কক্সবাংলা রিপোর্ট(২০ নভেম্বর) :: আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে (কক্সবাজার-৪ উখিয়া-টেকনাফ আসনে আবদুর রহমান বদির বদলে নৌকা দেয়া হচ্ছে তার স্ত্রী শাহীন চৌধুরীকে। এটি নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।আর এর মাধ্যমে উখিয়া-টেকনাফে জয়ী হল বদি লীগের।অার বদিও প্রমান করলেন তার পরিবার ছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগের কোন অস্তিত্বই নেই।তিনিই জয়-পরাজয়ের মূল কারিগর।তাকে ছাড়া লীগ এখানে অচল।
তাই একপ্রকার শোচনীয় পরাজয়ই হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। এমনটাই মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল ও মনেনয়ন প্রত্যাশীরা। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে বদির বিকল্প হিসেবে এক ডজন প্রার্থী মাঠে থাকলেও দল তাদের উপর ভরসা না করায় অনেকটাই হতাশ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।তাদের দাবী বিগত ১০ বছরে বদির প্রভাবের বাইরে গিয়ে আওয়ামীলীগের একজন নেতা তৈরী করতে না পারাটা বদি লীগের কাছে একধরনের পরাজয়ই।
প্রসঙ্গত গত ১০ জুলাই এক সভায় এমপি বদি বলেন “তিনি উখিয়ার ওয়ান পারসেন্ট আওয়ামী লীগারদের ভোট চান না। এই ওয়ান পারসেন্ট ভোট না নিলে তিনি উল্টো পাবেন বিএনপি-জামায়াতের আরো টুয়েন্টি পারসেন্ট ভোট। এমনকি এমপি বদি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেনাবেচা হয়।”
ত্যাগী নেতাদের অভিযোগ উখিয়া টেকনাফে এমপি বদি দীর্ঘদিন দলে বিবেদ সৃষ্টি করে আওয়ামীলীগের বাইরে গিয়ে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিয়ে ”বদি লীগ” সৃষ্টি করেছেন।যার প্রমান সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনের জন্য বদির পরিবারের কাছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড’র অসহায় আত্বসমর্পন।
জানা যায়,দেশকে অস্থির করে রাখা ইয়াবার কারবারে বদির নাম এসেছে বারবার। গোয়েন্দাদের একাধিক তালিকাতেও তাকে গডফাদার বলা হয়েছে। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দুই মেয়াদের এমপি আবদুর রহমান বদি। নানা অভিযোগে তিনি দেশব্যাপী সমালোচিত। মাদক ব্যবসায়ীদের গডফাদার হিসেবে তালিকার শীর্ষে রয়েছে তার নাম। অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জন এবং কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে এরই মধ্যে এ সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দীর্ঘ সময় জেলেও ছিলেন তিনি। তার হাতে প্রহূত হয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা, আইনজীবী, শিক্ষক, প্রকৌশলীসহ অনেকে। বিতর্কিত এই সাংসদ প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন এবারও। কিন্তু নিজের মনোনয়নের ব্যাপারে রয়েছেন অনিশ্চয়তায়। তাই প্রথম স্ত্রী শাহীন চৌধুরীকে দিয়েও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন।
এ খবরে বদির বিরোধী শিবির বিএনপির নেতাকর্মীরা আনন্দ প্রকাশ করেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বদির প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক সাংসদ টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মাদকের শীর্ষ গডফাদার হিসেবে খ্যাত সাংসদ বদি দেশব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত। তার প্রতি দলের নেতাকর্মীদের আস্থা ও সমর্থন নেই। তার স্ত্রীকে না দিয়ে ত্যাগী কোনো নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে এ আসনে আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত।’
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, ‘উখিয়া ও টেকনাফ আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকর্মী সাংসদ বদির বিরুদ্ধে অবস্থান করছে। এ অবস্থায় তাকে অথবা তার স্ত্রীকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হলে দলীয় নেতাকর্মীরা হতাশ হবেন। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এর প্রভাব পড়বে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, বিতর্কিত কোনো সাংসদকে এবার মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে অতীতের বিতর্কগুলো মুছে ফেলার চেষ্টা করা হবে। সেই বিবেচনায় সাংসদ বদির আসনে তার স্ত্রী শাহীন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাকে মনোনয়ন দিলে এলাকায় বদির জনপ্রিয়তা স্ত্রীর ঝুলিতে যোগ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে এমপি বদির সমর্থকরা এ খবরকে ভালোভাবে নিতে পারছেন না। তার একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ বলেন, ‘বদিকে প্রার্থী করা হলে এ আসনে নিশ্চিতভাবে আওয়ামী লীগের জয় হতো।’
এদিকে শাহীন চৌধুরীকে নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল দেখা দিয়েছে ভোটারদের মধ্যে। তিনি এর আগে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। একজন গৃহবধূ হয়েও এমপি নির্বাচনে অংশ নেবেন, তাই অনেকে জানতে চাইছেন তার অতীত ইতিহাস।
শাহীন চৌধুরী সাধারণ গৃহবধূর জীবনযাপন করলেও তিনি একটি রাজনৈতিক পরিবারের কন্যা। তার বাবা নুরুল ইসলাম চৌধুরী ঠাণ্ডা মিয়া ছিলেন উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। তার বড় ভাই হুমায়ুন কবির চৌধুরী কক্সবাজার জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য। ছোট ভাই জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। চাচা হামিদুল হক চৌধুরী উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়া সম্পর্কে শাহীন চৌধুরী বলেন, ‘দল থেকে এখনও মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়নি। আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে নৌকার মনোনয়ন দেন, তাহলে নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য যা করার সব করব।’
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবদুর রহমান বদির দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম সাবেকুন্নেছা সাকি। তার পিতার নাম হাফেজ আহমেদ চৌধুরী। ধনাঢ্য এই ব্যক্তিকে এলাকার মানুষ জমিদার হিসেবেই চেনেন। সাবেকুন্নেছা সাকি কক্সবাজার সদরে থাকেন। তিনি কক্সবাজার-৩ আসনের ভোটার। স্বামী বদির সঙ্গে তার সম্পর্ক তেমন একটা ভালো নয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাও তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনায় শাসক দল আওয়ামী লীগ বরাবরই বিব্রত ছিল। এমনকি সাম্প্রতিক মাদকবিরোধী অভিযানের সময় তাকে হজের নামে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয় সরকার। বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও এবারের নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য হাই কমান্ডের কাছে সুপারিশ করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বদির বদলে তার স্ত্রী শাহীনাকে কক্সবাজার-৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। শাহীনা আক্তার চৌধুরী কক্সবাজারের এই আসন থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাচ্ছেন এমন খবরে বদির অনুসারীরা এলাকায় আনন্দ মিছিল করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
Posted ৩:১০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২১ নভেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Chy