মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া(১৯ ডিসেম্বর) :: কক্সবাজার উপকুলের ত্রাস এবং পুলিশকে পিটিয়ে পালানো কুখ্যাত সন্ত্রাসী আয়োয়ার হোসেন দুই ডাকাতদলের গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের কালিয়ারগোদা পাহাড় থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় একটি দেশীয় বন্দুক ও তিন রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়।
নিহত আনোয়ার হোসেন (৪০) চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের লাল মোহাম্মদ পাড়া ঘিলাতলীর মুজিবউল্লাহ প্রকাশ কিনাইয়ার ছেলে।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো.হাবিবুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে সুরাজপুর-মানিকপুরের কালিয়ারগোদা পাহাড় এলাকায় দুই ডাকাতদলের মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে বলে খবর পায়। আমি, তদন্ত(ওসি) শফিকুল আলম চৌধুরী, এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিমসহ থানার কয়েকদল পুুলিশ অভিযানে যায়।
পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। এসময় উপকুলের কুখ্যাত ডাকাত আনোয়ার হোসেনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। সেখানে কর্তব্যরত চিকিতসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
তিনি আরো বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হবে। একটি অস্ত্র আইনে আরেকটি হত্যা মামলায়।
উল্লেখ্য, কুখ্যাত ডাকাতর আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে তুলেছিলেন একাধিক সন্ত্রাসী ডাকাত দল। এহেন কোন অপকর্ম নেই আনোয়ার বাহিনী করেনি। বাহিনী প্রধান আনোয়ারের বিরুদ্ধে অন্তহীন অভিযোগ ছিলো। অভিযোগের তুলনায় মামলা ছিলো খুই কম। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় ১৭টি।
কক্সবাজার উপকূলের অন্তত ৫ লাখ মানুষ আনোয়ারকে জমদূতের মতো ভয় পায়। তাকে গ্রেফতার করতে পুলিশ তিনদফায় ঘেরাও করে। প্রতিবারেই পুলিশকে পিটিয়ে পালিয়ে যায় আনোয়ার। খুনসহ ডাকাতি, অস্ত্র আইন, পুলিশ এসল্ট, ডাকাতির প্রস্তুতি, দস্যুতার ধারায় এসব মামলা গুলো হয়।
কক্সবাজার জেলার অপরাধী তালিকার অন্যতম আনোয়ার হোসেন চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের লাল মোহাম্মদ পাড়া ঘিলাতলীর মুজিবউল্লাহ প্রকাশ কিনাইয়ার ছেলে।
একাধিক সূত্র জানায়, আনোয়ারের বয়স ৪২ হলেও কিশোর বয়সেই অপরাধ জগতে প্রবেশ তার। একের পর এক অপরাধ করলেও তার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম মামলা হয় দস্যুতার অভিযোগে ১৯৯৫ সালের ৬ মার্চ। এই মামলার পর থেকে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে আনোয়ার। প্রথমে অন্যের নেতৃত্বে অপরাধ দলের সদস্য হলেও পরে নিজেই গড়ে তুলে একাধিক অপরাধ বাহিনী।
সূত্র মতে, চিংড়িজোনে চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ভাড়াটিয়া অস্ত্রবাজ, খুনসহ এমন কোন অপকর্ম নেই আনোয়ার করেনি। তার বেপরোয়া অপরাধে আতংক ও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে ছিলো উপকূলীয় জনগণ। ফলে নিহতের খবর শোনে স্বস্তি ফিরেছে উপুকুলের মানুষদের মাঝে। তার বিরুদ্ধে তিনটি পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের হয় ২০১১ সালের ২১ মার্চ, একই বছরের ৩০ এপ্রিল ও ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি ডাকাতির মামলা দায়ের হয় ২০০৬ সালের ২৪ মার্চ ২০০২ সালের ২ ডিসেম্বর, ২০০৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী। এছাড়া ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগে ৬টি মামলা দায়ের হয়, ২০১১ সালের ২৮ মার্চ, একই বছরের ৪ এপ্রিল, ৩০ এপ্রিল, ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট, একই বছরের ১২ অক্টোবর, ২০১৪ সালের ১৫ মার্চ। পৃথক তিনটি অস্ত্র মামলা দায়ের হয় ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর, ২০১০ সালে ৬ ফেব্রুয়ারী। পরোয়ানা জারী করা ১৭টি মামলার মধ্যে ১৬টি চকরিয়া থানায় ও একটি মহেশখালী থানায় দায়ের হয়।
অপরাধ জগতের কিং হয়ে উঠা কয়েকটি বাহিনী প্রধান আনোয়ার নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় স্বস্থি ফিরে এসেছে।
Posted ৫:৫০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Chy