হেলাল উদ্দিন,টেকনাফ(২৫ আগস্ট) :: আজ থেকে তিন বছর আগে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সে দেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার দল নেমে এসেছিল। এ তিনটি বছরে স্বদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য একজন রোহিঙ্গা নাগরিকেও রাজি করানো সম্ভব হয়নি। দুই দফায় প্রত্যাবাসনের সব ধরনের আয়োজন করা হলেও কোন রোহিঙ্গা ফিরে যায়নি। উল্টো রোহিঙ্গা নাগরিকেরা সাতটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।
৩ বছরে রোহিঙ্গাদের কর্মকান্ডে কেবল অতিষ্ঠ নয় বরং রোহিঙ্গাদের নিয়ে আতংকে দিন কাটছে স্থানীয়দের। কারণ রোহিঙ্গারাই এখন স্থানীয়দের গুম খুন সহ নানান অপরাধ করতে দ্বিধা করছে না। আর সব অপরাধ ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত থাকে একটি সুবিধাভোগী মহল। এতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আগামি দিনের কথা চিন্তা করে রীতিমত অস্থিরতায় আছে স্থানীয়রা। এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ভাসানচর সহ অন্য জেলায় বা অন্যকোন দেশে স্থানান্তর করার দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন টেকনাফ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসাইন রাজু বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে উখিয়া টেকনাফের ১২ টি পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। আগে আসা রোহিঙ্গা সহ বর্তমানে ৩৩ টি ক্যাম্পে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। যেটা পৃথীবির সর্ব বৃহৎ আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ইতি মধ্যে ঘোষণা হয়েছে। আমরা দেখেছিলাম সরকার প্রথম দিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য কয়েকটি চুক্তি করেছিল মিয়ানমারের প্রতিনিধি এসেছিল, বাংলাদেশের প্রতিনিধি মিয়ানমারে গিয়েছিল প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি আলোচনা হয়েছিল কিন্তু সম্প্রতি বছর খানেক ধরে সেই আলোচনাও আর দেখা যাচ্ছেনা। আর রোহিঙ্গাদের কারণে এখন স্থানীয়রা আতংকে দিন কাটাচ্ছে। কারণ তারাই এখন স্থানীয়দের অপহরণ করে গুম খুন করতে দ্বিধা করছেনা।
টেকনাফের যুবলীগ নেতা উখিয়ার ব্যবসায়ি সহ অসংখ্য স্থানীয়দের অপহরণ করে হত্যা সহ চাঁদা আদায় করেছে রোহিঙ্গারা কিন্তু সেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কিবা ব্যবস্থা নিয়েছে ? বরং সুবিধাভোগী মহলের পৃষ্টপোষকতায় তারা পার পেয়ে গেছে। এখন আমাদের রোহিঙ্গাদের সমীহ করে চলার মত অবস্থা হয়ে গেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি হতে পারে। তাই প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত ভাসানচর সহ অন্য জেলায় বা তৃতীয় কোন দেশে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করার দাবী জানান তিনি।
টেকনাফ পৌরসভার সাবেক কমিশনার হাজী আবদুল কুদ্দুস বলেন, ২০১৭ সালে যে রোহিঙ্গারা এক কাপড়ে অসুস্থ শরীর নিয়ে এসেছিল সেসব রোহিঙ্গারা এখন বিপুল টাকার মালিক বনে গেছে। ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর এবং ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট দ্বিতীয় বারের মতো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও একজনও ফেরত যায়নি বরং তারা নতুন শর্ত দিয়ে পরিস্থিতি আরো জটিল করে ফেলেছে। আমি যতুটুক জানি বাংলাদেশে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মুল দাবী হচ্ছে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দিতে হবে। আমার মতে, এই দাবী ১০০ বছরেও পূর্ণ হবে না।
কারণ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে থাকতে এই দাবী পূরণ করতে পারেনি তাহলে কিভাবে বাংলাদেশে বসে এই দাবী করে। আমার মতে এখানে আর্ন্তজাতিক এনজিও গুলোর ষড়যন্ত্র আছে।
রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরতে ৭ দফা দাবি-
১. নাগরিকত্ব দেওয়া ২. নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ৩. জমিজমা ফেরত ৪. নিজেদের গ্রামে বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি ৫. অবাধে চলাফেরা নিশ্চিত নির্বাচনে প্রার্থিতার ৬. মিয়ানমারে গৃহবন্দি রোহিঙ্গাদের মুক্তি ৭. গণহত্যার বিচার ।
শালবাগান রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালেদ হোসেন বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য ১ হাজার ৩৩ পরিবারের ৩হাজার ৫৪০ জনের তালিকা পাওয়া গিয়েছিল সেখানে শালবাগানের ৯৩৩ পরিবারের ৩ হাজার ৯১ জনের নাম ছিল । তখন তালিকায় নাম থাকা সাড়ে তিন শতাধিক পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছিল।
টেকনাফের শিক্ষক জাফর ইকবাল জানান, প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার চাপে আমরা বিপর্যস্ত। এখন রোহিঙ্গাদের কারণে অর্থনৈতিক সহ আইনশৃংখলার অবনতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এছাড়া কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে স্থানীয় র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের মাদক ব্যবসা বন্ধ করা যাচ্ছেনা। সব মিলেয়ে আমরা দিন দিন অসহায় হয়ে পড়ছি। এর মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি একেবারে আলোচনা না থাকা নিয়ে আমরা আরো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। আমাদের দাবী দ্রুত সকল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হউক। আর প্রত্যাবাসন বিলম্ব হলে দ্রুত রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হউক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শরণার্থী. ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। শুরু থেকে বাংলাদেশ বলে আসছে কোন রোহিঙ্গা নাগরিক কে জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে না।
প্রত্যবাসন নিয়ে উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির কারণে সব কিছুতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ পর্যন্ত আড়াই লাখের মতো রোহিঙ্গা তালিকা যাচাই বাছাই করে পরাষ্ট্রমন্ত্রী পাঠানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী নন্দিত ও নিন্দিত-
মিয়ারমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় আর রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারায় ততটাই নিন্দিতও হয়েছেন মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সুচি। অতীতের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা মাধ্যমে অর্জিত নানান স্বীকৃতিও খোয়া গেছে তার হারানো স্বীকৃতি মধ্যে রয়েছে এলি উইজেল অ্যাওয়ার্ড, ফ্রিডম অব অক্সফোর্ড, এডিনবরা অ্যাওয়ার্ড ইউনিসন, ফ্রিডম অব গ্লাযাসগো অ্যাওয়ার্ড। এছাড়া অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র কমনরুম টাইটেল থেকেও মুছে ফেলা হয়েছে সুচির নাম। অথচ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা হিসেবে মাদার অব হিউমিনিটি স্বীকৃতি পেয়েছে।
Posted ২:১৭ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy