কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৮ ডিসেম্বর) :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বাকি মাত্র ১ দিন। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে প্রচার প্রচারণা। শেষ মুহূর্তে ভোটারদের মন জয় করতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। শেষদিনে কক্সবাজারের ৪টি সংসদীয় আসনে প্রার্থীদের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে তৎপরতা। প্রার্থীরা গণসংযোগের পাশাপাশি করেছেন জনসভা।
শেষ জনসভাগুলোতে বক্তব্যে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। আর শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ ধানের শীষের পক্ষেই নীরব ভোট দেবে বলে মনে করছেন বিএনপি সংশ্লিষ্টরা।
শেষ দিনে প্রচারণায় কক্সবাজারের আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যেখানেই গেছেন সেখানেই মানুষের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থীদের সাথে মানুষ থাকলেও গত পাঁচদিন ধরে বিভিন্ন মামলার আসামী নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ের কারণে অনেকেই গা-ঢাকা দিতে হয়েছে বলে জানা গেছে। অনেকেই নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন।
কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কক্সবাজারের সবকটি আসনে বৃহস্পতিবার বিকালে শেষ শোডাউন করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীদের ধারণা- দেশের উন্নয়নের স্বার্থে মানুষ আবারো নৌকায় উপর আস্থা রাখবে। কোনভাবেই এদেশের জনগণ দুর্নীতিবাজ, বোমাবাজদের হাতে দেশের দায়িত্ব তুলে দেবে না। আবারো শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন।
কক্সবাজারে শেষ দিনে প্রচারণায় ব্যস্ত থাকলেও বিভিন্ন যায়গায় কিছু নেতাকর্মী গ্রেফতার হওয়ায় কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা। সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুললেও জয়ের ব্যপারে আশাবাদী তারা। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন- যদি সিলেটে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে ৩০ ডিসেম্বর ছয়টি আসনেই জয়ের মালা পরবেন বিএনপির প্রার্থীরা। কক্সবাজারের মানুষ এখনো নীরব রয়েছে, ধানের শীষে এই নীরব ভোটেই বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারা।
জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা আরো বলেন-কক্সবাজারের ৪টি সংসদীয় আসনে সবসময় বিএনপি জোটের প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়ে এসেছেন। ২০১৪ সাল বাদে আগের নির্বাচনে নানা অপচেষ্টা করেও আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতে পারেনি। কক্সবাজারের জনগণ ভোট দিয়েই সবসময়ই বিএনপির প্রার্থীকে বিজয়ী করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনেও জনগণ ভোট দিতে পারলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে।
নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,কক্সবাজার জেলার ৪টি পৌরসভা ও ৭১টি ইউনিয়নে এবার ভোটকেন্দ্র ৫১২টি। মোট ভোটার ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ২০৪ জন। এর মধ্যে ৭ লাখ ৭ হাজার ৮৩১ জন পুরুষ এবং ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৩ জন নারী। ভোট কক্ষের সংখ্যা ২ হাজার ৭৩৮টি।
অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে কক্সবাজারের ৪টি আসনই নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। এ জন্য জেলায় ৩০ প্লাটুন সেনাবাহিনী, ৬ প্লাটুন নৌবাহিনী, ৪৮ প্লাটুন বিজিবি, ১০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স পুলিশ ও ২ কোম্পানি র্যাব। তবে র্যাব এর এই ২ কোম্পানি কক্সবাজার জেলা ছাড়াও চট্টগ্রামের দুইটি আসনের দায়িত্বে থাকবেন। আনাসার ও গ্রাম পুলিশ শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রে।
কক্সবাজার–১(চকরিয়া–পেকুয়া) : চকরিয়া উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়ন এবং পেকুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-১ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯০ হাজার ৬৮১ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১৩৯টি।
চকরিয়া উপজেলায় ১৮টি ইউনিয়নের ৯৯টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে এক লাখ ৪৮ হাজার ৮০৫ জন পুরুষ ও এক লাখ ৩৫ হাজার ৬০৬ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৪১১ জন।
পেকুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৪০ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৫৫ হাজার ৬২০ জন পুরুষ ও ৫০ হাজার ৬৫০ নারীসহ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৬ হাজার ২৭০ জন।
কক্সবাজার–২(কুতুবদিয়া–মহেশখালী) : কুতুবদিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং মহেশখালী উপজেলার একটি পৌরসভার ৮টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-২ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮১ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১০৫টি।
কুতুবদিয়া উপজেলায় ৬ ইউনিয়নের ৩৭টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৪৪ হাজার ২৩ জন পুরুষ ও ৪০হাজার ৪৪২ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৪৬৫ জন।
মহেশখালী উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে ৬৮ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৯ জন পুরুষ ও ১ লাখ ১ হাজার ৬৬৭ নারীসহ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১১ হাজার ৬১৬ জন।
কক্সবাজার–৩(সদর–রামু) : কক্সবাজার সদর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন এবং রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-৩ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৪ হাজার ৩৬ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১৬৮টি।
সদর উপজেলায় ১০৮টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে এক লাখ ৩৫ হাজার ১৪ জন পুরুষ ও এক লাখ ২১ হাজার ৪ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার ১৮ জন।
রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৬১ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৮১ হাজার ৪১০ জন পুরুষ ও ৭৬ হাজার ৬০৮ নারীসহ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৫৮ হাজার ১৮ জন।
কক্সবাজার–৪(উখিয়া–টেকনাফ) : উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন এবং টেকনাফ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-৪ আসনটি গঠিত। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪০৬ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১০০টি।
উখিয়া উপজেলায় ৪৫টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৬০ হাজার ৪৮৮জন পুরুষ ও ৫৮ হাজার ২৯৭ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৫ জন।
টেকনাফ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নে ৫৫ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৭২ হাজার ৫২২জন পুরুষ ও ৭৩ হাজার ৯৯ নারীসহ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৪৫ হাজার ৬২১ জন।
Posted ২:১৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Chy