কক্সবাংলা রিপোর্ট :: দ্বিতীয় দফায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া দেড় হাজারের বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে নেয়া হচ্ছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় তারা কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছেছে। মঙ্গলবার নৌবাহিনীর জাহাজে করে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হবে বলে সূত্রে জানা গেছে।
সোমবার কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথম দিকে দ্বিতীয় দফায় ৭০০ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের কথা ছিল। কিন্তু পরে দেখা গেছে, আরো অনেক রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক। এখন কক্সবাজার থেকে দেড় হাজারের বেশি(৪২৭ পরিবারের ১৭৭২ জন) রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তাদের নিয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ চট্টগ্রাম থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা করবে।
ভাসানচর প্রকল্পের (আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩) উপ-প্রকল্পের পরিচালক কমান্ডার এম আনোয়ারুল কবির জানান, মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দল ভাসানচরে পৌঁছাবে। আরআরআরসি কার্যালয় থেকে দুই হাজার জনের কথা বলা হয়েছে। আমরাও সেভাবে তাদের গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১২টায় উখিয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রথম বহরে ১৩টি বাস রওনা হয়। পরে রওনা হয় ১৭টি বাসের আরেকটি বহর। এরই প্রথম দফায় ৪ ডিসেম্বর এক হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক দশকে মিয়ানমারে দমন-নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছিল কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনের গ্রামে গ্রামে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ শুরু করলে বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। এ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদ্বাস্তু শিবির।
এদিকে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবির থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। যেখানে রয়েছে শিশুদের খেলার মাঠ, স্কুল, চিকিৎসা কেন্দ্র, দ্বীপে কর্মরত দেশী-বিদেশী সংস্থার লোকজনের জন্য থাকার আলাদা ভবনসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা।
এছাড়া জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৯ ফুট উঁচু বাঁধ এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণ করা হয়েছে ভাসানচরে।
এছাড়া কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের জন্য এক বছরের রসদ মজুদ করা হবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য নানা ধরনের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে দেশী-বিদেশী ২২টি সাহায্য সংস্থাকে যুক্ত করা হয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ স্থানান্তর বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
Posted ৩:২৪ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy