এম.এ আজিজ রাসেল(২৫ জুলাই) :: কক্সবাজার শহরের লাইট হাউস ও রামুর চেইন্দাতে পাহাড় ধসে ৪ জন নিহত হওয়ার পর পাহাড়ধসে আরও প্রাণহানির আশঙ্কায় জেলায় বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার থেকে পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বাস করা মানুষদেরকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বিশেষ অভিযান ও তৎপরতা শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। পাহাড়ে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার জন্য দুটি টিম গঠন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একেএম লুৎফর রহমান এর নেতৃত্বে ১টি ও অপর একটি টিম নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইয়েমা হাসান এর নেতৃত্বে গঠন করা হয়। টিম গুলোকে সাবির্ক সহযোগিতা করছে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ (ভারপ্রাপ্ত) পংকজ বড়ুয়ার। জনসাধারণকে সতর্ক করতে জেলাব্যাপী প্রশাসন ও পৌরসভার উদ্যোগে চলছে ব্যাপক মাইকিং।
মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের নির্দেশে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের পৌরসভার ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড খাজা মঞ্জিল এলাকা, বৈদ্য ঘোনা, মোহাজের পাড়া, কবরস্থান পাড়া, থেকে ৩০০ জন, লাইটহাউজ পাড়ার পাহাড়ের ঢালু এবং পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত ২০০ লোকসহ মোট ৫০০জন সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম মজুমদার জানান, জেলায় পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বাসকারীদের তালিকা তৈরি করে ৫ হাজার পরিবারকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে ৬০০ পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আরও অনেক পরিবারকে অন্যত্র সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এর আগে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক পাহাড় ধসে নিহত ও আহতসহ দুর্ঘটনারস্থান পরির্দশ করেন। পরে তিনি পাহাড় থেকে সরিয়ে আনা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া মানুষের সাথে দেখা করেন। এসময় তিনি কাউকে আতংকিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
তিনি আরও জানান,টানা বর্ষণে জেলায় পাহাড়ধসে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কায় লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে লোকজন সরিয়ে নিতে কোথাও কোথাও অভিযানও চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে করা হচ্ছে মাইকিং।
তিনি অভিযোগ করেন,পাহাড়ধসে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কায় লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হলেও তারা সাড়া দেন না। এ অবস্থায় প্রবল বর্ষণের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করতে কর্মকর্তাদেরও ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে।
সরেজমিনে পাহাড়তলী, বৈদ্যরঘোনা ও কলাতলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রবল ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। টানা এই বৃষ্টিতে কেউ কেউ পাহাড়ও কাটছে। ফলে পাহাড়ধসে মাটি নেমে এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে শহরের নালা-নর্দমা। বৈদ্যরঘোনায় পাহাড়ের চূড়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা জাফর আলম।
তিনি বলেন, ‘থাকার জায়গা নেই, তাই ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়েই বাস করছি।’ পাশেই আরেকটি ঝুপড়ি ঘর তুলে বাস করছেন মহেশখালীর শাপলাপুর থেকে আসা নজির আহমদ। এতো ঝুঁকি নিয়ে কেন পাহাড়ে বসবাস করছেন জানতে চাইলে তার উত্তর, ‘আল্লাহ ভরসা, যা হয় হবে।’
তবে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলী কবির জানান, জনবল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাবে তারা অসহায়। নিরাপত্তার জন্য প্রচার চালানো হলেও কেউ আমলে নিচ্ছে না। বনভূমি অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেও এদের নিভৃত করা যাচ্ছে না।
এদিকে, টেকনাফ উপজেলা সদর, হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও বাহারছড়া এলাকায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর পাহাড় রয়েছে অবৈধ দখলে। এসব পাহাড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ বসতি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন সিদ্দিক জানান, টানা বর্ষণের ফলে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হচ্ছে। কিন্তু কেউ সাড়া দিচ্ছে না। এতে বাধ্য হয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় বন বিভাগের পাহাড়ে ঘর তুলে বাস করছে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা। তাদের অধিকাংশ রয়েছে প্রবল ঝুঁকির মধ্যে।
Posted ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৬ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Chy