মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া :: ফিল্মি স্টাইলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের চকরিয়ায় যাত্রী বেশে উঠে সৌদিয়া পরিবহনের বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ৭-৮ জন সশস্ত্র ডাকাত প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়ক পথে চলন্ত বাসে যাত্রীদের জিন্মি করে সর্বস্ব লুট করে নিয়েছে।
এসময় বেশ কয়েকজন যাত্রী বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে ডাকাতরা এলোপাতাড়ি মারধর ও গুলি ছোড়ে। এসময় গুলিবিদ্ধ ২জন সহ ৯ জন আহত হয়েছেন।
২৭ নভেম্বর শুক্রবার ভোর রাত সাড়ে তিনটা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ঘন্টাব্যাপী চলন্ত বাসে ডাকাতির এ ঘটনাটি সংগঠিত হয়। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ আবদুল্লাহ আল মামুন (২৭) কে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ অপরজনসহ মারধর ও ছুরিকাগাতে আহতরা কক্সবাজারের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চলে যাওয়ায় নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। মামুন টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের পানছড়ি গ্রামের এজাহার আহমদের ছেলে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে থানায় আনা হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস থেকে ৩৩ যাত্রী নিয়ে সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাস (চট্টমেট্রো-ব-১১-১১২৫) টেকনাপফের উদ্যোশে যাত্রা শুরু করে। পরে কর্ণফুলি নতুন ব্রীজ এলাকা থেকে লুঙ্গি পরিহিত ব্যাগ নিয়ে আরও ৭ যাত্রী বাসে উঠে।
সৌদিয়া পরিবহণের ওইবাসটি রাত সাড়ে তিনটার দিকে মহাসড়কের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ঢালায় পৌছলে ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে চালককে জিন্মি করে চালকের আসনে বসে এক ডাকাত গাড়ি চালাতে থাকে। অপর ডাকাতরা চলন্ত বাসে দেশীয় বন্দুক ও চাপাতি ও ছোরার ভয় দেখিয়ে সব যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল ও নগদ টাকা কেড়ে নেয়।
বাসটি খুটাখালী ইউনিয়নের বহলতলী এলাকায় বাসটি থামিয়ে ডাকাত দল পালিয়ে যায়। পরে বাসটির চালক বাসটি চালিয়ে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আহতদের ভর্তি করেন। এসময় গুলিবিদ্ধ দুইজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
চট্টগ্রামের বিল্লাল হোসেন জনি নামের এক যাত্রী জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উদ্যেশ্যে ৬ বন্ধু মিলে চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস থেকে টেকনাফগামী সৌদিয়া পরিবহণের একটি বাসে উঠে।
রাত সাড়ে তিনটার দিকে মহাসড়কের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী এলাকায় পৌঁছলে যাত্রীবেশে ডাকাত দল আমাদের সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিন্মি করে মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
এসময় বাধা দেয়ায় দুই যাত্রীকে গুলি করে ডাকাত দল। সবাইকে কম বেশী মারধরও করে তারা। এসময় ডাকাত দল নগদ টাকা মোবাইলসহ আনুমানিক ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে তিনি দাবী করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রায় সময় বাস ডাকাতির ঘটনা ঘটতে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় গত কয়েক বছর ধরে বাসে ডাকাতির ঘটনা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পূর্বেকার স্টাইলে বাস ডাকাতির ঘটনা শুরু হয়েছে।
স্থানীয়দের ধারণা, মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের ঘটনার পর জেলা পুলিশের ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। পুলিশের পুরাতন সব কর্মকর্তাকে বদলি করে দেশের বিভিন্ন রেঞ্জ থেকে পুলিশের কনস্টেবল থেকে শুরু করে এসপি পর্যন্ত রদবদল করা হয়েছে। সে সুযোগে ডাকাতরা আবারও পুরোনো পেশা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতা আগের মতো বাড়ালে ডাকাতির ঘটনার আর ঘটবেনা।
চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো.আশরাফ হোসেন গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ডাকাত কবলিত বেশ কয়েকজন যাত্রী থানায় এসে ঘটনাটি জানিয়েছে। যাত্রীদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, এঘটনায় প্রকৃত কারণ জানতে ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে পাশাপাশি সোর্সরাও মাঠে রয়েছে।
Posted ২:১৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy