কক্সবাংলা ডটকম(৯ জানুয়ারি) :: আমদানি বাড়লেও কমছে না চালের দাম। এক মাসের ব্যবধানে ডিসেম্বর ৬৪৫ শতাংশ বেড়েছে চালের আমদানি। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩১ হাজার ৩২৬ শতাংশ। এরপরও বাজারে অস্থিরতা। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন,চালের দাম নিয়ন্ত্রণে তার কাছে কোনো মেশিন নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে চালের ঘাটতি নেই। সরকারের চালের মজুত, স্থানীয় উৎপাদন ও সংগ্রহে ঘাটতি নেই। আমনের ভরা মৌসুম চলছে; এখন চালের দাম বেড়ে যাওয়ার যৌক্তিক কারণ নেই। সাময়িক মজুতদারির কারণে চালের দাম বেড়েছে বলে মত তাদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ৫৫ হাজার ৯৩৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। আগের মাস নভেম্বরে চাল আমদানি হয়েছিল মাত্র ৭ হাজার ৫০৭ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে চালের আমাদানি বেড়েছে ৬৪৫ শতাংশ। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চাল আমদানি হয়েছিল মাত্র ১৭৮ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে চালের আমাদানি বেড়েছে ৩১ হাজার ৩২৬ শতাংশ। এরপরও বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে।
এদিকে আমনের ভরা মৌসুমেও পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়েছে। গত এক মাসে খুচরা পর্যায়ে চিকন (মিনিকেট) চালের দাম বস্তাপ্রতি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়েছে। চিকন চাল সর্বোচ্চ কেজিতে সাত থেকে ১০ টাকা এবং মাঝারি ও মোটা চালের দাম সর্বোচ্চ পাঁচ-ছয় টাকা বেড়েছে। এতে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে চাপে থাকা ভোক্তারা আরো চাপে পড়েছে।
কারওয়ান বাজারের মেসার্স ঢাকা রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী মো. সায়েম হোসেন বলেন, ‘বাজারে আমনের নতুন চাল আসার পর সরবরাহও বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় চালের ঘাটতিও নেই। ধানের দাম বাড়ার কথা বলে সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়েছেন মিলাররা। এতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে। মিল পর্যায়ে জোরালো তদারকি করা গেলে চালের দাম কমে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘দাম বাড়ায় মিনিকেট চাল এখন ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগেও আমরা কেজি ৭২ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি করেছি। মোটা চাল ব্রি-২৮ ও পাইজাম চাল দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৬৩ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা ছিল। নাজিরশাইল চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়, এক মাস আগে ছিল ৭৪ থেকে ৭৭ টাকা।’
বাড্ডার খুচরা চাল বিক্রেতা মো. হুমায়ুন কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন করে চালের দাম বাড়ায় বেচাকেনা কিছুটা কমেছে। দাম বেশি বলে অনেক ক্রেতা চাল কম কিনছে।’
চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গত নভেম্বরে আমদানির ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রেখে বাকি আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আশানুরূপ আমদানি না হওয়ায় চালের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি।
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে একাধিক সংস্থা তদারকি করে, কিন্তু ভোক্তা এ থেকে সুফল পাচ্ছেন না। পণ্যের দাম বাড়লেই কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু যে স্তরে কারসাজি হয়েছে, সেই স্তরে মনিটরিং হয় না।
ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোক্তাকে নাজেহাল করার সুযোগ পাচ্ছেন। কয়েক মাস পর রোজা শুরু হবে। এখন থেকে যদি বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো না হয়, ক্রেতারা আরো ভোগান্তিতে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে তার কাছে কোনো মেশিন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে এ সমস্যা সাময়িক। আসলে এমন কোনো আলাদিনের চেরাগতো নেই যে, সুইচ দিলেন আর কালকেই বাজার ঠিক হয়ে যাবে। তবে বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে।’
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী ড. ওমর বোলাত এর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমদানি উদার করা হয়েছে। শুল্ক ৬৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আমদানি শুরু হলেই যদি কেউ অনায্যভাবে মজুদ করে থাকে তাহলে তারাও ছাড়তে বাধ্য হবে। বাজারেও স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসবে।
এ সময়ের মধ্যেইতো অসাধু ব্যবসায়ীরা শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে এমন প্রশ্নে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে বিষয়টি সাময়িক। কোনো আলাদিনের চেরাগ নেই যে, আপনি সুইচ দিলেন আর কালকেই মার্কেটটা ঠিক হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, চালের মজুদে কোনো সমস্যা নেই। তারপরও খাদ্য মন্ত্রণালয় ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে কয়েক লাখ টন চাল আমদানি করছে। এছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে ওএমএস ও টিসিবির কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে।