কক্সবাংলা ডটকম(২৯ মার্চ) :: নভেল করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় বিপর্যস্ত সারা দুনিয়া। তবে এ ভাইরাস সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি টালমাটাল অবস্থায় আছে ইতালি। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। মৃত্যুর দিক থেকে এখন বাকিগুলোকে ছাড়িয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে ইউরোপের এই দেশটি। হাসপাতালগুলোতে এখনো রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। গোটা দেশ লকডাউন হয়ে থাকলেও করোনার প্রকোপ কমছে না একটুও। দেশটিতে করোনায় মৃতের হার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বিশেষজ্ঞরাও। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাকিদের চেয়ে ইতালিতে মৃত্যুর হার এত বেশি কেন?
ইতালিতে গতকাল দুপুর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের অধিক। যা বাকি দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। ইতালিয়ান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের সভাপতি প্রফেসর ওয়াল্টার রিকিয়ার্ডির মতে, জনমিতি ইতালির মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ। বয়স্ক লোকদের দেশ হিসেবে বিশ্বে ইতালির অবস্থান দ্বিতীয়। জাপানের পরই তাদের অবস্থান। যাকে ধরা হচ্ছে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ।
প্রফেসর রিকিয়ার্ডি বলেন, হাসপাতালে যেসব রোগী আছেন তাদের বেশির ভাগই যথেষ্ট বয়স্ক। যাদের গড় বয়স ৬৭ বছর, চীনে যা ছিল ৪৬। বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণেই করোনা ইতালিতে অধিক প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন তিনি।
গত সপ্তাহে এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইতালিতে আক্রান্তের ৪০ শতাংশ এবং মৃতের ৮৭ শতাংশই হচ্ছে ৭০ বছরের বেশি বয়স্ক লোক। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্ক লোকদের যারা আক্রান্ত তাদের হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যসেবায় অতিমাত্রায় চাপ সৃষ্টি করছে।
পাশাপাশি মৃত্যুহার বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে রিকিয়ার্ডি আরো একটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। তার মতে, হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কেবল করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে বলে ধরে নিচ্ছেন ডাক্তাররা। যেখানে ডেথ সার্টিফিকেট অনুসারে কেবল ১২ শতাংশ লোকের মৃত্যুর জন্য সরাসরি করোনাভাইরাস দায়ী। বাকি ৮৮ শতাংশের ন্যূনতম একটি ভিন্ন রোগের ইতিহাস রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দুই বা তিনটিও আছে।
অবশ্য এর মানে এই নয় যে কভিড-১৯ রোগীর মৃত্যুতে কোনো ভূমিকা রাখছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের ত্রুটিও দেশটির মৃত্যুহার বাড়ার কারণ হতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ইতালির নিশ্চিত আক্রান্তের যে সংখ্যা, তার সর্বমোট আক্রান্তের ব্যাপারে সুনিশ্চিত কোনো চিত্র তুলে ধরতে পারছে না।
লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ইউরোপিয়ান পাবলিক হেলথের প্রফেসর মার্টিন ম্যাককি বলেন, দেশটি এখন পর্যন্ত মৃদু লক্ষণসম্পন্ন কতজন লোক আছে তার কোনো ধারণা দিতে পারেনি।
যদি পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতে আরো এমন রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হয় যাদের কোনো লক্ষণ ধরা পড়েনি কিন্তু আক্রান্ত, তবে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণবিহীন করোনা আক্রান্ত রোগীরাই অন্য রোগীদের মৃত্যুর পরোক্ষ কারণ হতে পারেন। তবে এখন পর্যন্ত ঠিক কতজন এমন মৃদু লক্ষণ বা লক্ষণবিহীন রোগী করোনা ছড়িয়ে যাচ্ছেন, তা নিয়েও কোনো সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি। আর এ কারণে ইউরোপ নিয়ে এখন পর্যন্ত তুলনায় আসার সময় হয়নি বলেও মনে করেন তিনি।
ইতালিতে মৃত্যুহার বেশি হওয়ার পেছনে আরো কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যাদের মাঝে ধূমপান ও দূষণ উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে লম্বার্ডি এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুকে প্রভাবিত করছে অঞ্চলটির ভয়াবহ বায়ুদূষণ। এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর আধিক্যের কারণে ইতালি স্বাস্থ্য খাতও এখন বিপর্যয়ের মুখে। যার ফলে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতেও তাদের বেশ সমস্যা হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডাক্তারদের একসঙ্গে ১২০০ রোগীর সেবা দিতে হচ্ছে।
রোগীদের এ চাপের ফলে সবচেয়ে খারাপ যে বিষয়টি হচ্ছে তা হলো স্বাস্থ্যকর্মীরাও আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন এবং তাদেরও দ্রুত আইসোলেটেড করে ফেলতে হচ্ছে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত এ সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
প্রফেসর ম্যাককি ইতালিতে ভয়াবহ অবস্থার জন্য যে তিনটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন তার মাঝে স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টিও আছে।
দ্য টেলিগ্রাফ
Posted ৩:১৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ৩০ মার্চ ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy