কক্সবাংলা ডটকম(১৬ জুন) :: সারাদেশে এলাকাভিত্তিক ‘রেড জোন’ ঘোষণা হতে থাকায় পণ্য খালাসের ব্যস্ততা হঠাৎ করে বেড়েছে বন্দর নগরীতে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হওয়া পণ্য সারাদেশে যাচ্ছে সড়ক পথে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ পণ্য খালাস হয়েছে মঙ্গলবার। ২০ ফুট দীর্ঘ তিন হাজার ৪০৭ একক কনটেইনারে করে সারাদেশে গেছে প্রায় ৪০ হাজার টন পণ্য। আবার খাতুনগঞ্জ দিয়ে পণ্য যাচ্ছে নৌপথে। মঙ্গলবার একদিনেই ৮০টি ট্রলারে করে খাতুনগঞ্জ থেকে প্রায় ১০ হাজার টন পণ্য গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরেও পণ্য খালাসের পরিমাণ বেড়েছে হঠাৎ করে। এখান থেকে নৌপথে পণ্য যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, বরিশালসহ দেশের ৫৬টি ঘাটে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এলাকাভিত্তিক রেড জোন ঘোষণা হতে থাকায় বিভিন্ন স্থানে ২১ দিনের পণ্য মজুদ করছে কেউ কেউ। এ কারণে পণ্য খালাসের পরিমাণও বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এলাকাভিত্তিক রেড জোন ঘোষণা হতে থাকায় পণ্য খালাসের পরিমাণ বেড়েছে হঠাৎ করে। চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা রেড জোনের মধ্যে পড়েছে। এ জন্য হয়তো অনেকে পণ্য খালাসের পরিমাণ বাড়িয়েছে।’ চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, ‘অন্য সময়ের তুুলনায় এখন পণ্য খালাসের পরিমাণ তুলনামূলক ভালো।
মঙ্গলবার প্রায় সাড়ে তিন হাজার কনটেইনারে ৪০ হাজার টন পণ্য গেছে সারাদেশে। চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা রেড জোনে থাকলেও বিশেষ ব্যবস্থায় এটির কার্যক্রম চলবে। অব্যাহত থাকবে পণ্য খালাস প্রক্রিয়াও। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়টি উল্লেখ করেছে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনেও।’
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মঙ্গলবার সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, চলতি সপ্তাহের মধ্যে গত সোমবার ২০ ফুট দীর্ঘ সর্বোচ্চ তিন হাজার ৪০৭টি কনটেইনার খালাস হয়েছে। রোববারে খালাস হয়েছে দুই হাজার ৮৩৩টি। শনিবার খালাস হয়েছে তিন হাজার ১৬০টি। ইয়ার্ড থেকে পণ্য খালাস করে নিতে গতকালও দীর্ঘ লাইন ছিল ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরির।
চট্টগ্রাম বন্দরে আসা সিমেন্ট ক্লিংকার, সার ও গমসহ বিভিন্ন পণ্য বহির্নোঙরে খালাস করে তা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে লাইটারেজ জাহাজ।
বহির্নোঙর ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ ঘাট, বাঘাবাড়ী, নগরবাড়ী, নিতাইগঞ্জ, এমআই সিমেন্ট, বসুন্ধরা, মিরপুর, আকিজ সিমেন্ট, স্ক্যান সিমেন্ট, আনোয়ার সিমেন্ট, শাহ সিমেন্ট, মেট্রো সিমেন্ট, সেভেন সার্কেল, সিয়াম সিটি, হোলসিম, মীর সিমেন্ট, ভৈরব, আশুগঞ্জ, কাটপট্টি, খুলনার মোংলা, নোয়াপাড়া, আবদুল মোনায়েম ঘাট, বরিশাল, ভোলা, দাউদকান্দি, ফরিদপুর, সিঅ্যান্ডবি ঘাট, কাঞ্চন ঘাট, রূপগঞ্জ, ধাপাঘাট, সিটি গ্রুপ, ছাতক, মোক্তাপুর, ঝালকাঠি, পয়রা, ফুলতলা, দেশ বন্ধুঘাট সহ দেশের ৫৬টি পয়েন্টে পণ্য পরিবহন করা হয় এসব লাইটারেজ জাহাজ দিয়ে।হঠাৎ করে ব্যস্ততা বেড়েছে দেশের অন্যতম প্রধান পাইকারি মোকাম চাক্তাই-খাতুনগঞ্জেও।
একদিনে অন্তত ৮০টি ট্রলারে করে আশপাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাতে অন্তত ১০ হাজার টন পণ্য গেছে বলে ধারণা করছেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি জানান, দেশে ভোগ্যপণ্য বাজারের প্রায় ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ।
চট্টগ্রাম জেলার পাশাপাশি এই মোকাম থেকে পণ্য যায় তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। কক্সবাজারের পাশাপাশি পাইকারি দামে এখান থেকে পণ্য কেনেন নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার ব্যবসায়ীরা। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বাদশা মার্কেট, ইলিয়াছ মার্কেট, চান্দমিয়া গলি, হামিদুল্লাহ মার্কেট, সোনামিয়া মার্কেট, নবী মার্কেটে থাকা পাইকারি মোকাম থেকে নৌপথেই পণ্য যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। রেড জোন ঘোষণা হতে থাকায় এখানেও ব্যস্ততা বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বন্দর এলাকাসহ ১২টি ওয়ার্ডকে রেড জোনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ঢাকা, গাজীপুরসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এলাকাভিত্তিক রেড জোন ঘোষণা করা হচ্ছে। রেড জোন এলাকা ২১ দিনের জন্য লকডাউনে থাকবে। কোন এলাকায় কখন রেড জোন বাস্তবায়ন হবে তা সিদ্ধান্ত দিচ্ছে স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন। চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা রেড জোনে পড়েছে। তবে কখন থেকে এই এলাকা লকডাউনে যাবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। লকডাউন হলেও বিশেষ ব্যবস্থায় বন্দর সচল থাকবে। তবে আশপাশের এলাকা লকডাউনে থাকলে পণ্য পরিবহনে ব্যাঘাত হওয়ার শঙ্কা থেকেই অনেকে পণ্য খালাস করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Posted ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৭ জুন ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy