কক্সবাংলা রিপোর্ট :: কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্মিত জেটিতে ভিড়েছে একটি বিদেশি জাহাজ। এর মধ্য দিয়ে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরে জাহাজ প্রবেশের জন্য নির্মিত চ্যানেল দিয়ে প্রথমবার কোনো জাহাজ ঢুকল। ১৪ কিলোমিটার চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’ নামের পণ্যবাহী জাহাজটি গতকাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্মিত হেভি লিফট বা ভারী কার্গো নামানোর জেটিতে ভেড়ে।
ভবিষ্যতে এই চ্যানেল দিয়েই প্রবেশ করে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে নির্মিত টার্মিনাল ও জেটিতে বড় জাহাজ ভিড়বে। সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এখন যে জেটিতে জাহাজটি ভিড়েছে সেটি নির্মিত হয়েছে মাতারবাড়ী ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য। এই জেটির অপর পাশেই গড়ে উঠবে দেশের প্রথম মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম বলেন, ‘বহির্নোঙরের পাইলট বোর্ডিং পয়েন্ট থেকে জেটি পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে জাহাজের দেড় ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। কিন্তু আজ (গতকাল) দুই ঘণ্টা ২০ মিনিট লাগার কারণ হচ্ছে প্রথম জাহাজ হিসেবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কিছু প্রস্তুতি ছিল, একই সঙ্গে কিছু আনুষ্ঠানিকতাও ছিল।’
ইন্দোনেশিয়ার সিলেগন সমুদ্রবন্দর থেকে ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’ জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে গতকাল সকালে। এরপর বন্দরের নিজস্ব সিনিয়র পাইলট ক্যাপ্টেন রহমত উল্লাহ খান জাহাজটি চালিয়ে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে নিয়ে যান। এরপর সেখান থেকে পণ্য নামানো শুরু হয়।
জানতে চাইলে মাতারবাড়ীতে জাহাজ ভেড়ানো কাজে সমন্বয়কারী ও চট্টগ্রাম বন্দরের সহকারী হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন আতাউল হাকিম সিদ্দিকী বলেন, ‘এটি কেবল চট্টগ্রাম বন্দরের জন্যই নয়; বাংলাদেশের জন্যও ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এটি বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়া এবং সক্ষমতার প্রমাণ।’ জাহাজটি জেটিতে ভেড়ার পর পণ্য নামিয়ে চলে যেতে চার-পাঁচ দিন লাগবে বলে জানান তিনি।
মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে জাপানের জাইকা। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার জাহাজ ভেড়ানোর পরিকল্পনা করতে গিয়ে বাণিজ্যিক বন্দর নির্মাণের বিষয়টি উঠে আসে।
জাইকার প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে ১৬ মিটার গভীরতা এবং আড়াই শ মিটার দীর্ঘ জাহাজ মোট আট হাজার একক কনটেইনার পণ্য নিয়ে ভিড়তে পারবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার একক কনটেইনার নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারে। ফলে মাতারবাড়ীতে চট্টগ্রাম বন্দরের আড়াই থেকে তিন বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে।
মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণের প্রাথমিক পরিকল্পনায় প্রথম ধাপে রয়েছে দুটি টার্মিনাল। সাধারণ পণ্যবাহী ও কনটেইনার টার্মিনালে বড় জাহাজ (মাদার ভ্যাসেল) ভিড়তে পারবে, যেটি এখন বাংলাদেশের কোনো বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারে না। প্রথম ধাপে বন্দর ও পণ্য পরিবহনের জন্য সড়ক নির্মাণ, দ্বিতীয় ধাপে নির্মিত হবে তিনটি কনটেইনার টার্মিনাল। এভাবে পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে টার্মিনাল।
কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আগে প্রস্তুত হয়েছে ২৫০ মিটার প্রস্থ, ১৮ মিটার গভীরতা এবং ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল। এই চ্যানেল বা প্রবেশপথ দিয়েই বঙ্গোপসাগর থেকে জাহাজ বন্দর জেটিতে প্রবেশ করবে।
Posted ৩:২৪ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy