কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৭ জানুয়ারী) :: প্রায় ৭৩ বছর বয়েস পড়েছে কক্সবাজার বিমানবন্দর। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট নতুন করে রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কক্সবাজারে যাতায়াত বাড়িয়ে দেন। ২০১৮ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজে চড়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। ওই দিন তিনি এই বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে উদ্বোধন করেন।
কিন্তু সীমানা প্রাচীর অরক্ষিত থাকার কারণে এ বিমানবন্দরে বিমান উঠানামায় ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।
জানা গেছে,গত বুধবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে নভোএয়ারের ভিকিউ ৯৩১ ফ্লাইট নিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণের জন্য এগিয়ে আসছিল একটি এটিআর উড়োজাহাজ। হুট করে ৫-৬টি কুকুর ছোটাছুটি শুরু করে রানওয়েতে। এরমধ্যেই ৫টা ৩৪ মিনিটে উড়োজাহাজটি বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে কুকুরের উৎপাত প্রতিনিয়তই ঘটছে। এ অবস্থায় বিমানের অবতরণ নিয়ে আতঙ্কে থাকেন পাইলটরা।
সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে চলছে কক্সবাজার বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের কাজ। এ কারণে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা অনেকটাই শিথিল। কোথাও কোথাও নেই উচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টনী। এ সুযোগে বিমানবন্দরে বেড়েছে কুকুরসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর বিচরণ। বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের আশেপাশে এবং রানওয়েতে অবাধে ঘুরে বেড়ায় বেওয়ারিশ কুকুরের দল। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণীর বিচরণ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। গত দুই বছরে বিমানের চাকার নিচে কুকুর পিষ্ট হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ইতোমধ্যে দেশি এয়ারলাইন্সগুলো বন্যপ্রাণী ও পাখির বিচরণ প্রতিরোধে চিঠি দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে।
নভোএয়ারের চিফ অব সেফটি ক্যাপ্টেন আশফাকুর রহমান খান বলেন, ‘বিমান অবতরণের ক্ষেত্রে যে কোনও বস্তুর আঘাত ঝুঁকিপূর্ণ। সেটা কোনও পশু-পাখি কিংবা রানওয়েতে পড়ে থাকা কোনও বস্তুও হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে পাইলট আগে থেকে টের পেলে বিমান অবতরণ না করে নিরাপত্তার স্বার্থে ঘুরে যান।’
বর্তমানে দেশের তিনটি এয়ারলাইন্স কক্সবাজার বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। যাত্রী বেশি হওয়ায় ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়িয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার রুটে প্রতিদিন পাঁচটি থেকে বাড়িয়ে ছয়টি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ার।
গত ১০ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার রুটে চারটি ফ্লাইটের বদলে প্রতিদিন ছয়টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স। এর বাইরেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও কয়েকটি কার্গো এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
পাইলটরা জানিয়েছেন, আগে থেকে রানওয়েতে কোনও পশু বা অন্যকোনও বস্তু দেখা গেলে অবতরণ না করে ঘুরে আসা যায়। কিন্তু হুট করে রানওয়েতে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু চলে আসলে তখন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। অভ্যন্তরীণ রুটে ছোট ছোট উড়োজাহাজ চলাচল করে—এগুলোর উচ্চতাও কম। ফলে চলন্ত উড়োজাহাজের গায়ে কুকুর আঘাত হানতে পারে। রানওয়েতে কুকুরের অবাধ বিচরণের কারণে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। কয়েক বছর আগে কক্সবাজারে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজের নোজ গিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রানওয়েতে থাকা শিয়ালের কারণে। এজন্য নিারপদ বিমান চলাচলের জন্য এ ঝুঁকি দূর করা জরুরি।
নভোএয়ারের চিফ অব সেফটি ক্যাপ্টেন আশফাকুর রহমান খান বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পাখি ও বন্যপ্রাণীর বিচরণ সবচেয়ে বেশি। এ ধরনের ঝুঁকি দূর করতে আমরা সিভিল এভিয়েশনকে জানিয়েছি।’
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘বিমানবন্দরে কুকুরসহ বন্যপ্রাণীর বিচরণ প্রতিরোধের জন্য আমাদের নিজস্ব জনবলের পাশাপাশি কক্সবাজার পৌরসভা, বিমানবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এই বিমানবন্দরে সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এ কারণেই ফাঁকা জায়গা দিয়ে কখনও কখনও কুকুর প্রবেশ করে। আমরা এটি বন্ধের জন্য তৎপর রয়েছি।’
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কক্সবাজার-২ আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন,রানওয়ের ওপর দিয়ে লোক চলাচল, গরু, ছাগল ও কুকুরের বিচরণ বন্ধসহ সব অব্যবস্থাপনা দূর করা জরুরি। তা না হলে হঠাৎ দুর্ঘটনা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
Posted ৪:৪৯ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy