কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৯ জুন) :: আজ ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস।বাংলাদেশে ১৯৭৮ সাল থেকে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এখনও থামেনি।বাংলাদেশের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়ায় রয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার নিবন্ধিত মিয়ানমার মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থী।কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার নয়া পাড়া ও উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এলাকায় দু’টি ক্যাম্পে বর্তমানে নিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা হচ্ছে ৩৫ হাজার । এর মধ্যে কুতুপালং এ ১৩ হাজার ৪৫ জন ও নয়াপাড়ায় ১৮ হাজার ৭১৪ জন।
সম্প্রতি ২০১৬ সালে ৯ অক্টোবরের আরাকানে সহিংসতার পর জাতিসংঘের হিসাবে আরো ৭০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। এরা বালুখালি ও লেদা আনরেজিষ্টোর্ড ক্যাম্প সহ অন্যান্য স্থানে বসবাস করছে। এছাড়া নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত কয়েক লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার ও পার্বত্য জেলাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বসবাস করছে।
জানা যায়, ১৯৯১-১৯৯২ সালে মিয়ানমার হতে আসা প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ মিয়ানমারে ফিরে গেলেও বাংলাদেশে এখনো রয়ে যায় ত্রিশ হাজারেরও অধিক নিবন্ধিত রোহিঙ্গা। এসব মিয়ানমার মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে থাকলেও এখানে বিভিন্নভাবে অনুপ্রবেশ করেছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে টেকনাফে লেদা, শামলাপুর ও উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় অনিবন্ধিত ক্যাম্প তৈরি করে বসবাস করছে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা।
এছাড়া থমকে আছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কাজ। ফলে বাংলাদেশে অবস্থান নেয়া প্রায় ত্রিশ হাজারেরও অধিক নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সংকটে রয়েছে। তারা নাগরিকত্বহীন অবস্থায় বাংলাদেশের দুটি ক্যাম্পে অবস্থান করছে প্রায় ২৬ বছর। পাশাপাশি অন্যান্য সময়ে মিয়ানমার হতে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভাগ্যে কি ঘটবে তার হিসেব মেলাতে পারছে না কেউ। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৫ সালের ২৮ জুলাই পর্যন্ত দু’লাখ ছয়ত্রিশ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমারে ফিরে যায়। এরপর বন্ধ থাকে প্রত্যাবাসন কাজ।
এ ফাঁকে ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে তৃতীয় দেশে পুনর্বাসিত করা হয় ৯২৬ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে। এরমধ্যে কানাডায় ৩০৯ জন, যুক্তরাজ্যে ১৯০ জন, নিউজিল্যান্ডে ৫৬,যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ জন. নরওয়েতে৪ জন,আয়ারল্যান্ডে ৮২ জন, সুইডেনে ১৯ জন ও অস্ট্রেলিয়ায় ২৪২ জন। বাংলাদেশে রয়ে যায় বাকী শরণার্থীরা।
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার নয়া পাড়া ও উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এলাকায় দু’টি ক্যাম্পে বর্তমানে নিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা হচ্ছে ৩১ হাজার ৭৫৯ জন। এর মধ্যে কুতুপালং এ ১৩ হাজার ৪৫ জন ও নয়াপাড়ায় ১৮ হাজার ৭১৪ জন। এদের ভাগ্যে কি ঘটে তা বলতে পারছে না কেউ। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন এসব রোহিঙ্গারা।
এ প্রসঙ্গে নয়াপাড়া ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তার প্রশ্ন শেষ হয়ে গেলেই দেশে চলে যাবো। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। তবে শরণার্থী জীবন ভাসমান জীবন, এভাবে যেন কেউ বেঁচে না থাকে তার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এ নেতা।
এ প্রসংগে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মুখপাত্র জানান, দু’দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হতে পারে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালের দিকে একটি কর্মকৌশল ঠিক করেছে। সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। হয়তো সে অনুযায়ী এগোচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা বিষয় নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। আমাদের যে ঐতিহাসিক ভিত্তি, ঐতিহাসিক সম্পর্ক সেসব বিষয়গুলো নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’
Posted ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Chy