নজরুল ইসলাম,কুতুবদিয়া(২৬ ফেব্রুয়ারী) :: বিগত আড়াই বছরের মধ্যে কোন ধরনের খুন-খারাবি হয়নি কুতুবদিয়ায়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রয়েছে শান্ত। থানায় কমেছে মামলাও। এ যেন বাংলাদেশের বুকে এক নতুন ইতিহাস। এমনই তথ্য পাওয়া গেছে কুতুবদিয়া থানা সূত্রে।
যে দ্বীপে খাস খতিয়ানের লবণ মাঠের জমি নিয়ে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে রক্তে রঞ্জিত হতো মাটি , যেখানে পান থেকে চুন খসলেই লেগে যায় দ্বন্দ্ব, ভিটার সীমানায় বাঁেশর ঘেরা একটু এদিক ওদিক হলেই বাপ-চাচার মারামারি থেকে মাথা ফাটাফাটি, সারা বছরই লেগে থাকে জায়গা-সম্পত্তির মামলা, গরু-ছাগল ক্ষেত-খামার খেলেই বিশ্রি গালিগালাজ দিয়ে শুরু হওয়া ঝগড়া শেষ হতো থানার গোলঘরে, সেখানে বিগত তিন বছরে থানায় মামলা কমে যাওয়া এবং কোন ধরনের খুন-খারাবির মত অপ্রত্যাশিত ঘটনা না হওয়া বিশাল একটি ব্যাপার বলে মনে করছেন দ্বীপের সচেতন মহল।
বিগত আড়াই বছর পূর্বে কুতুবদিয়ায় ঘটে যাওয়া নৃশংসতম হত্যাগুলো দ্বীপের মানুষকে এখনো নাড়া দেয়। হত্যাকান্ডগুলোর মধ্যে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল মগডেইল এলাকায় কুলের শিশুসহ এক নারী হত্যাকান্ড, একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর বড়ঘোপ মৌলভী পাড়ায় গৃহকর্তী কর্তৃক গৃহকর্মী হত্যা করে পুকুর পাড়ে পুঁতে ফেলা ও ২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর কৈয়ারবিল এলাকায় স্ত্রীর পরকিয়ার বলি হিসেবে বড়ঘোপ মাতবর পাড়ার বাবুল হত্যাকান্ড এবং ২০১১ সালের ২৫ জুন তাবালেচর এলাকায় লবণ মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে ছেলের হাতে পিতা খুন হওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। মাদক কারবারি ও জলদস্যুতার অভয়ারণ্য ছিল এই দ্বীপ উপকূল। মরণ নেশা ইয়াবার ছোবলে ধ্বংস হতে বসেছিল যুবসমাজ। দ্বীপের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছিল মাদক ব্যবসা ও সেবনকারীদের দৌরাত্ম! ঘটেছিল আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি! দিন দুপুরে রাস্তার দ্বারে বসে জুয়াড়িরা জুয়া খেলত, চোরি-চামারিতো ছিলই।
২০১৭ সালের ১৩ আগষ্ট ৩৫তম অফিসার হিসেবে যোগদান করেন কুতুবদিয়া থানায় যোগদান করে এমন এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সাহসিকতার সহিত কঠোর হস্তে দমন ও নিরন্তর পরিশ্রম করে কুতুবদিয়াকে শান্তির দ্বীপের পরিণত করেছেন কুতুবদিয়া থানার চৌকস ওসি মোহাম্মদ দিদারুল ফেরদাউস।
কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ দিদারুল ফেরদাউস বলেন,“আমি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর একজন অফিসার হিসেবে জাতিসংঘের দারফুর মিশন শেষ করে কুতুবদিয়া থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করি। ইতোপূর্বে পার্শ্ববর্তী দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী থানায় কর্মরত থাকার সুবাদে কুতুবদিয়া সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করি। ফলে কুতুবদিয়ায় যোগদানের পরপরই নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজস্ব পরিকল্পনায় অধীনস্থ কর্মকর্তাদের সাহসিকতাপূর্ণ অভিযানের মাধ্যমে দ্বীপের কুখ্যাত প্রায় সব বাঘা-বাঘা জলদস্যুদের আটক করতে সক্ষম হই। মাদক ব্যবসায়ীদেরও ছাড়িনি।
বাংলা মদের পুটলিসহ ধরে এনে হাজতে দিয়েছি মাদক ব্যবসায়ীদের। এতেই দ্বীপের পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। চলামান অভিযানে গ্রেফতার করেছি শতাধিক জলদস্যু ও মাদক ব্যবসায়ী। উদ্ধার করেছি বিপুল পরিমাণ অগ্নেয়াস্ত্র। পরবর্তীতে কয়েকজন চিহ্নিত জলদস্যু ও মাদক ব্যবসায়ী র্যাব ও পুলিশের সাথে বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হলে শান্ত হয়ে আসে দ্বীপের পরিবেশ।”
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্ত্রাসীরা দ্বীপ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
কুতুবদিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও কক্সবাজার জেলা আ’লীগের সদস্য প্রবীণ নেতা সফিউল আলম বলেন, “বিগত আড়াই বছর কুতুবদিয়ায় কোন ধরনের খুন-খারাবি হয়নি, বিষয়টি আনন্দের এবং সুখের। এতে বুঝা যায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মতৎপরতা বেড়েছে এবং আওয়ামীলীগ সরকার সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করছে। একসময় ডাকাতের উৎপাতে শান্তি ঘুমাতে পারেনি দ্বীপের সাধারণ জনগণ।” দ্বীপের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সংশ্লীষ্ট সকলের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
Posted ৯:৫১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy