এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: আগামী ৭ জুন শনিবার পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ। প্রতিবছর ১৫ দিন আগে উপজেলার হাটবাজার গুলোতে কোরবানি পশু বেচাকেনা শুরু হলেও এবার হঠাৎ করে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাতের কারণে ঠিকমতো বাজার গুলো বসাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ইজারাদাররা।
এমন পরিস্থিতিতে গত এক সপ্তাহ ধরে বেশিরভাগ হাটবাজারে পশু বেচাকেনা ছিল অনেকটা নিরুত্তাপ। তবে আশার কথা হলো গত তিনদিন ধরে চকরিয়ার আকাশে বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়েছে। মাঝেমাঝে হালকা বৃষ্টি হলেও বেশিরভাগ সময় দেখা মিলেছে রোদের ঝলক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টিপাত বন্ধ হওয়ার পর ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলার হাট-বাজার গুলোতে কোরবানি পশু বেচাকেনা জমে উঠতে শুরু করেছে। একবারে শেষমুহুর্তে এসে চকরিয়া উপজেলার সরকারি অনুমোদিত ও বেআইনিভাবে ভাবে বসানো ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ২৫টি বাজারে ভালো বিক্রি হচ্ছে কোরবানি পশু।
গত তিনদিন সোমবার মঙ্গলবার বুধবার থেকে বেশিরভাগ হাটে কোরবানি পশু বেচাকেনা জমজমাট পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগামী দুইদিনে (বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) প্রতিটি বাজারে পশু বেচাকেনা বেড়ে যাবে আরও কয়েকগুণ। শেষমুহুর্তে সবাই কোরবানি পশু কিনবে এমনটা ধারনা করা হচ্ছে।
বরাবরের মতো এবারও হাটবাজারে স্থানীয় জাতের গরুর চাহিদা বেশি রয়েছে। তবে বেশিরভাগ বাজারে বার্মিজ গরু নিয়ে এসেছে ব্যবসায়ী। কিন্তু বার্মিজ গরু দাম একটু কম হলেও তেমন চাহিদা নেই ক্রেতাসাধারণের মাঝে।
বৃহস্পতিবার ইলিশিয়া বাজার ও পৌর বাসটার্মিনাল এবং শুক্রবার চকরিয়া পৌরসভার ঘনশ্যাম বাজার মগবাজার কমিউনিটি সেন্টার মাঠের গরু বাজারে বিপুল পরিমাণ কোরবানি পশু বেচাকেনা হবে এমনটাই দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট বাজার ইজারাদার।
তাঁরা বলেছেন, শেষ দুইদিন যাঁরা কোরবানি দেবে তাঁরা গরু ছাগল মহিষ কিনে নেবে। সেকারণে বাজারে বেচাকেনা চলবে সকাল দশটা থেকে রাত দশটার পর্যন্ত। বাজারে কোরবানি পশু বেচাকেনা নিবিঘ্ন ও নিরাপদ করতে বাজার ইজারাদার কতৃপক্ষ সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবছর কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসলে কতিপয় গৃহস্তালী লোকজন ও খামারীরা অধিক টাকা লাভের আশায় পালিত বেশিরভাগ গরু মোটা তাজা করতে নানা ধরণের ওষুধ খাইয়ে দেন। ফলে দেখতে সতেজ ও সবল এসব কোরবানি গরু মহিষ বিক্রি করে মালিকরা টাকা হাতিয়ে নিলেও পরে ক্রেতা সাধারণ প্রতারণার শিকার হন।
এধরনের প্রতারনা টেকাতে ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আরিফ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম প্রতিদিন উপজেলার কোরবানি পশুর হাটে গিয়ে গরু-মহিষ ও ছাগলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। এ ধরণের উদ্যোগের ফলে কোরবানি পশুর হাটে আগত ক্রেতা সাধারণের মাঝে বেশ আশা জাগিয়েছে।
জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার মোঃ আরিফ উদ্দিন বলেন, আমাদের হাসপাতালে বছরে বারমাসই গবাদিপশুর সব ধরণের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এমনকি কেউ তাঁর পালিত গরু প্রাণী সম্পদ হাসপাতালে আনতে না পারলে আমরা মালিকের বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করি। একইভাবে সরকারি দায়িত্বপালনের অংশ হিসেবে আমাদের মেডিকেল টিম কোরবানি বাজারে গরু-মহিষ-ছাগলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ করছেন। আমরা চাই ক্রেতা সাধারণ টাকা দিয়ে রোগ-বালাইমুক্ত পশু কিনে নিরাপদ পরিবেশে কোরবানি উদযাপন করুক।
প্রতিবছরের মতো এবারও কোরবানি পশুর হাটে জালনোটের প্রার্দুভাব ঠেকাতে সোনালী ব্যাংক চিরিঙ্গা শাখার উদ্যোগে জাল টাকা সনাক্ত করণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে সোনালি ব্যাংক চিরিঙ্গা শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ গিয়াস উদ্দিন বলেন, কোরবানি পশুর হাট বসানোর পরপর সোনালী ব্যাংকের উদোগে চকরিয়া পেকুয়া উপজেলার সকল হাটবাজারে জালনোট সনাক্ত করতে কাজ শুরু করা হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের তত্তাবধানে ইতোমধ্যে দুই উপজেলার সকল তফসিলি ব্যাংক সমুহকে বাজারভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বাজারে মেশিন বসিয়ে জালনোট সনাক্ত করণ কাজ করছেন। তাতে পশু বিক্রেতারা সুফল পাচ্ছেন।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলার কোরবানি বাজারে পশু বেচাকেনা নিবিঘ্ন করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছেন। প্রতিদিন বসা পশুর হাট গুলো পুলিশ সদস্যরা ঘুরে ঘুরে টহল দিচ্ছেন।
Posted ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta