কক্সবাংলা ডটকম :: পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা-আই) চীনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে ভারত। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আসাম রাজ্য প্রশাসনের পৃথক দুই এফিডেভিটে আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ (প্রিভেনশন) ট্রাইব্যুনালকে জানানো হয়, পরেশ বড়ুয়া বর্তমানে চীনের ইউনান প্রদেশের রুইলিতে ঘাঁটি গেড়ে উলফা-আইয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। খবর ইকোনমিক টাইমস।
দীর্ঘদিন ধরে মনে করা হচ্ছিল, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনটির নেতা পরেশ বড়ুয়াই শুধু চীনের দক্ষিণাঞ্চলে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা রুইলিতে অবস্থান করছিলেন। অন্যদিকে মিয়ানমারের ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা সাগাইংকে ধরা হচ্ছিল দলটির কর্মীদের বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম ও প্রশিক্ষণের মূল কেন্দ্র হিসেবে।
ট্রাইব্যুনালে দেয়া এফিডেভিটে ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আরকে পান্ডে জানান, পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন উলফা বর্তমানে চীনের ইউনান প্রদেশের রুইলিকে ভিত্তি করে চাঁদাবাজি, কর্মী সংগ্রহ ও অস্ত্র ক্রয়সহ সহিংস কার্যক্রম চালাচ্ছে। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের বিরোধিতা করে আসামে যখন আন্দোলন চলছিল, সে সময় জাতিগত সহিংসতাকেও উসকে দিয়েছে উলফা-আই।
পৃথক আরেকটি এফিডেভিটের মাধ্যমে আসামের রাজ্য সরকার ট্রাইব্যুনালকে জানায়, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাগাইংয়ের টাকা এলাকায় এনএসসিএন-কের (ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড-খ্যাপলাং) ঘাঁটিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী পরিচালিত অভিযান ওই এলাকাসহ লাংমার্ক ও নিলগিরির বিচ্ছিন্নতাবাদী ঘাঁটিগুলোর জন্য মারাত্মক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বেশকিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী ওই এলাকা ত্যাগও করে।
রাজ্য সরকারের এফিডেভিটে সাগাইংয়ে এনএসসিএন-কের সহযোগিতায় স্থাপিত উলফার আটটি ঘাঁটির তালিকাও দেয়া হয়। এতে আরো জানানো হয়, উলফা-আই বর্তমানে ডার্কনেটে সাইবার অপরাধসংশ্লিষ্ট কারিগরি কাজের জন্য দলের নতুন রিক্রুটদের আইটি দক্ষতাকে কাজে লাগাচ্ছে। বিষয়টি বর্তমানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এফিডেভিটে আসাম রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বিভাগের যুগ্ম সচিব সীমান্ত কুমার দাস ট্রাইব্যুনালকে জানান, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে উলফার কর্মী সংগ্রহ কার্যক্রম বেশ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। উলফার জনসংযোগ উইং সে সময় বেশ সক্রিয়ভাবে সংগঠনে যোগ দেয়ার জন্য তরুণদের প্ররোচিত করেছে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের মধ্যে ৩৭ যুবকের সংগঠনটিতে যোগদানের তথ্য পাওয়া যায়, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের এমন কিছু দক্ষতা রয়েছে, যা কাজে লাগিয়ে ডার্কনেটে সাইবারসংশ্লিষ্ট কারিগরি কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
গুয়াহাটি হাইকোর্টের বিচারপতি প্রশান্ত কুমার দেকা এ ট্রাইব্যুনালের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ (প্রিভেনশন) অ্যাক্টের অধীনে উলফাকে অবৈধ ঘোষণার সমর্থনে ট্রাইব্যুনালে ভারতের কেন্দ্রীয় ও আসাম রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এফিডেভিটগুলো ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়।
২০১৯ সালের নভেম্বরে উলফার নিষেধাজ্ঞা আরো পাঁচ বছরের জন্য বাড়িয়ে এক নোটিফিকেশন জারি করে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকেও গত মাসেই উলফার কার্যক্রমকে ‘ভারতের সার্বভৌমত্ব ও সংহতির জন্য ক্ষতিকর’ আখ্যা দিয়ে নোটিফিকেশনের যথার্থতা নিশ্চিত করা হয়।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দলটি বর্তমানে ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হিসেবে আখ্যা দিয়ে নির্বাচন বয়কট ও জনমতকে প্রভাবিত করতে ভারতবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে লড়াই করার জন্য বিদ্রোহী সব দলকে সাধারণ একটি প্লাটফর্মে নিয়ে আসারও চেষ্টা চালাচ্ছে।
এফিডেভিটে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট আসামের গোলাঘাটে এএনএমএমএমটিএ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়। মূলত অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মণিপুর, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে সংগঠনটি। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সক্রিয়তা বৃদ্ধি, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে উগ্রবাদী কার্যক্রমের জন্য জনবল সংগ্রহ ও চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে ভারতের ‘আইনসম্মতভাবে গঠিত সরকারের বিরুদ্ধে জনতত্পরতা চালাতে’ সংগঠনটি গড়ে তোলা হয়েছে। এএনএমএমএমটিএর মাধ্যমে অর্জিত রাজনৈতিক অগ্রগতি পরেশ বড়ুয়া নিজে পর্যবেক্ষণ করেন। অন্যদিকে নির্দেশনা আসে অরুণোদয় দহতিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত উলফা-আইয়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে।
এতে আরো বলা হয়, আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাচালানকারীদের কাছ থেকে কেনার পাশাপাশি নিরাপত্তা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরকের মজুদ গড়ে তুলেছে উলফা-আই। মিয়ানমারের মেইতেই জঙ্গিগোষ্ঠী ও অন্যান্য জাতিগত জঙ্গিদের সহায়তায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক ক্রয়ের ক্ষেত্রে দলের প্রধান পরেশ বড়ুয়াই মূল ভূমিকা পালন করেন।
Posted ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৬ অক্টোবর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy