কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৪ জুলাই) :: সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজার জেলায় আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ছবি সহ হালনাগাদ ভোটার তালিকার কার্যক্রম। আর ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবার কক্সবাজারের সদর, চকোরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া এবং পাশ্ববর্তী আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাকে ‘বিশেষ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইসি। এসব এলাকায় বিশেষ কমিটির মাধ্যমে ভোটার তালিকার কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এসব এলাকায় ভোটার হতে হলে আত্মীয়-স্বজন বিশেষ করে বাবা-মা, ফুফু, চাচার জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে।
এদিকে কক্সবাজারে হালনাগাদ ভোটার তালিকার কার্যক্রমে রোহিঙ্গা অর্ন্তভূক্তির আশংকা দেখা দিয়েছে সর্বত্রে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি, এনজিও ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে লোকালয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের প্রশ্নবিদ্ধ বসবাস এলাকার সাধারণ মানুষ ও সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে।
সূত্রে জানা যায়, সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফ উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গা অবস্থানের জন্য নিবন্ধিত অনিবন্ধিত কয়েকটি ক্যাম্প এবং বস্তি রয়েছে। উক্ত ক্যাম্প বা বস্তিতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সেবা ও নিবিড় পরিচর্যার জন্য দেশি-বিদেশী এনজিও সংস্থা গুলো সরকারের এনজিও ব্যুরোর সাথে চুক্তিবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এতে উক্ত রোহিঙ্গারা দেশী-বিদেশী নানা সাহায্য সহায়তা পাচ্ছেন। এরপরও টেকনাফ উখিয়া ছেড়ে জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে এদের অবস্থানের হেতু কি, কারা এদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে বা কেন দিচ্ছে এ বিষয়টি নিয়ে সরকারের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ালে নিশ্চয় এর আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।’
তথ্যানুসন্ধানে গিয়ে বিভিন্ন এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও চিহ্নিত কিছু এনজিও, প্রভাবশালী রোহিঙ্গা নেতা ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নাম শুনলে প্রশাসনসহ সর্বমহলের গা শিউরে উঠে এসব কিছু ব্যক্তি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইয়াবা ব্যবসার সফলতার সুবাদে তাদের পূর্ব পরিচিত ইয়াবার জোগানদাতা রোহিঙ্গা নাগরিকদের সম্প্রীতি কৌশলে এদেশে নিয়ে এসে তাদের নিজস্ব বাসা বাড়ী ও ভাড়া বাসাতে মাসিক চুক্তিতে রেখে তাদের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে এখনও অব্যাহত ইয়াবার চালান এদেশে নিয়ে এসে দুই দিক দিয়ে লাভবান হচ্ছে।
অপরদিকে নির্বাচনের সময় নিজেদের পাল্টা ভারী করতে এবং জয় নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এসব রোহিঙ্গারা বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে এদেশে অবস্থান করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিরা স্ব স্ব এলাকায় বন বিভাগের জমিতেও এসব রোহিঙ্গাদের বাসা বাড়ী নির্মাণ করে দিয়ে সরকারী বনভূমি দখলের সুযোগ করে দিচ্ছে।
প্রভাবশালী এসব জনপ্রতিনিধি ও ইয়াবা গডফাদারদের ছত্রছায়ায় থেকে এসব রোহিঙ্গারা দেশের সামাজিক পরিবেশ নষ্ট, বন ভূমি দখল, নানা সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ও দেশীয় শ্রমিকদের বাজার দখলের পাশাপাশি এদেশের স্থায়ী বাসিন্দাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক সৃষ্টি করার মধ্যদিয়ে নানান সুযোগ সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী নেতাদের যোগসাজসে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অর্ন্তভূক্তির জন্য মোটা অংকের মাধ্যমে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
২৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া হালনাগাদ ভোটার তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্তির জন্য ইতিমধ্যেই অনেক রোহিঙ্গা লাখপতি দৌড়ঝাপ শুরু করে দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে কতিপয় দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি রয়েছেন। যারা টাকার বান্ডিল দেখলে আসল নকল সব ভুলে যায় এবং অতীতেও ভোটার তালিকায় এসব ব্যক্তির কারণে প্রকৃত রোহিঙ্গা নাগরিক ও ভোটার তালিকা অর্ন্তভূক্তির নজির রয়েছে।
যারা বর্তমানে জেলার বিভিন্ন স্থানে দালান বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করছে এবং নিজেরা জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক দাবী করে সমাজে বিভিন্ন প্রভাব বিস্তার করছে। এখনও বিভিন্ন এলাকায় নব্য কোটিপতি রোহিঙ্গারা জমি ক্রয় করে দালান বাড়ী নির্মাণ করলেও তাতে প্রশাসনের কোন নজর নেই।
তাই এসব বিষয় মাথায় রেখে উপজেলা প্রশাসন, থানা প্রশাসন ও ভোটার আইডি কার্ডে নিয়োজিত সকল প্রশাসনকে এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রেখে রোহিঙ্গাদের বয়কট করার জন্য এলাকাবাসীর জোর দাবী উঠেছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানান এবারের ভোটার হাল নাগদ তালিকায় সকল ধরণের তথ্য যাচাই বাছাই পূর্বক অন্তর্ভূক্ত করা হবে। কোন রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় যাতে অন্তর্ভূক্ত হতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, আগে রোহিঙ্গা প্রবণ বিশেষ উপজেলা ছিল ২০টি। এবার আরো ১০টি উপজেলা চিহ্নিত করেছি। রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার প্রবণতা রোধে এসব বিশেষ এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এসব এলাকায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের বিশেষ কমিটি করা হয়েছে। বিদেশি নাগিরকরা যাতে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে সে বিষয়ে তারা পদক্ষেপ নিবেন। বিশেষ এলাকায় ভোটার হতে চাইলে কমিটি ভোটারের বাবা-মার আইডি দেখবে, ফুফু-চাচার আইডি দেখবে। এসব না থাকলে বা বিদেশি নাগরিক প্রমাণ পেলে কোনো লোক ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না।
Posted ২:০১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Chy