হেলাল উদ্দিন, টেকনাফ :: মিয়ানমার সেনাদের হাতে গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ইয়াবা ব্যবসা, মানব পাচার, হুন্ডি ও অস্ত্র মজুদ প্রতিযোগিতায় উঠেপড়ে লেগেছে।
অস্ত্রসহ সব ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে একাধিক ব্যক্তি আটক হলেও কমছে না এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড। অভিযোগ উঠেছে বেশ কিছু সংখ্যক ক্যাম্পের ‘মাস্টার’ ও ‘মাঝিরা’ বঙ্গোপসাগর দিয়ে চোরাই পথে মালয়েশিয়ায়সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে মানব পাচার, ইয়াবা ব্যবসা, হুন্ডি ও অস্ত্র ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। সেই সঙ্গে ক্যাম্পে আধিপত্য বজায় রাখতে গড়ে তুলছে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ।
সূত্রমতে জানা গেছে, ইয়াবা, অস্ত্র ও টাকাসহ গ্রেফতার হয়ে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা রয়েছে পুলিশ হেফাজতে। ইয়াবার বিনিময়ে ক্যাম্পে অস্ত্র নিতে গিয়ে যেমন তারা গ্রেফতার হয়েছে, তেমনই ইয়াবা বিক্রির কোটি কোটি টাকাসহ গ্রেফতার হয়েছে রোহিঙ্গা দম্পতি। আর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসছে ক্যাম্পভিত্তিক রোহিঙ্গা নেতাদের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সূত্র জানায়, অস্ত্র এবং ইয়াবা পরিবহনে রাজি না হলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। এ অবস্থায় হেড মাঝি ও সহকারী মাঝিদের নজরদারির মধ্যে আনার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ লক্ষ্যে তাদের তালিকা সংগ্রহ করেছে পুলিশ প্রশাসন। সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে রোহিঙ্গা নেতারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই অস্ত্রের সন্ধানে তারা এখন বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকামুখী হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইয়াবার বিনিময়ে চলছে অস্ত্র লেনদেন। মাস্টার ও মাঝিরা ইয়াবা বিক্রি করে বিত্তবান হচ্ছে। নিজেদের প্রভাব আরও বাড়ানোর জন্য তারা অস্ত্র সংগ্রহ করছে।
রিমান্ডে থাকা সাধারণ রোহিঙ্গারা দাবি করেছে, ক্যাম্পগুলোয় এখন চলছে মাস্টার, মাঝি এবং সহকারী মাঝিদের ত্রাসের রাজত্ব। অস্ত্র ও ইয়াবা পরিবহনে রাজি না হলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের অপহরণ করা হচ্ছে। হত্যার পর লাশও গুম করছে প্রভাবশালী রোহিঙ্গা নেতারা। শুধু টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের ৭ জন মাস্টার ও মাঝির নাম পেয়েছে পুলিশ। এরা সরাসরি অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
মূলত ক্যাম্পগুলোয় প্রশাসনিক দায়িত্বের সুবিধার্থে রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকেই এসব মাঝি, সহকারী মাঝিদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রয়েছে মাস্টার। অপেক্ষাকৃত লেখাপড়া জানা রোহিঙ্গারাই এ পদে নিয়োগ পান। পুলিশ ও র্যাবের পৃথক অভিযানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত গ্রেফতার হচ্ছে।
টেকনাফ রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, রোহিঙ্গারা কী পরিমাণ অপরাধ করছে, তা ভাষায় বলা যাবে না। কারণ তারা বহুমাত্রিক অপরাধী। তারা যেমন ইয়াবা ব্যবসা করছে, তেমনই মানব পাচার ও হুন্ডি ব্যবসা করছে। পাশাপাশি বর্তমানে অস্ত্র মজুদের মহোৎসব চালাচ্ছে। এতে দিন দিন টেকনাফ উখিয়ার জনসাধারণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যত দ্রুত এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের প্রত্যাবাসন করা যায়, দেশের জন্য ততই বেশি মঙ্গল হবে বলে তিনি জানান।
এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিবুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি ইয়াবা ব্যবসা ও অপরাধ দমনে গডফাদারদের নজরধারিতে আনা হচ্ছে। বলা যায়, অপরাধ করে কোনো অপরাধী রেহাই পাবে না বলে তিনি জানিয়েছেন।
Posted ১:৩৮ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy