কক্সবাংলা রিপোর্ট :: কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দফায় নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার ভাসানচরে নিয়ে যেতে ৩৫টি বাসের বহর উখিয়া থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টায় উখিয়া ডিগ্রী কলেজ মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ১ হাজার ৭৮০জন রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার-টেকনাফ ও কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে বাসযোগে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হয়।
শুক্রবার সকালে আরো প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যেতে উখিয়া থেকে চট্টগ্রামে নেওয়া হবে। স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহীর সংখ্যা বাড়ায় রোহিঙ্গাদের দুই দিনে পাঠানো হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে করে তাদের ভাসানচরে পাঠানো হবে।
রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেওয়ার জন্য রাখা হয়েছে ২৫ থেকে ৩০টি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। রোহিঙ্গাদের বসার (বিশ্রাম) জন্য বিশাল একটি প্যান্ডেল তৈরির পাশাপাশি চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশেই চলছে গরু জবাই করে রোহিঙ্গাদের খাবারের বিশাল আয়োজন। পুরো এলাকাজুড়ে আছে পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কড়া নিরাপত্তা।
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামসুদ্দৌজা বলেন, ‘আজ ও আগামীকাল দুই দিনে স্বেচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয় শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সড়ক পথে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের আজ চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নৌ-বাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাখা হবে। শুক্রবার তাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে।’
স্থানীয় অধিবাসী ও রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টরা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় উখিয়া উপজেলার বালুখালী এলাকায় অবস্থিত আটটি রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির থেকে বেশ কিছু রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুকে অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্প উখিয়া ডিগ্রী কলেজ মাঠে নিয়ে আসা হয়। স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের ৩৫টি মিনিবাস যোগে শিবির থেকে এনে ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়। তাদের মালামাল আনা হয় ডাম্পার ট্রাকযোগে। ট্রানজিট পয়েন্টে বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে তাদের তৈরি খাবার দেওয়া হয়। এরপর তাদের করণীয় বিষয়ে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিয়ে বাসে ওঠানো হয়।
স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক জামালদা বেগম, মমিনা খাতুন, আসাব উদ্দিন ও আমির হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো নিরাপদ নয়। এখন প্রায় সময় অস্ত্রধারী রোহিঙ্গাদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গুলিবিনিময় ও হামলার ঘটনা ঘটছে। তাই কারও চাপে নয়, স্বেচ্ছায় তাঁরা ভাসানচরে যাচ্ছেন।
উখিয়ায় তানজিমারখোলা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আসা কবির আহমদ বলেন, ভাসানচরে উন্নত মানের শেড তৈরি করা হয়েছে। টয়লেটসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি হওয়ায় অধিকাংশ রোহিঙ্গাই এখন বাসায় চলে যেতে ইচ্ছুক।
ভাসানচরে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন রোহিঙ্গা নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও বখাটের উৎপাত বেড়েছে। খুনখারাবি, মুক্তিপণের জন্য অপহরণ, নারী ধর্ষণ ও ইয়াবার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে প্রায়ই মারামারির ঘটনা ঘটছে। গত মঙ্গলবারও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী দুটি দলের মধ্যে গোলাগুলিতে এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। সাধারণ রোহিঙ্গারা অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাই ঝুঁকি এড়াতে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
জানা যায়,গত বছরের ৪ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে প্রায় ৪০০ পরিবারের এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৪৩০ পরিবারের এক হাজার ৮০৪ জন রোহিঙ্গাকে নেওয়া হয় ভাসানচরে। তৃতীয় ধাপে এই দফায় দুই দিনে প্রায় ৬০০ পরিবারের তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হচ্ছে। ফলে নতুন এই দলটি নিয়ে সাগর দ্বীপটিতে রোহিঙ্গার মোট সংখ্যা হতে যাচ্ছে ৫ হাজার ৫২৬ জন। সরকারি হিসেব অনুযায়ী ভাসানচরে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের ব্যবস্থা করা আছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেওয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
Posted ৩:১৪ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Chy