মোসলেহ উদ্দি,উখিয়া :: কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প উখিয়ার কুতুপালংয়ে আরসা ও মুন্নী গ্রুপের মধ্যে আধিপাত্য বিস্তার নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া, ইট পাটকেল নিক্ষেপ, গোলাগুলি, অপহরণ, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৯ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
হত্যাকান্ড, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সাথে সম্পৃক্ত প্রায় ২০ জন রোহিঙ্গা পুলিশের হাতে আটক হয়েছে।
গত রবিবার যৌথবাহিনী ক্যাম্পের নৌকার মাঠ এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে। তারা বলছে, পরিস্থিতি আপাতত শান্ত।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর অধিনায়ক পুলিশ সুপার হেমায়েতুল ইসলাম সাংবাদিকের জানিয়েছেন, যৌথবাহিনীর তল্লাসী অভিযানে গ্রেপ্তার আতংকে আরসা ও মুন্না গ্রুপের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সড়ক পথে পালিয়ে যাওয়ার সময় ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।
এরা হচ্ছে বালুখালী ক্যাম্পের জিয়াউর রহমান (৩০), মোঃ উসমান (৩০), ছৈয়দ উল্লাহ (২৮), মোঃ রফিক (৩০), জামতলী ক্যাম্পের এজাজুল হক (৬০), রহমত উল্লাহ (১৯), সোনা মিয়া (২১), রশিদুল্লাহ (১৫), ইয়াসের (২১), উসমান (২১), ইসমাইল (১৬), কবির আহমদ (৪০), সুলতান আহমদ (৪০), আয়ুবুল ইসলাম (২৫), আবুল কাশেম (১৮), মোঃ রফিক উল্লাহ (৩০)। এর আগে পুলিশ ৪ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করে উখিয়া থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ্দ করেছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মুন্না ও আরসা গ্রুপ নামের দুইটি সন্ত্রাসী গ্রæপের মধ্যে চলমান সংঘাতে এ পর্যন্ত মহিলা সহ ৯ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে বলে ক্যাম্পের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
ক্যাম্প ইনচার্জ মোঃ খলিলুর রহমানের উদ্বৃতি দিয়ে রেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল আহমদ হতাহতের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ক্যাম্প ইনচার্জ প্রতিনিয়ত বøক মাঝি, ক্যাম্প মাঝি ও হেড মাঝিদের নিয়ে বৈঠক করেন।
বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সহাবস্থানে বসবাস করে শান্তি শৃঙ্খলা অক্ষুন্ন রাখা এবং অযথা রোহিঙ্গারা যাতে বাইরে ঘোরাফেরা থেকে বিরত থাকে।
তিনি আরো বলেন, গত রবিবার যৌথবাহিনী ক্যাম্পে স্পর্শকাতর এলাকা নৌকার মাঠ এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে। এসময় সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার কারণে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
গত রবিবার কুতুপালং ক্যাম্প ঘুরে একাধিক রোহিঙ্গা মাঝি ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে কথা প্রসঙ্গে তারা জানাতে চান ক্যাম্পে বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন চরিত্রের, চোর, ডাকাত, দাগি আসামী, মিয়ানমারের অবস্থানকালে একাধিক মামলার আসামী ও আরসা নামধারী একটি অপদার্থ অপকর্ম চরিত্রের কিছু সংখ্যক বিপদগামী লোক এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
তারা আগের অভ্যাসগত বৈশিষ্ট্যগুলো ত্যাগ করতে পারেনি। উপরোন্তু মিয়ানমারের চাইতে এখানে তারা আরো হিংস্র হয়ে উঠেছে।
এহেন পরিস্থিতিতে প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে যাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে। এমনকি বেশ কিছু রোহিঙ্গা মিছিল সহকারে গত শুক্রবার ক্যাম্প প্রদক্ষিণ করার বিষয়টি প্রত্যক্ষদর্শী মাঝিরা নিশ্চিত করেছে।
ক্যাম্প কমিটির সেক্রেটারী মোহাম্মদ নুর জানান, সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে শান্তিপ্রিয় রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে বিষয়টি অবহিত করেছে।
তবে ক্যাম্প ইনচার্জ মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, ভাসানচরে যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গারা এখনো কোন লিখিত আগ্রহ প্রকাশ করেনি।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আহমেদ সঞ্জুর মোরশেদ জানান, ক্যাম্পে নতুন করে কোন প্রকার সহিংস ঘটনা ঘটেনি। রোহিঙ্গারা যাতে যেকোন প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটাতে না পারে সেজন্য পুলিশ প্রশাসন প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
Posted ৩:৩৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy