বিশেষ প্রতিবেদক(১৬ জুলাই) :: কক্সবাজার শহরের উপর দিয়ে প্রবাহিত প্রধান নদী বাঁকখালী দখল ও দূষণ মুক্ত করতে উচ্চ আদালতের দেওয়া নির্দেশ দুই বছরেও বাস্তবায়ন করতে পারেনি প্রশাসন।এ সুযোগে প্রতিদিন দখল ও দূষণ হয়ে চলেছে বাঁকখালী নদী।আর গত একমাসে পৌরসভার সহযোগিতায় নতুন করে নদী দখল করে অর্ধ শতাধিক স্থাপনা গড়ে উঠেছে বাঁকখালীর তীরে। আর সরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় বাঁকখালী নদীর তীরের অবৈধ দখলকারীর সংখ্যা ২২০ জন।
শনিবার বাঁকখালীর কয়েকটি পয়েন্টে ঘুরে দেখা যায়,কক্সবাজার পৌরসভার ডজনাধিক ট্রাক প্রতিদিন শহরের শত শত টন ময়লা-আবর্জনা সরাসরি নদীতে ফেলছে। এতে প্রতিদিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর অনেকাংশ। এ সুযোগে দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে সর্বদলীয় প্রভাবশালী ভূমিদ্যুরা। এর ফলে দখল হয়ে যাচ্ছে নদীর দুই পাশ। নির্মিত হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা।
জানা যায়,২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাঁকখালী দখলদারদের তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদ এবং দূষণের উত্স চিহ্নিত করে তা বন্ধের রুল জারি করেন হাইকোর্টের বিচারপতি মির্জা হাঈদার হোসেন ও ভবানী প্রসাদ সিংহ এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। একই সঙ্গে আদালত নদীর তীরে চিংড়ি, তামাক বা ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে ইজারা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ ১০ সরকারি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। অথচ আদালতের নির্দেশের দুই বছরেও বেশি সময় পার হলেও তা বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়,শহরের একসময়ের বাণিজ্যিক জংশন হিসেবে পরিচিত বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট দখল হয়ে গেছে। সম্প্রতি কস্তুরাঘাটের কলার আড়ত থেকে বাঁকখালী নদীর ৫ একর জায়গা ভরাট করা হয়েছে। দখলে নেওয়া হয়েছে ৫০ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি খাস জমি। শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া থেকে মাঝেরঘাট পর্যন্ত নদীর প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের বেশি অংশে নতুন করে দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। বাঁকখালী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে তৈরি হয়েছে চিংড়ি ঘের, লবণ উত্পাদনের মাঠ, প্লট বিক্রির হাউজিং কোম্পানি, নৌযান মেরামতের ডকইয়ার্ড, বরফ কল ও শুঁটকিমহালসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি।
এছাড়া বাঁকখালী নদীর কক্সবাজার শহরের ছয় নম্বর জেটিঘাটের অবস্থা করুণ। ময়লার স্তূপে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন নৌযানগুলো জেটিতে ভিড় করতে পারছে না। হাঁটু পরিমাণ কাদাপানি পেরিয়ে নৌযানে ওঠতে হয় যাত্রীদের। প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী কক্সবাজার সদর উপজেলার বাংলাবাজার থেকে শহরের নুনিয়াছরা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার অংশে দিন দিন দখল বাড়ছে। সরকারি তালিকায় দখলদারদের সংখ্যা ২২০ জন।
এর মধ্যে জেলা প্রশাসকের তালিকায় রয়েছে ৭৯ জন, উপকূলীয় বনবিভাগের তালিকায় ৭১ জন এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের তালিকায় রয়েছে ৭০ জন। তবে সরকারি তালিকার বাইরে আরো অন্তত হাজারো দখলদার রয়েছে।
পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম জানান, ‘বাঁকখালীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছিল। বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে দখলদারদের বিরুদ্ধে। সময় মতো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা না পাওয়ায় সদিচ্ছা থাকলেও অভিযানে নামা সম্ভব হচ্ছে না।’এছাড়া বর্জ্য ফেলা অব্যাহত রাখায় পৌরসভার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় পরিবেশ অধিদফতর।
পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুর রহমান জানান, শহরের ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য রামুর চাইন্দা এলাকায় জমি কিনে এখন সেখানে ডাম্পিং স্টেশন তৈরির কাজ চলছে।
জেলার একমাত্র নিবন্ধিত পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ উর রহমান মাসুদ বলেন, ‘শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলে নদী ভরাট করছে খোদ পৌরসভা।’এ জন্য পৌর মেয়রের অবহেলার কারণেই বর্জ্য ফেলা ও দখল-দূষণ অব্যাহত রয়েছে।তাছাড়া কয়েকজন পৌর কমিশনারের বিরুদ্ধেও বাকঁখালী দখল বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) পংকজ বড়ুয়া বলেন ‘যতই প্রভাবশালী হোক আইন অনুযায়ী বাঁকখালী নদীর দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন বলেন ‘বাঁকখালী নদী রক্ষার জন্য বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক একাধিকবার অভিযান চালিয়ে কিছু দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।’
Posted ১০:০৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৬ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta