কক্সবাংলা ডটকম(২৫ জুন) :: ভারত রাশিয়া অস্ত্রচুক্তি নিয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়ে ছিল চিন। রাশিয়াকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যাতে কোনওভাবেই ভারতের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া না হয়। তবে বেজিংয়ের সেই দাবির মুখে ছাই দিয়ে মিসাইল সিস্টেম ভারতে পাঠাচ্ছে রাশিয়া।
সূত্রের খবর ভারত চিন সীমান্ত সমস্যার মধ্যেই রাশিয়ার এই মিসাইল সিস্টেম পাঠানোর সিদ্ধান্তকে একেবারেই সমর্থন করেনি চিন। স্টেট মিডিয়া পিপলস ডেইলিতে সেই বার্তাও প্রকাশিত হয়। তবে রাশিয়া জানিয়ে দিয়েছে আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এই অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র হাতে পাবে ভারত।
২২শে জুন রাশিয়া সফরে যান ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। এই সফরেই রাশিয়াকে মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম দ্রুত দেওয়ার কথা জানায় ভারত। ২০১৮ সালের অক্টোবরে মস্কোর সঙ্গে ৫৪৩ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি করেছিল দিল্লি। এই সফরে সেই চুক্তিতেই শান দেওয়া হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ‘ফেডারেল সার্ভিস অফ মিলিটারি টেকনিক্যাল কার্পোরেশন অফ রাশিয়া’র ডেপুটি ডিরেক্টর ভ্লাদিমির দ্রঝভ জানিয়েছিলেন, ২০২১ সালের মধ্যেই প্রথম এস-৪০০ সিস্টেম হাতে পাবে ভারত। তবে ভারত চিন সীমান্ত সমস্যার মধ্যেই এই অস্ত্র হাতে পেতে চাইছে নয়াদিল্লি। ভারতের সেই অনুরোধে সম্মত হয়েছে মস্কো বলে সূত্রের খবর।
উল্লেখ্য প্রতিবছর ২৪ জুন ‘Victory Day Parade’ হয় মস্কোয়। ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে উপস্থিত হন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। আমন্ত্রিত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও। তবে এদিন মস্কোতে চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কোনও বৈঠক বা সাক্ষাত করেননি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
এর আগে, রাশিয়ার প্রতি একটি সতর্কবার্তা প্রকাশ করে চিনের স্টেট মিডিয়া। মঙ্গলবার এই বার্তা পোস্ট করা হয়েছে ২৫০০ ফলোয়ার গ্রুপের একটি ফেসবুক পেজে। এই পেজটি পিপলস ডেলি চায়নার অফিসিয়াল পেজ। সেখানে বলা হয় রাশিয়া যদি ভারত ও চিনের সম্পর্ক উন্নত করতে ইচ্ছুক হয়, তবে যেন ভারতের হাতে কোনও অস্ত্র তুলে দেওয়া না হয়। তবে তাতে কর্ণপাত করেনি রাশিয়া।
মিসাইল সিস্টেম ছাড়াও ভারতের হাতে আসছে, ফাইটার জেট (Su-30 ও Mig-29), নৌসেনার জন্য যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন এবং টি-৯০ যুদ্ধ ট্যাঙ্ক। বুধবার রাশিয়ার ডেপুটি পিএমের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। এই চুক্তিতে সদর্থক সায় দিয়েছে রাশিয়া বলে জানিয়েছেন তিনি।
গালওয়ান ভ্যালিতে অবশেষে কূটনৈতিক জয় ভারতের। পূর্ব লাদাখ সেক্টরে পিছু হটল চিন সেনা। ২২ শে জুনের বৈঠক ফলপ্রসূ হওয়ার পরেই এই সিদ্ধান্ত নেয় বেজিং। সূত্রের খবর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে চিন সেনা জওয়ানদের ও সাঁজোয়া গাড়িগুলিকে। ২২শে জুন ১১ ঘণ্টা ধরে ম্যারাথন বৈঠক চলে।
আর তারপরই সমাধান সূত্র কিছুটা সামনে আসে। শেষ পাওয়া খবরে জানা যায় পিছু হটতে রাজি হয়েছে চিনের সেনাবাহিনী। দুই পক্ষই লাদাখ সীমান্ত থেকে সেনা সরানোর ক্ষেত্রে রাজি হয়। দুই দেশের মধ্যে ইতিবাচক কথাবার্তা হয় এদিন। দুই দেশের আর্মি অফিসার স্তরের বৈঠকও হয়। লাদাখের বিভিন্ন জায়গার পরিস্থিতি নিয়েও এদিন আলোচনা হয়। ইস্টার্ন লাদাখের পরিস্থিতিতে বিশেষ জোর দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে আগামিদিনেও আলোচনা হবে বলে জানা যায়। দুই দেশের লেফট্যানেন্ট জেনারেল স্তরের মধ্যে বৈঠক হওয়ার পর কীভাবে ক্রমশ সেনা সরানো হয়, সেদিকেই এখন নজর ছিল। ১৫ই জুনের পর চিন জানিয়ে ছিল আর কোন সংঘর্ষ তারা ভারতের সঙ্গে চায় না। এই বৈঠকে চিনের কাছে কয়েকটি দাবি রাখে ভারত।
নয়াদিল্লি চেয়েছিল ৪ঠা মের আগে গালওয়ান ভ্যালিতে দুই দেশের সেনার যে অবস্থান ছিল, তা ফের ফিরে আসুক। ভারতের এই বক্তব্য একেবারেই সহমত ছিল না বেজিং।
কোনওভাবেই নিজেদের পুরোনো অবস্থানে ফেরত যেতে রাজি হয়নি চিন সেনা। অন্যদিকে ভারতও নিজেদের দাবিতে অনড়। ভারতের আরেকটি দাবি ছিল সীমান্ত জুড়ে যে নির্মাণ কাজ চালু করেছে চিন সেনা, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এই দাবিটিও নিজেদের জাতীয় সুরক্ষার দোহাই দিয়ে মানতে চায়নি বেজিং।
তবে ভারতের প্রথম দাবি মেনে পিছু হটেছে চিন সেনা বলে খবর। তবে এদিন ভারতের আকাশে চক্কর কাটে চিনা ড্রোন। ভারতের সেনা অবস্থান দেখতেই ওই ড্রোন ওড়ে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এই প্রথমবার নয়, গত কয়েক সপ্তাহে অন্তত চারবার চিনা ড্রোন উড়তে দেখা গিয়েছে।
শুধু চিন নয়, ভারতও চিনের সেনাবাহিনীর উপর নজর রাখতে ড্রোনের সাহায্য নিচ্ছে বলে সূত্রের খবর। প্রায় দেড় মাস ধরে চলছে ভারত-চিন সংঘাত। এখনও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় লাইন অফ অ্যাচুয়াল কন্ট্রোল জুড়ে ক্রমশ উদ্বেগ বাড়ছে।
Posted ৩:১১ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৬ জুন ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy