এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া(১৯ ফেব্রুয়ারি) :: কক্সবাজারের চকরিয়ায় বসতভিটার বিরোধের জেরে দুইপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কলেজছাত্রী, বয়োবৃদ্ধা, নারীসহ উভয়পক্ষের অন্তত ২০জন গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদেরকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তৎমধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৭জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) ও কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছে কর্তব্যরত চিকিৎসক।
বুধবার সকাল ৮ টার দিকে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরপাড়া এলাকায় ঘটেছে এ সংঘর্ষের ঘটনা। এদিকে বসতভিটার বিরোধে দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল আমিন
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের উত্তর পাড়া এলাকার মৃত মাষ্টার তমিম গোলালের ছেলে মোক্তার আহমদের সাথে একই এলাকার মৃত রৌশন আলীর ছেলে মোস্তাক আহমদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বসতভিটার সীমানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এনিয়ে দুপক্ষের লোকজন স্থানীয়ভাবে কয়েকদফা সালিশি বৈঠকও করেন। পাশাপাশি বিরোধ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে আদালতে পাল্টা-পাল্টি মামলাও হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন জানান, সর্বশেষ বুধবার সকালে বিরোধীয় জায়গায় মোক্তার আহমদের ছেলে কুতুব উদ্দিন দোকান নির্মাণ করতে খুটি স্থাপন করলে প্রতিপক্ষ মোস্তাক আহমদের লোকজন বাধা দেয়। এতে দুপক্ষের মধ্যের তর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিতর্কের একপর্যায়ে কথা কাটাকাটি নিয়ে দুপক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় তৈরি ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় উভয় পক্ষের অন্তত নারীসহ ২০ জন আহত হয়েছে।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন জায়গার মালিক দাবিদার মোক্তার আহমদ পক্ষের ডুলাহাজারা উত্তরপাড়া এলাকার মৃত মাষ্টার তমিম গোলালের ছেলে বয়োবৃদ্ধ মোক্তার আহমদ (৭০), ছেলে কুতুব উদ্দিন (৪২), তার ভাই মোঃ বেলাল উদ্দিন (৩৫), গিয়াস উদ্দিন (৪৯), জসিম উদ্দিন (৫২), তার ছেলে বকতিয়ার উদ্দিন রিপন (২৮), চাচা নাছির উদ্দিন (৪৬), তার মেয়ে এইচএসসি পড়ুয়া ছাত্রী মেহেবুবা জন্নাত জেকী (১৯)।
এছাড়া মোস্তাক আহমদ পক্ষের আহত হয়েছেন ডুলাহাজারা উত্তরপাড়া মৃত রৌশন আলীর ছেলে মজিবুর রহমান (৫০), তার মা আনুয়ারা বেগম (৫০), তার ছেলে মোঃ রাকিব (১৬), মোঃ সাগর (১৮), তার জেঠা মোস্তাক আহমদ (৫৯), তার ছেলে মোঃ আরাফাত (২০), মৃত করম আলীর স্ত্রী জুবাইদা খাতুন (৪৮) ও মোহাম্মদ কালুর স্ত্রী মমতাজ বেগম (৪৫)। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় আরো ৮ জন কমবেশি আহত হয়।
আহত কুতুব উদ্দিন বলেন, বিরোধীয় জায়গাটি দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পূর্ব থেকে ভোগদখল করে আসছে আমার পরিবার। দখলীয় ওই জায়গায় বুধবার সকালে দোকান নির্মাণ করতে খুটি স্থাপন করলে প্রতিপক্ষ মোস্তাক আহমদ ও তার ছেলেরা প্রথমে বাধা দেন, পরবর্তীতে ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। তাদের হামলায় আমার বয়োবৃদ্ধ বাবা, চার ভাই, ভাইয়ের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে, ভাতিজাসহ ১০জনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। ঘটনার পরে ফের দ্বিতীয় দফা হামলা চালিয়ে ভাতিজা মোর্শেদকে মারধর করে প্রতিপক্ষের লোকজন বাড়িতে লুটপাট ও হামলা চালায়। এনিয়ে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
অপরপক্ষের গৃহকর্তা আহত মোস্তাক আহমদ বলেন, বিরোধীয় জায়গায় আমার ক্রয়কৃত জায়গা রয়েছে। উল্লেখিত দীর্ঘ সময় ধরে জায়গা আমাদের ভোগদখলে আছে। কিন্তু প্রতিপক্ষের লোকজন বুধবার সকালে ওই জায়গায় দোকানঘর নির্মাণ করতে গেলে আমরা বাধা দিই। এসময় তারা আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁরা হামলা চালায়। এসময় তাদের হামলায় আমার স্ত্রী সন্তান বড়ভাই নিকটাত্মীয়সহ ১২ জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়।
দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান মো.নুরুল আমিন বলেন, বিরোধীয় জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে কয়েকদফা বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি না হওয়ায় সর্বশেষ বুধবার দুপক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘটনার খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনি।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নে সংঘর্ষের ঘটনা শুনে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। থানার এসআই প্রিয়লাল ঘোষ সেখানে পৌঁছে দুইপক্ষকে নিবারণ করেন। হামলার ঘটনায় বুধবার রাত নয়টা পর্যন্ত থানায় কোনপক্ষ অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
Posted ১০:৫৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy