নজরুল ইসলাম, কুতুবদিয়া(২১ জানুয়ারি) :: কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের মগলাল পাড়া আশ্রায়ন প্রকল্পের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের উপকারভোগী ২ বাসিন্দাসহ স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন একই প্রকল্পের ৮ উপকারভোগী।
বিষয়টি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় এর প্রতিকার চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ভূমি মন্ত্রণালয়, গণপুর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পৃথক পৃথক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সূত্রে জানা যায়, বিগত ১৯৯৮ সালে কুতুবদিয়ার দশ ভূমিহীনকে উত্তর ধূরুং মৌজার ২১১০নং বি,এস খতিয়ানের ৯৯৬৪নং বি,এস দাগের ১৯ শতক জমি ( যার দলিল নং-৮৭, সৃজিত খতিয়ান নং-৩৪১৫) একই ইউনিয়নের মগলাল পাড়া আশ্রায়ন প্রকল্পের অধিনে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। উক্ত প্রকল্পের অধিনে জমি প্রাপ্ত দশ ভূমিহীন হলেন, জাফর আলম, কবির আহমদ, রফিক আহমদ, বদিউল আলম, নুরুল হুদা, নাজেম উদ্দিন, আহমদ কবির, আবদুল খালেক ও নুর মোহাম্মদ।
অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পের উপকারভোগী আবদুল খালেক ও নুর মোহাম্মদ জোর করে অতিরিক্ত জমি জবর দখল করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। আশ্রায়ন প্রকল্পের পূর্ব-পশ্চিমে ১২৬ ফুট এবং উত্তর-দক্ষিণে ৬৬ফুট জায়গার মধ্যে প্রতিজন ১২.৬ ফুট জমি সমহারে প্রাপ্য। তারমধ্যে পূর্ব পাশে ৩০ ফুটের একটি গর্ত করে সেখান থেকে মাটি তুলে প্রকল্পের জমি ভরাট করা হয়। ভরাটকৃত জমি ১০টি প্লটে ভাগ করে নির্মিত ঘর ১০ সদস্যকে হস্তান্তর করে সরকার।
পরে ৩০ ফুটের গর্তটি সম্মিলিতভাবে ভরাট করে ঘেরাবেড়া দিয়ে চাষোপযোগী জমিতে পরিনত করে। এসময় আবদুল খালেক ও নুর মোহাম্মদ কোন ধরনের সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ প্লটের অন্য আট সদ্যসের। অথচ আবদুল খালেক ও নুর মোহাম্মদ ২ প্লটের মালিক হলেও তারা দখল করে রেখেছে ৫ প্লটেরও বেশি জমি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্য সদস্যরা জানান, বিষয়টি নিয়ে বারবার বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ায় তার এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বহী অফিসার, সমবায় অফিসার, থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবরে আবেদন করেন। কিন্তু কোন ধরনের প্রতিকার না পাওয়ায় বিগত ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর পুনরায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন তারা। জেলা প্রশাসক অভিযোগটি ওই বছরের ৩ অক্টোবর স্মারক নং-১৩৪০/১৮ ইং মতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), রেভিনিও ডেপুটি কালেক্টর এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কক্সবাজার বরাবরে প্রেরণ করেন।
জেলা প্রশাসক একই বছরের ১০ অক্টোবর স্মারক নং- ০৫.২০.২২০০.১২৮.২০.০০৭.১৬.৪৫ মূলে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এবং সরেজমিনে তদন্ত করে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা কানুনগো (ভাঃপ্রাঃ) বরাবরে প্রেরণ করেন। কিন্তু তাতেও কোন সুরাহা না হলে গেল বছরের ৩ মার্চ সরকারি জমি অবৈধ দখল উন্মুক্ত করতে গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে অভিযোগ দেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই বছরের ৪ এপ্রিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের উপসচিব শ্যামল নবী স্মারক নং-২৫.০০.০০০০.০১৯.০৫.০১২.২০০১ (অংশ)-/১৮৫ মূলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরণ করেন।
ওই বছরের ২২ অক্টোবর সরকারি জমি অবৈধ জবর দখল হতে উন্মুক্ত করতে জাফর আলম ও নাজেম উদ্দিনসহ প্রকল্পের ৮ বাসিন্দা কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবরে একটি অভিযোগ (ডকেট নং-৬২৫) দায়ের করেন। এর ব্যবস্থা নিতে উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমিকে নির্দেশ দেন ইউএনও।
পরে প্রকল্পের জমি সমহারে বন্টনের জন্য ভুক্তভোগীলা গত ৩১ ডিসেম্বর কুতুবদিয়া কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবরে অভিযোগ (ডকেট নং-৬২৬) দেন। অভিযোগটি তাৎক্ষণিক তদন্তপূর্বক অবহিত করার জন্য সার্ভেয়ারকে নির্দেশ দেন তিনি।
এদিকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেয়ায় আবদুল খালেক ও নুর মোহাম্মদ আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে বলে জানান প্রকল্পের উপকারভোগী ভূমিহীন জাফর আলমসহ বাকি সদস্যরা। তারা অভিযোগ করেন আবদুল খালেক ও নুর মোহাম্মদ বাকি ৮ ভূমিহীন বাসিন্দার চলাচলের রাস্তা, নলকূপ ও পুকুর ব্যবহারে প্রতিনিয়ত বাধা প্রদান করছে। যার ফলে আশ্রায়ন প্রকল্পের ভূমিহীন বাসিন্দারা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এর পরও আশ্রায়ন প্রকল্পের অসহায় বাসিন্দাদের অন্যায়ভাবে হয়রানির লক্ষ্যে কুতুবদিয়া আদালতে একটি মিথ্যা মামলা (সি.আর৩৮১/১৯) দায়ের করেছে নুর মোহাম্মদ।
আশ্রায়ন প্রকল্পের বাসিন্দা ভূমিহীন জাফর আলম, কবির আহমদ ও রফিক আহমদ জানান,‘আবদুল খালেক ও নুর মোহাম্মদ গর্ত ভরাট ও ঘেরা বেড়ায় আমাদের কোন সহযেগিতা করেনি। আমরা ৮জন মিলে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করে গর্ত ভরাট করে চাষোপযোগি জমি করেছি। তারা ২টি প্লটের মালিক কিন্তু স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর সহায়তায় ৫টি প্লটেরও বেশি জমি দখলে করে রেখেছে।
এ বিষয়ে আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছি। এরপরও তারা বহাল তবিয়তে ওই জমি বেদখল করে আমাদের চলাচল রাস্তা, পুকুর ও নলকূপ ব্যবহার করতে দিচ্ছে না। তাদের অত্যাচার নির্যাতনে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায়ভাবে বেঁেচ আছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনের জোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি আমরা।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জানান, অভিযোগটি বর্তমানে তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Posted ১১:১৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy