কক্সবাংলা ডটকম(৬ ডিসেম্বর) :: ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ তুঙ্গে থাকে। সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেই কী তার নাম, নামের অর্থই বা কী, কোন দস নাম করণ, তা জানার জন্য উৎসুক হয়ে ওঠেন অনেকেই। কিন্তু তাঁরা কি জানেন, কীভাবে নামকরণ হয় ঘূর্ণিঝড়ের, আর কারাই বা ঝড়ের নামকরণ করেন? এর জন্য একটা পর্যায়ক্রম তৈরি করা রয়েছে। তা জানলে আপনিও নিমেষে জানতে পারবেন পরবর্তী ঝড়ের নাম।
র্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয় কেন
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয় কেন? আবহবিদরা বলেন, বিশেষ কয়েকটি কারণেই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করার রেওয়াজ চালু হয়েছে। প্রথমত, প্রতিটি ঘূর্ণিঝড় পৃথকভাবে চিহ্নিত করা যায়। একসঙ্গে সমুদ্রে একাধিক ঝড় তৈরি হলে বোঝানো সহজ হয়। ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রগতি জানানোর সুবিধা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা পৌঁছে দেওয়ার সুবিধা হয়। আর সবথেকে বড় কারণ হল সহজে মনে রাখা যায়।
কারা নামকরণ করে ঘূর্ণিঝড়ের
ঘূর্ণিঝড় নামকরণ করার জন্য বেশ কয়েকটি সংস্থা আছে। বিশ্বে মোট ১১টি সংস্থা নামকরণ করে। তার মধ্যে ৬টি হল রিজিয়নাল স্পেশালাইজড মেটেরোলজিক্যাল সেন্টার বা আরএসএমসি এবং ৫টি হল রিজিয়নাল ট্রপিক্যাল সাইক্লোন ওয়ার্নিং সেন্টার বা আরটিসিডব্লুসি। ৬টি আরএসএমসি-র মধ্যে একটি হল ভারতের আবহাওয়া দফতর আইএমডি। এছাড়া বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা, ইউনাইডেট নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের সদস্য দেশগুলি।
কোন কোন দেশ নামকরণ করে
উত্তর ভারত মহাসাগরের অধীনস্থ বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে তৈরি হওয়া ঝড়গুলি বর্তমানে ১৩টি দেশ নামকরণ করে। ২০০৪ সাল থেকে নামকরণ করা হচ্ছে ঝড়ের। তখন ৮টি দেশ এই নামকরণের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ২০১৮ সালে আরও ৫টি দেশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রথম ৮টি দেশ হল বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড। যে পাঁচটি দেশ পরে যুক্ত হয়েছে তারা হল- ইরান, কাতার, সৌদি আরব, আরব আমিরশাহী ও ইয়েমেন।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয় কীভাবে
পর্যায়ক্রমে দেশগুলিকে সাজানোর পর তারা নামকরণ করে ঝড়ের। বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, আরব আমিরশাহী ও ইয়েমেন- এই ১৩টি দেশ ১৩টি করে নাম দিয়ে ১৬৯টি নামের তালিকা তৈরি করেছে। তবে নামকরমের ক্ষেত্রে তাদের কিছু শর্ত মানতে হয়েছে।
নামকরণ হয় যে সব শর্ত মেনে
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে যে সমস্ত শর্ত মানা হয়। প্রথমত, রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি, কোনও ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং লিঙ্গ নিরপেক্ষ হতে হবে। বিশ্বের কোনও জনগোষ্ঠীর ভাবাবেগে যেন আঘাত না করে। নামের মধ্যে যেন কোনও রুক্ষতা বা নির্মমতা প্রকাশিত না হয়। সহজ উচ্চারণবিশিষ্ট হতে হবে। সর্বোচ্চ আটটি বর্ণ থাকবে। নামের সঙ্গে উচ্চারণ নির্দেশিকা দিতে হবে। কোনও পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। আবহাওয়া সংক্রান্ত বৈঠকে আলোচনার পর নামের তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে।
কীভাবে দেশের নামের পর্যায়ক্রম তৈরি হয়
পর্যায়ক্রমে দেশগুলির নাম সাজানো হয়। তারপর তাদের দেওয়া একটি একটি করে ঝড়ের নাম নিয়ে তালিকা প্রস্তুত করা হয়। দেশের নাম পর্যায়ক্রমে সাজানো হয় ইংরেজি বর্ণমালা অনুসারে। ২০০৪ সালের তালিকায় ৮টি দেশ ৮টি করে ঝড়ের নাম দেয়। মোট ৬৪টির মধ্যে প্রথম ঝড়ের নাম দিয়ে ছিল অনিল, যা বাংলাদেশের দেওয়া। শেষ নাম ছিল আম্ফান। এটি থাইল্যান্ডের দেওয়া।
২০২০ সালে ১৩টি দেশের তালিকায় ১৬৯ নাম
আর ২০২০ সালে ১৩টি দেশের তালিকায় ১৩টি করে নাম নিয়ে তৈরি হয় তালিকা। ১৬৯টি নামের তালিকায় প্রথম নাম ছিল নিসর্গ। বাংলাদেশের দেওয়া নাম এটি। আর শেষ ঝড়টি হল সমহা। এটি ইয়েমেনের দেওয়া নাম। বর্তমানে নতুন এই তালিকা অনুযায়ী নামাঙ্কিত ৯টি ঝড় বয়ে গিয়েছে। ১৬০টি ঝড় এখনও বয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়।
কোন বৈশিষ্ট্য থাকলে নামাঙ্কিত হবে ঝড়
সব ঝড়ই কি নামাঙ্কিত হবে? আবহবিদরা জানান, সব ঝড়ের নামকরণ হবে না। উত্তর ভারত মহাসাগরের ৪৫ ডিগ্রি পূর্ব থেকে ১০০ ডিগ্রি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়গুলির নামকরণ করাই নিয়ম। যে সমস্ত ঘূর্ণিঝড় কমপক্ষে তিন মিনিট বাতাসে স্থায়ী হয় এবং গতিবেগ সর্বনিম্ন ঘন্টা প্রতি ৬৩ কিলোমিটার হয়, সেই ঝড়েরই নামকরণ করা হয়। নতুবা নাম পায় না ঝড়।
Posted ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Chy