সংবাদ বিজ্ঞপ্তি(২৩ জুন) :: বর্ষার শুরুতেই কক্সবাজারের মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো সরকারের সঙ্গে কোভিড১৯ সাড়াদানের অংশ হিসাবে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বর্ষার প্রস্তুতি সংক্রান্ত কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে। কোভিড১৯ মহামারীর মধ্যে গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ও আশেপাশের এলাকার সুপেয় পানির উৎসকে দূষিত করার পাশাপাশি পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আইএসসিজি-র অংশীদার অর্থাৎ জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ ও এনজিওগুলো- কমিউনিটি-ভিত্তিক সংগঠন ও প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীকে সঙ্গে নিয়ে বর্ষার প্রস্তুতি ও সাড়াদানে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বর্ষায় বিশেষ করে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলির অনিশ্চয়তা আরো বাড়িয়ে তুলবে ভেবে উদ্বিগ্ন মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো। যেখানে প্রায় আট লক্ষ চল্লিশ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রসমূহে বসবাস করছেন, যার অনেকগুলি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় অবস্থিত।
আইএসআইজি-র সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর নিকোল এপটিং বলেন- ”সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টিপাতের সাড়াদানে মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো কাজ করছে। প্রকৌশলী, শ্রমিকসহ প্রত্যেকেই কোভিড১৯ পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সবধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন।
রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি পরিবারের চিকিৎসাসহ অন্যান্য জরুরি পরিষেবাগুলি অব্যহত রাখার পাশাপাশি ক্যাম্প ও আশেপাশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা, কালভার্ট ও সেতু মেরামতের কাজ করে চলেছেন বিগত বছরগুলিতে বর্ষার সমন্বিত প্রস্তুতিমূলক কার্যকমের উপর ভিত্তি করে মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো আশ্রয়, নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও রাস্তাঘাটের অবকাঠামোগত উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছিল যা ক্যাম্প ও আশেপাশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর এলাকার ভূমিধ্বস ও জলাবদ্ধতা কমিয়ে আনতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অতিবৃষ্টি সাধারনত জুন মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চলমান থাকে।
এই বছর ক্যাম্পগুলিতে কোভিড১৯ এর প্রাদুর্ভাবের কারণে বর্ষার প্রস্তুতি বিষয়ক কার্যক্রম বাস্তবায়নে,মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ক্যাম্পগুলিতে মানবিক সহায়তা প্রদানকারী কর্মীদের উপস্থিতি কমে আসা এবং শুধুমাত্র জরুরি ও জীবন-রক্ষামূলক পরিষেবাগুলো চলমান থাকায় সাইট উন্নয়ন ও সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলোর বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীরা ফার্স্ট রেসপন্ডার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে, আমাদের জরুরি প্রস্তুতি ও সাড়াদান, প্রাথমিক চিকিৎসা, উদ্ধার ও অনুসন্ধান, এবং প্রাথমিক সতর্কবার্তা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ক্যাম্পের ভেতরে এবং বাইরে অবস্থানরত লোকজনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা জোয়ার-ভাটা ও পানির স্তর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করি।” বলছিলেন টেকনাফের আবু রায়হান নামের একজন বাংলাদেশী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা স্বেচ্ছাসেবক।
কোভিড১৯ মহামারীতে, রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী উভয়ের জন্যই পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিনের (ওয়াশ) ব্যবস্থা বেশি প্রয়োজন। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে তা আরো চ্যালেঞ্জিং হয়ে পরে। সুপেয় পানির উৎসের দূষণ কমাতে মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো বড় ধরনের ওয়াশ অবকাঠামো, ল্যাট্রিন জীবানুমুক্তকরণ, সাবান সরবরাহ ও শরণার্থী ক্যাম্পে স্থাপিত বৃহত্তম মানব-বর্জ্য পরিশোধানাগারের রক্ষনাবেক্ষণ করছে।
জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং এনজিওগুলো কক্সবাজার, উখিয়া, টেকনাফের গুদামগুলিতে খাদ্য, তারপলিন, দড়ি, ফ্লোর ম্যাট ও পানি পরিশোধন ট্যাবলেটসহ জরুরি উপকরণগুলোর পর্যাপ্ত মজুদ রেখেছে। এতে করে ক্যাম্পের বেশি ক্ষতিগ্রস্থ রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং প্রয়োজন সাপেক্ষে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে দ্রুত প্রয়োজনীয় সেবা পৌছে যাবে। সামাজিক দূরত্বের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিতরণ পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং জরুরি সাড়াদানের সময় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলির বাড়িতে যেয়ে সেবা পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
বর্ষার প্রস্তুতি ও সাড়াদানে মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর কাছে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমিয়ে মানুষের জীবন বাচানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আইএসসিজি-র অংশীদাররা বর্ষার মতো কঠিন সময়ে রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের সাড়াদানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত, পরিকল্পনার (জেআরপি) ২৮শতাংশ অর্থবরাদ্দ এসেছে।
Posted ২:১৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ জুন ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy