কক্সবাংলা ডটকম(৮ অক্টোবর) :: সরকার ঘোষিত লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা ছিল কৃষকদের জন্য। কিন্তু প্রণোদনা ঘোষণার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এ প্যাকেজের অর্ধেক ঋণও বিতরণ করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশ ঋণও বিতরণ করতে পারেনি এমন ব্যাংকের সংখ্যা ১৯। আবার কৃষকদের প্যাকেজের এক টাকাও বিতরণ করতে পারেনি এমন ব্যাংক রয়েছে পাঁচটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘কৃষি ঋণ’ বিভাগের প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে সবক’টি ব্যাংক মিলিয়ে কৃষকদের ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। সে হিসাবে এ প্যাকেজের বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় স্বল্প সুদের ঋণ পেয়েছেন ৭৮ হাজার ৫২৬ জন কৃষক।
লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশও ঋণ বিতরণ করতে পারেনি এমন ব্যাংকগুলো হলো প্রাইম ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। ৫ শতাংশের কম ঋণ বিতরণ করতে পেরেছে এমন ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (১.২২%), ট্রাস্ট ব্যাংক (১.৭৮%), ঢাকা ব্যাংক (২.৯৯%), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক (৩.৬৬%), যমুনা ব্যাংক (৩.৮৩%), বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক (৩.৬৪%) ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (৪.৬২%)।
লক্ষ্যমাত্রার ৫ থেকে ১০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পেরেছে এমন ব্যাংকগুলো হচ্ছে ইউনিয়ন ব্যাংক (৫.৪৮%), এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক (৫.৫০%), সাউথইস্ট ব্যাংক (৬.২৯%), ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (৬.৫১%), এবি ব্যাংক (৬.৭৫%), এনআরবি ব্যাংক (৭.৪৪%) এবং সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক (৮.৩৮%)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষি খাতের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে বরাবরই ব্যাংকাররা উদাসীন। বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও দেশের অর্ধেকের বেশি ব্যাংকের ঋণ বিতরণে কোনো অগ্রগতি নেই। যদিও বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ ছাড়ে এ ব্যাংকগুলোই রয়েছে সামনের সারিতে। ব্যাংকগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই কৃষি খাতের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেছাতে হয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাস সৃষ্ট অচলাবস্থার মধ্যেই ১৩ এপ্রিল চলতি মূলধনভিত্তিক কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এ প্যাকেজের আওতা নির্ধারণ করা হয় মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মত্স্য চাষ, পোলট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাত। প্যাকেজের আওতায় বিতরণকৃত ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হয় ৪ শতাংশ।
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বেশ ভালো সফলতাও দেখিয়েছে সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর শেষে কৃষকদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে শতভাগ সফলতা দেখিয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। ব্যাংকটির প্যাকেজের আওতায় কৃষকদের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১৯ কোটি টাকা। এরই মধ্যে রাকাব লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২ কোটি টাকা বেশি বা ৩২১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। মোট ৭ হাজার ২৯ জন কৃষককে ঋণ দিয়েছে ব্যাংকটি। কৃষকদের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে দ্বিতীয় স্থানে আছে রূপালী ব্যাংক। ব্যাংকটি ৪ হাজার ৪৮৩ জন গ্রাহককে ৪৫ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৮৬ দশমিক ৭২ শতাংশ।
প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকও। ব্যাংকটি লক্ষ্যমাত্রার ৭৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। মোট ৪৮ হাজার ৪৯৭ জন কৃষককে ৯৫৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংকটি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৮ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পেরেছে এক্সিম ব্যাংক। ব্যাংকটি ১৩০ জন গ্রাহককে ৯৯ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে।
একাধিক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী জানান, বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ঘোষিত প্যাকেজ বাস্তবায়নে জোর দিতে গিয়ে কৃষি, সিএসএমইসহ ছোটদের ঋণ বিতরণ পিছিয়ে পড়েছে। তাছাড়া উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বড় একটি অংশে বন্যা হওয়ায় কৃষিঋণের চাহিদা ছিল না। এজন্য চাইলেও অনেক ব্যাংক প্রত্যাশা অনুযায়ী গ্রাহক খুঁজে পায়নি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কৃষকদের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের সময়সীমা ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোয় ব্যাংকারদের জন্য সুবিধা হয়েছে। সামনে শীতকাল হওয়ায় ফুল, ফলসহ অন্যান্য খাতে ঋণ বিতরণ বাড়বে।
Posted ২:১৪ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৯ অক্টোবর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta