কক্সবাংলা রিপোর্ট :: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কক্সবাজার জেলায় উচ্চ ফলনশীল স্বল্পমেয়াদী,উফশী, হাইব্রিড, দেশি জাতের রোপা আমনে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। আমন মৌসুমের শুরুতে জেলায় ভয়াবহ বন্যায় বীজতলা ও ফসলি জমির বড় একটা অংশ মাঠে নষ্ট হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছিল চার উপজেলার কৃষকদের। তবে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠিয়ে ভালো ফলনে কৃষকরা খুব খুশি। আমন ধানের ভালো ফলন হওয়ায় বোরো ধান চাষেও আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের।
কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি ২০২৪-২৫ আমন মৌসুমে জেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৭৮ হাজার ৩৫০ হেক্টর। এর মধ্যে বন্যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকার জমি পুনরায় আবাদ করা হয়।এর ফলে লক্ষ্যমাত্রার জমিতে ধান কর্তন সম্ভব হয়। এর ফলে প্রতি বিঘা জমিতে ১১-১২ মন চাল উৎপাদিত হয়েছে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে ৩.২৭ টন। গতবছর ছিল ৩.০২ টন।
জেলায় গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমন মৌসুমে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৭৭ হাজার ৮০৭ হেক্টর এবং চাল উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ২৩ হাজার ১০০ মেট্রিক টন। এবার সে রেকর্ড অতিক্রম করে ৭৭ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করে চাল উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১ হাজার ৩৩৬ মেট্রিক টন ফলন বেশি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এবছর ৯ উপজেলায় ৭৭ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ করে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে। যার বাজারমূল্য দাড়িয়েছে ১১৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা।(৪৬ হাজার টাকা মেট্রিক টন দরে)।
কক্সবাজারের ৯ উপজেলাতেই এবার কমবেশি রোপা আমন ধান চাষ করেছেন চাষিরা। সাম্প্রতিক জুলাই-আগস্ট মাসে অতিবৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় উপকূলীয় চার উপজেলা (চকরিয়া,পেকুয়া,রামু ও সদর) বীজতলা ও ফসলি জমির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ধানবীজ আর সারের সহায়তা নিয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
ফলে এবার আগের বছরের তুলনায় বেশি জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। তার উপর উচ্চ ফলনশীল স্বল্পমেয়াদী নতুন জাতের কারণে এক ফসলের জায়গায় তিন ফসল করতে পারছেন কৃষকরা। ফসল বিন্যাসেও এসেছে বৈচিত্র্য। এসব কারণে এবার আগেভাগেই ঘরে উঠছে ধান। সব মিলে আমনের ভালো ফলনে জেলার কৃষকরা বেশ সন্তুষ্ট।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জেলায় সর্বাধিক চকরিয়া উপজেলায় আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে এবং সর্বাধিক উৎপাদনও হয়েছে ৭১ হাজার ৩০ মেট্রিক টন চাল।
দ্বিতীয় সর্বাধিক টেকনাফ উপজেলায় আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছে ৩২ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন,
উখিয়া উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছে ৩০ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন,
রামু উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছে ২৯ হাজার ৬৯৩ মেট্রিক টন,
পেকুয়া উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছে ২৭ হাজার ১০.৫ মেট্রিক টন,
মহেশখালী উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছে ২৫ হাজার ৩০০.৫ মেট্রিক টন,
সদর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ২৬৪ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৭৬৮.২২ মেট্রিক টন,
ঈদগাঁও উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৫৬ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৯৬০.২ মেট্রিক টন এবং
সবচেয়ে কম কুতুবদিয়া উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৩২২ মেট্রিক টন।
স্থানীয় কৃসকরা জানান, অন্য বছর থেকে এবার আমন ধান ভালো হয়েছে। বন্যার কারণে পলি পড়ে জমি উর্বর হওয়ায় ও নিয়মিত বৃষ্টির কারণে ধানের ফলন ভালো হয়েছে এবার। আমন ধানের ফলন ভালো হওয়ায় বোরো চাষেও আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। খেয়ে পড়ে এবার আমনের ফলন দিয়ে বোরো চাষাবাদের খচর যোগানো যাবে। তারা আরও জানায় এবার আবাদ করা উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধানে খরচের দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি আয় হবে। অথচ, দেশি জাতের ধান করে আগে বছরে এক ফসলের বেশি করতে পারতেন না অনেকেই। ফলনও ছিল বেশ কম।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশীষ দে কক্সবাংলাকে বলেন, চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গেল বর্ষায় বন্যার কারণে চার উপজেলায় কিছু ক্ষতি হলেও পানির সঙ্গে জমিতে পলি পড়ায় আমনের উৎপাদন ভালো হয়েছে।এর ফলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে জেলায় প্রায় ৩২ হাজার টন চাল বেশি উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষকরা নিরাপদে ধান কাটা, মাড়াই-ঝাড়াই, ধান শুকিয়ে ৫ জানুয়ারীর মধ্যে গোলায় তুলে ফেলেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডক্টর বিমল কুমার প্রামানিক কক্সবাংলাকে জানান,এবার জেলায় ৮৫ হাজার ৮৮২ হেক্টর জমির মধ্যে চলতি মৌসুমে ৭৮ হাজার ০৩৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।কিন্তু জুলাই-আগস্টে বন্যার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১% আবাদ কম হয়েছে।তা স্বত্বেও ৩১ হাজার ৩৩৬ মেট্রিক টন বেশি ফলন হয়েছে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে ৩.২৭ টন।গতবছর ছিল ৩.০২ টন। সময়মতো সার ও বীজের পর্যাপ্ত সরবরাহ, মাঠ পর্যায়ে তদারকি, কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার কারণে ফলন বেশি হয়েছে। বর্তমানে বাজারে চালের দাম বেশ ভালো। এভাবে দাম থাকলে কক্সবাজারের কৃষকরা অনেক লাভবান হবেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: আবু কাওসার কক্সবাংলাকে জানান, এবছর কক্সবাজারে আমন ধানের ফলন বেশি হলেও সরকারী দর ৩৩টাকা হওয়ায় কৃষকদের থেকে ধান সংগ্রহ করা যায়নি।কারণ কৃষকরা বেশি দামে মিলার ও খোলা বাজারে বিক্রি করছে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারীভাবে আমন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৯৩ মেট্রিক টন।(টন প্রতি ৪৬ হাজার টাকা দরে)। গত বছর চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৫০১২ টন হলেও সংগ্রহ হয়েছিল ৫৪২২ টন।
তিনি আরো জানান, জেলায় বোরো ধানের চেয়ে আমন ধান চাষাবাদ কম হয়। এছাড়াও আমন ধান ফুড সেফটি হিসেবে কৃষকরা বিক্রি করেন না। কিন্তু এবার ফলন বেশি হওয়ায় আমন চাল সংগ্রহ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জেলায় ৭৭টি মিলার থাকলেও সরকারের সাথে ৩৯টির চুক্তি রয়েছে।
Posted ৫:০৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta