরিবার পাঁচ কেজি করে কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলে তারা প্রতিদিন সাড়ে সাত লাখ কেজি কাঠ পোড়াচ্ছে। এই কাঠের পুরোটা তারা নিচ্ছে সরকারি বনভূমি থেকে। তারা এরই মধ্যে প্রায় ২৩০ কোটি টাকার বনজ সল্ফপদ পুড়িয়ে ফেলেছে। এর মধ্যে পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি ধরা হয়নি। পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিভাগীয় এ বন কর্মকর্তার মতে, ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এভাবে বনজ সল্ফপদ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে থাকলে বন বলতে আর কিছুই থাকবে না। মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে এখানে। এ অবস্থা তৈরি হওয়ার আগেই তাদের জন্য দ্রুত বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করা দরকার। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কেরোসিনের চুলা অথবা মানব বর্জ্যকেন্দ্রিক বায়োগ্যাস প্রকল্প করার পরামর্শ দেন তিনি।

জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র যোসেফ সূর্যমণি ত্রিপুরা বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বিকল্প জ্বালানির বিষয়টি আমরাও চিন্তাভাবনা করছি। কম তাপে রান্না করা যায় এ রকম সরঞ্জাম সরবরাহ করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করার বিষয়েও আলাপ-আলোচনা চলছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা-আইওএম উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের লেদা ক্যাল্ফেপ ৫৬টি বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করেছে। এগুলোতে মানব বর্জ্য থেকে উৎপম্ন বায়োগ্যাস দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫শ’ পরিবার রান্নার কাজ করছে।

আইওএম কক্সবাজার অফিসের সমন্বয়কারী সৈকত বিশ্বাস বলেন, একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকে উৎপম্ন গ্যাস দিয়ে পালা করে প্রতিদিন অন্তত ৮টি পরিবার রান্না করতে পারে। রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি স্যানেটারি ল্যাট্রিনগুলোতে যে বর্জ্য পড়ছে তা নিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, টেকনাফের লেদায় ৪১টি এবং উখিয়ার কুতুপালং ক্যাল্ফেপ ১১টি বায়োগ্যাস প্রকল্প ইতিপূর্বে পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করা হয়েছে। এখন ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা আসায় আমরা আরও বেশি করে বায়োগ্যাস প্রকল্প তৈরি করার চিন্তাভাবনা করছি।

1396 ভিউ

Posted ৩:৫০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২০ অক্টোবর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com