কক্সবাংলা রিপোর্ট :: মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী কাইয়া টিন জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির ভিত্তিতে মিয়ানমার কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া, বাংলাদেশসহ সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ক সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে লেখা এক পত্রে মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী কাইয়া টিন এসব কথা বলেন।
মিয়ানমারের মন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে পারস্পরিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যেকোনো দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের সমাধান করতে চায়।’
গত ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রি-পক্ষীয় বৈঠকে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
কাইয়া টিন বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো তিনিও মনে করেন করোনা মহামারির কারণে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন জাতির মধ্যে পারস্পরিক সংহতি ও সহযোগিতা প্রয়োজন।’
পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার বিষয়টি মিয়ানমারের মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
কাইয়া টিন ড. মোমেনের সুস্বাস্থ্য এবং বাংলাদেশের জনগণের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। গত ১ জানুয়ারি মিয়ানমারের মন্ত্রী পত্র প্রদানের জন্য ড. মোমেনকে ধন্যবাদ জানান। কাইয়া টিন ও ড. মোমেন একই সময়ে জাতিসংঘে নিজ নিজ দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং সেসময় থেকে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে।
৪ শতাধিক হিন্দু রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন চায় মিয়ানমার
অন্যদিকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে চার শতাধিক হিন্দুকে মিয়ানয়ামার ফিরিয়ে নিতে চায় বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক অং কো।
গেল মঙ্গলবার মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকে বাংলাদেশকে বিষয়টি জানান তিনি। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ কমে এলে প্রত্যাবাসনের প্রথম ধাপে এই হিন্দুরাসহ যাচাইকৃত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চায় তারা।
বিজ্ঞাপন
২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর নৃশংস গণহত্যার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। তারা বর্তমানে কক্সবাজারের ৩৪টি শিবিরে বাস করছে। ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে একমতে পৌঁছান।
সমঝোতা অনুযায়ী ২০১৮ সালেই প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেসময় মুসলিম রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে অসম্মতি জানিয়েছিল। তবে মিয়ানমারে থাকা হিন্দু নেতারা দুই দেশকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার আহবান জানিয়ে যান।
রেডিও ফ্রি এশিয়াকে মিয়ানমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক অং কো জানিয়েছেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব হিন্দুদের ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছি। তবে শুধু তারাই নয়, যত যাচাইকৃত উদ্বাস্তু রয়েছে তাদের সবাইকেই ফিরিয়ে আনতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ২০১৯ সালে মিয়ানমার জানিয়েছিল, উদ্বাস্তুদের সঙ্গে কক্সবাজারের শিবিরে ৪৪৪ হিন্দু আশ্রয় নিয়েছে। এখন তারা দেশে ফিরতে চায় বলে জানিয়েছেন রাখাইনের হিন্দু নেতারা। তারা তাদের ইচ্ছার কথা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছে।
এদিকে ইয়াংগুনভিত্তিক রাখাইন হিন্দু হিউম্যানিটেরিয়ান গ্রুপ রেডিও ফ্রি এশিয়াকে জানিয়েছে, এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া হবে সম্মতির ভিত্তিতে। যারা ফিরতে চায় তারা ফিরবে এবং যারা ফিরতে চান না তাদের না ফেরার অধিকার রয়েছে। আমরা শুধু বলতে চাই, তাদের মিয়ানমারে ফেরার সুযোগ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য ২০১৭ সালে মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম রাখাইন অঞ্চলে দেশটির সেনাবাহিনী, স্থানীয় বৌদ্ধ ও অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর নৃশংস গণহত্যা-নির্যাতনের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে পালিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়।পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর এবং ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট—এই দুইবার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর তারিখ ঘোষণা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ রোহিঙ্গা ঢলের তিন বছর কেটে গেছে, কিন্তু কেউ জানে না তারা কবে তাদের নিজের দেশ মিয়ানমার ও শহর রাখাইনে ফিরে যেতে পারবে।
অন্যদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ভাষ্য, রোহিঙ্গা জনগণের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের পক্ষে সহায়ক হয় এমন পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য সামগ্রিকভাবে সমাজ এবং সকলেরই জড়িত হওয়া দরকার।
Posted ৮:৪৪ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Chy