বিশেষ প্রতিবেদক(৯ জুন) :: কক্সবাজারের ১২০ কিলোমিটার সৈকতজুড়ে শামুক-ঝিনুক আহরণ নিষিদ্ধ। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা মানছেন না আশপাশের বাসিন্দারা। প্রতিনিয়তই শামুক-ঝিনুক আহরণ চলছে। এতে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালালে তখন কিছু সময়ের জন্য আহরণ বন্ধ থাকে। পরক্ষণে পরিস্থিতি ফিরে যায় আগের অবস্থায়। পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন সময় অভিযান চলানো হয়।
আহরণকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গয়না, শোপিস, পোলট্রির (মাছ ও মুরগি) খাদ্য ও চুন তৈরিতে শামুক-ঝিনুক ব্যবহার করা হয়।
শামুক-ঝিনুক আহরণের সত্যতা নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম বলেন, গত ২৬ মে বাহারছড়ার কচ্ছপিয়া সৈকত থেকে ৯ মেট্রিকটন শামুক-ঝিনুক জব্দ করেছেন পরিবেশকর্মীরা। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আসামি করে টেকনাফ থানায় একটি মামলা হয়েছে। অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সর্দার শরিফুল ইসলাম আরও বলেন, খবর পেয়ে অভিযানে গেলে কয়েক দিন আহরণ বন্ধ থাকে। পরে আবার শুরু হয়। লোকবলের অভাবে এত বড় উপকূলে পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রমতে, ১৯৯৫ সালে উপকূল ও জলাভূমির জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ১২০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকাকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে শামুক-ঝিনুক আহরণ ও বিপণন নিষিদ্ধ করা হয়।
গত রোববার সকালে টেকনাফের মহেশখালীয়াপাড়া, বড়ডেইল, হাজামপাড়া ও বাহারছড়া সৈকত ঘুরে দেখা গেছে কয়েক শ লোক সৈকত থেকে শামুক-ঝিনুক আহরণ করছে। এরপর আহরণকৃত শামুক-ঝিনুক পাশের ঝাউবাগানের ভেতরে স্তূপ করে রাখছেন। সেখান থেকে বস্তায় ভরে কক্সবাজার শহরসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কথা হয় বাহারছড়া সৈকতে শামুক-ঝিনুক সংগ্রহে ব্যস্ত আবদুল আজিজ (১৩), মনোয়ারা বেগম (৩৫) ও রহিমা খাতুনের (৩৪) সঙ্গে। তাঁরা বলেন, শামুক-ঝিনুক আহরণের জন্য ব্যবসায়ীরা তাঁদের আগাম টাকা দিয়েছেন। সেই টাকা পরিশোধ করতে শামুক-ঝিনুক আহরণ করছেন তাঁরা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টেকনাফের সেন্ট মার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, খুরেরমুখ, কাটাবনিয়া, হারিয়াখালী, নয়াপাড়া, বাহারছড়া, মাথাভাঙ্গা, উখিয়ার মনখালী, ইনানি, সোনাপাড়া, নিদানিয়া, রেজু, হিমছড়ি, কক্সবাজারের কলাতলী, নাজিরারটেক, ফদনারডেইল, সমিতিপাড়াসহ অন্তত শতাধিক স্থানে শামুক-ঝিনুক আহরণ চলে।
আহরণ করা শামুক-ঝিনুক বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা ৩০০-৪০০ টাকায়। পরবর্তী সময়ে এসব কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বাগেরহাটে পাঠানো হয়। প্রতি বস্তায় শামুক-ঝিনুক থাকে ৫০-৬০ কেজি।
টেকনাফের কচ্ছপিয়ার গ্রামের আব্দুল করিম ও মনখালীর আব্দুর রশিদ বলেন, ‘শীত ও বর্ষা মৌসুমের শুরুতে শামুক-ঝিনুক বেশি পাওয়া যায়। এখন কোনো কাজ নেই তাই শামুক-ঝিনুক সংগ্রহ করছি।’
একই এলাকার শামুক-ঝিনুক ব্যবসায়ী নুরুল আমিন বলেন, ‘আমরা আড়তদারের কাজ করি। বস্তাপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা দেওয়া হয়। শামুক-ঝিনুক দিয়ে গয়না, শোপিস তৈরির পাশাপাশি চুন, মাছ ও মুরগির খাবার তৈরি হয়।’
টেকনাফ বন বিভাগের শীলখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সাগরের পানি পরিষ্কার করা এবং বালুচর গঠনে শামুক-ঝিনুকের ভূমিকা অনেক। কিন্তু কয়েক দিন ধরে উপকূলীয় এলাকা থেকে ব্যাপক হারে শামুক-ঝিনুক আহরণ করতে দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বনকর্মীরা চার-পাঁচটি অভিযানে ১০২ বস্তা শামুক-ঝিনুক জব্দ করেছেন।
পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ উর রহমান বলেন, শামুক-ঝিনুক পরিবেশ রক্ষার একটি উপাদান। কিন্তু অর্থের লোভে লোকজন তা নিধন করেই চলেছে। এতে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকিতে পড়ছে।
Posted ৩:০৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১০ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta