নজরুল ইসলাম,কুতুবদিয়া(৯ জানুয়ারী) :: কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেট/কোচিংবাজ শিক্ষকরা বছরের শুরুতেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রাইভেটে টানতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন বলে অভিযোগ এলাকার সচেতন অভিভাবক মহলের। জানা যায়, এজন্য শিক্ষকরা বেছে নিয়েছেন মাল্টি ন্যাশনাল পদ্ধতি।
একজন শিক্ষার্থী পাঁচজনের অধিক শিক্ষার্থী জোগাড় করার মাধ্যমে টার্গেট পূরণ করতে পারলে তার টিউশন ফি. অর্ধেক কিংবা ঐ শিক্ষার্থী বিনা ফি.তে প্রাইভেট পড়তে পারবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সারাদেশের যাবতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট বাজিণ্য বন্ধ করতে নীতিমালা জারি করলেও তা মানছে না সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজের অনেক শিক্ষক। বিগত ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারী ” শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২” গেজেট প্রকাশ করে।
যাতে স্পষ্ট বলা হয়, কোন শিক্ষক নিজ বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থীকে অতিরিক্ত শ্রেণি কার্যক্রম ব্যতিত কোন কোচিং বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। প্রাইভেট পড়ালে বা কোচিং করালে ওই শিক্ষকের এমপিও স্থায়ীভাবে বন্ধসহ বরখাস্তের শাস্তির বিধান রয়েছে।
গেজেটে আরো বলা হয়, অতিরিক্ত শ্রেণি কার্যক্রমও নিজ বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে করতে হবে। তাও বিদ্যালয়ের নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রমের বাইরে। কিন্তু উপজেলার কিছু কোচিংবাজ শিক্ষক সরকারি এই নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে এখনো পুরোদমে দাপটের সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের অবৈধ কোচিং বাণিজ্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনের রুম ভাড়া নিয়ে প্রাইভেট/কোচিং বাণিজ্য চালাচ্ছেন শিক্ষকরা। এতে নিরুৎসাহিত করার পরিবর্তে এসব শিক্ষকদের অভয় বাণি শুনাচ্ছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা ।
ফলে যেমনিভাবে দরিদ্র অভিভাবকেরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন তেমনি বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকতাকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে নানা প্রলোভনে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রাইভেটে আকৃষ্ট করে লাখ লাখ টাকা কামাই করছেন বলে শিক্ষকরা শ্রেণি কার্যক্রমে আন্তরিক নন এবং সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে যাচ্ছেন, এমনই অভিযোগ সচেতন অভিভাবক মহলের।
কুতুবদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের অনেক সচেতন অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাগে মানসিক চাপ প্রয়োগ করে সংশ্লীষ্ট শিক্ষক। যে কারনে সদ্য প্রকাশিত জেএসসি পরীক্ষায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেনি।
উপজেলায় বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি ব্যাচে সর্বনিম্ন ৫০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত পড়াচ্ছেন একই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তবে কয়েকজন প্রাইমারির শিক্ষকও রয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে এসব কোচিংবাজ শিক্ষকরা দাবি করেছেন যে তারা কোচিং করান না, ব্যাচে পড়ান।
অনেকেই উল্লেখ্য করেন যে, উপজেলা সদরে অবস্থিত প্রায় সকল প্রাইভেট/কোচিং এ ভোরে আসা শিক্ষার্থীদের হৈ চৈ শুনে প্রতিবেশীদের ঘুম ভাঙ্গে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার কোচিংবাজ শিক্ষকরা শ্রেণি কার্যক্রমে ভালোভাবে পাঠদান না করে প্রাইভেট সেন্টারে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার প্রলোভনে ছাত্র/ছাত্রীদের নিজের গড়া প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারে পড়তে বাধ্য করছে। না পড়লে পরীক্ষায় অকৃতকার্য্য করানোর হুমকি দিচ্ছেন। যা মেনে নেয়া সভ্য সমাজে বেমানান।
এক প্রশ্নের জবাবে কুতুবদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরা নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতে পারেন না। তবে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সর্বাধিক দশজন শিক্ষার্থী পড়াতে পারেন। তাছাড়া তাঁর প্রতিষ্ঠানে নীতিমালা অনুযায়ী অভিভাবকদের আবেদন সাপেক্ষে অতিরিক্ত শ্রেণি কার্যক্রম চালু রয়েছে। কিন্তু এর বাইরে কোন শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে প্রাইভেট বা কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার জন্য ঐ শিক্ষকই দায়ি থাকবেন।
এ ব্যাপারে, উপজেলা শিক্ষা অফিসারা মোঃ রজব আলী বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২” বাস্তবায়নে দেশব্যাপি কাজ চলছে। কুতুবদিয়া উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এব্যাপারে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি আশা করছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা প্রকাশিত গেজেটের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে প্রাইভেট/কোচিং বাণিজ্য থেকে আপনা-আপনি সরে আসবেন এবং অভিভাবকরা সন্তানদের প্রাইভেটে উৎসাহিত না করে প্রতিষ্ঠানমুখী করবেন।
এ অবস্থা চলতে থাকলে একদিকে ব্যহত হবে শিক্ষা কার্যক্রম অন্যদিকে সরকারের নেয়া যুক্তিক পদক্ষেপগুলো প্রাইভেট/কোচিংবাজ শিক্ষকদের হাতে অংকুরে বিনষ্ট হবে। এ জন্য তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।
উপজেলার সচেতন অভিভাবকদের প্রত্যাশা, উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সজাগ হয়ে বছরের শুরুতেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে শিক্ষকদের প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্যের জিম্মি দশায় থাকা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ফিরে পাবে প্রকৃত শিক্ষার সুফল এবং গড়ে উঠবে সুনাগরিক।
Posted ৯:৫৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy