তোফায়েল আহমদ(২২ জুন) :: সারা বিশ্ব মেতেছে বিশ্বকাপে, বাংলাদেশেও প্রতিটি এলাকায় বিশ্বকাপ খেলার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এতে উখিয়া টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারাও পিছিয়ে নেই। এখন বিশ্বকাপ খেলার আমেজে মাতোয়ারা রোহিঙ্গারা। আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের পতাকায় ছেয়ে গেছে রোহিঙ্গা শিবির। সেই সঙ্গে উড়ছে আরো অন্যান্য ফেভারিট ফুটবল দলের পতাকাও। রোহিঙ্গা শিবিরের পাহাড়ের মাঠে যেমনি চলছে জমজমাট ফুটবল আসর তেমনি চলছে বড় পর্দায় খেলা দেখারও প্রতিযোগিতা।
শুক্রবার দিনব্যাপী সরেজমিন উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন এক রকমের ফুটবলের আসর।
উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের বিশাল পাহাড়ী মাঠে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠের একদিকে চলছে ক্রিকেট এবং অপরদিকে চলছে ফুটবল খেলা। খেলাধুলায় মশগুল রোহিঙ্গা কিশোর-যুবক থেকে বয়স্করা পর্যন্ত। এমন সকালে ক্রিকেট খেলায় মেতে উঠেছে যুবক শ্রেণির রোহিঙ্গারা। মাঠের অপরদিকে কিশোরের দল ফুটবল খেলছে।
রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্ব কাপ ফুটবলের ফেভারিট দলের পতাকায় পতাকায় ভরে গেছে। শিবিরের পাহাড়ে পাহাড়ে উড়ছে পতাকা। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে, আর্জেন্টিনা দলের পতাকা। দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে ব্রাজিলের।
কুতুপালং নিবন্ধিত শিবিরের ৩ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, ‘আমাদের রোহিঙ্গারা সবচেয়ে বেশি ভক্ত আর্জেন্টিনা দলের। দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে ব্রাজিলের ভক্তের সংখ্যা। এর পরে রয়েছে জার্মান এবং পর্তুগাল।’
তিনি জানান, রোহিঙ্গারা দল বেঁধে অনেক লম্বা কাপড়ের আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের পতাকা বানিয়েও শিবিরের ব্লকে ব্লকে উড়াচ্ছে।
একই শিবিরে শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে দেখা গেছে আরো এক ভিন্ন রকমের দৃশ্য। ততক্ষণে এক পশলা বর্ষণের পানিতে গোটা ফুটবল মাঠটি কাদায় ভরে গেছে। তারপরেও মাঠে তিনটি দলের খেলোয়াড়রা মেতেছে ফুটবল নিয়ে।
দেখা গেছে, কিশোরের দলটি মাঠের মাঝখানে খেলছে। মাঠের দক্ষিণ পার্শ্বে নেমেছে ব্রাজিলের জার্সি ও আর্জেন্টিনার জার্সি নিয়ে জুনিয়র দলের খেলোয়াড়রা।
এ দলের অনেক তরুণ মাথার চুল কেটে কেউ তাদের ফেভারিট খেলোয়াড় নেইমার আবার কেউবা মেসি রুপ ধারণ করেছে। খেলা পাগল রোহিঙ্গারা পছন্দের দলের জার্সি গায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খেলা পাগল এইসব রোহিঙ্গারা প্রতিদিন পছন্দ দলের পক্ষে বাজি রাখছে। বিশ্বকাপ খেলার শুরু থেকে খেলা উন্মাদনায় রয়েছে রোহিঙ্গারা।
শিবিরে ফুটবল নিয়ে সবচেয়ে বেশি মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে বেশ কয়েক বছর আগে আসা রোহিঙ্গারা। তবে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এরকম ফুটবল নিয়ে তেমন বেশি মাতামাতি নেই।
তাদেরই একজন জাহাঙ্গীর আলম (১৭) নিজেকে নামের শেষে নেইমারও যোগ করে দিয়েছে। নাম জানতে চাইলেই ঝটফট বলে ফেলে-‘আঁর নাম জাহাঙ্গীর আলম নেইমার। আঁই ব্রাজিল পছন্দ গরি। নেইমার আঁর প্রিয় খেলোয়াড়।’ অর্থাৎ আমার নাম জাহাঙ্গীর আলম নেইমার। আমি ব্রাজিল দলকে পছন্দ করি। আমার প্রিয় খেলোয়াড় নেইমার।
জাহাঙ্গীর জানায়, আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত ব্রাজিল-কোস্টারিকার খেলা উপলক্ষে সকাল বেলায়ই সে কিনে নিয়েছে ৭০০ টাকায় ব্রাজিলের জার্সির মতো একটি গেঞ্জি। সেই গেঞ্জি গায়ে দিয়েই তার নেতৃত্বে বিকালে আর্জেন্টিনা সমর্থক গোষ্ঠীর সঙ্গে খেলায়ও মেতেছিল।
একই মাঠে যুবক রোহিঙ্গারাও ফুটবল নিয়ে মেতেছে সন্ধ্যা ৬টায় ব্রাজিলের খেলা শুরু আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। সেই যুবকদের ২২ জন খেলোয়াড় সবাই পায়ে বুট এবং গেঞ্জি নিয়ে পুরোদস্তুর পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়দের মতো করেই খেলায় মেতেছে। আর মাঠের চারপাশে শত শত রোহিঙ্গা দর্শক খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করে। এটা যেন এক মিনি বিশ্বকাপ খেলা।
শিবিরের রোহিঙ্গা কাশিম আলী বলেন-‘আমাদের রোহিঙ্গারা বাস্তবে খেলা প্রিয় মানুষ। ২০১২ সালে রাখাইনে জাতিগত দাঙ্গার পর থেকেই এভাবে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা উপভোগ করতে পারেনি তারা। তাই এবার নতুন প্রজন্মের রোহিঙ্গারাসহ বাংলাদেশে এসে একদম স্বাধীন পরিবেশে এবারের বিশ্বকাপ তারা উপভোগ করছে।
সারাদিন মাঠে খেলা শেষে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই মাঠের পশ্চিম পাশে থাকা হল রুমে ফুটবল প্রেমি রোহিঙ্গারা বড় পর্দায় খেলা দেখতে বসে যায়।
রহিম নামের আয়োজকদের একজন জানান, চাটাইতে বসে প্রতিটি খেলার জন্য ২০ টাকা করে টিকেট নেয়া হয়। আবার হলের চেয়ারে বসে খেলা দেখতে প্রতি টিকেট ৫০ টাকা। হলটি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যেই পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
দর্শকদের কমপক্ষে শতকরা ৮০ ভাগই ব্রাজিলের সমর্থক এ হলটিতে। কিছুক্ষণ পর পরই হাততালি দিয়ে চিৎকার শুনা যাচ্ছিল ব্রাজিল….ব্রাজিল।
Posted ২:১৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৩ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Chy