সংবাদ বিজ্ঞপ্তি(১৬ ডিসেম্বর) :: বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সংকট মোকাবেলার প্রক্রিয়াকে নতুন রুপ দিতে আজ সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় তিন দিনের একটি বৈশ্বিক সম্মেলন শুরু হচ্ছে।
প্রথমবারের মত গ্লোবাল রিফিউজি ফোরাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেনেভায় জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয় প্যালেই ডেস ন্যাশনস-এ; যেখানে শরণার্থী, রাষ্ট্রপ্রধান, জাতিসংঘের নেতৃত্বস্থানীয় কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়ন সংস্থা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ আরও অনেকে সম্মিলিত হচ্ছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ফোরামটি আয়োজন করছে সুইজারল্যান্ডের সাথে; আর এতে আহ্বায়ক হিসেবে একসাথে আছে কোস্টারিকা, ইথিওপিয়া, জার্মানি, পাকিস্তান ও তুরস্ক। এই ফোরামের উদ্দেশ্য হচ্ছে সারা বিশ্বের শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সাহায্যের জন্য নতুন উপায় খুঁজে বের করা ও বিভিন্ন পক্ষের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকার আদায় করা। বর্তমানে সারা বিশ্বে যুদ্ধ, সংঘাত ও নির্যাতনের কারণে ৭ কোটিরও বেশি মানুষ উদ্বাস্তু ও শরণার্থী হয়ে আছে। এর মধ্যে আড়াই কোটি মানুষ আছে শরণার্থী; যারা আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করেছে এবং নিজ দেশে ফিরে যেতে অক্ষম।
এশিয়া মহাদেশে আছে ৪২ লক্ষ শরণার্থী, ২৭ লক্ষ অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু এবং ২২ লক্ষ রাষ্ট্রহীন মানুষ। সব মিলে আছে প্রায় ৯৫ লক্ষ মানুষ; যাদের জন্য সংহতি, সকল পক্ষের সম্মিলিত দায়িত্ব গ্রহণ ও সমস্যা সমাধানকল্পে বাস্তব প্রতিশ্রুতি অতীব প্রয়োজন –আর এগুলো অর্জনই এই ফোরামের লক্ষ্য।
আফগান শরণার্থীদের সংখ্যা এই মহাদেশে সবচেয়ে বেশি আর তারা বাস্তুচ্যুত হয়ে আছে দীর্ঘতম সময় ধরে। নিজ ভূমি থেকে প্রথমবার উৎখাত হওয়ার চার দশক পর আজ ২৭ লাখেরও বেশি আফগান শরণার্থী নিবন্ধিত আছেন, যাদের বেশির ভাগই আশ্রয় পেয়েছেন ইরান ও পাকিস্তানে। আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণের উপর চাপ কমাতে ও দীর্ঘকালীন এই শরণার্থী সংকটের সমাধান খুঁজে বের করতে এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। আজ এই গ্লোবাল রিফিউজি ফোরামের প্রাক্কালে আফগানিস্তান, ইরান ও পাকিস্তান সরকার ইউএনএইচসিআর-এর সাথে মিলে সৃষ্টি করেছে “সাপোর্ট প্ল্যাটফর্ম ফর দ্য সল্যুশনস স্ট্র্যাটেজি ফর আফগান রিফিউজিস” বা এসএসএআর। এই প্ল্যাটফর্ম আফগান শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় সমন্বয় ও অংশীদারি কার্যক্রম বাড়াবে; এবং মানবিক ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের একসূত্রে যাত্রা নিশ্চিত করবে।
এশিয়ায় আরও আছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যারা আজ রাষ্ট্রহীন, যাদের প্রায় ৭,৪৫,০০০ জন ২০১৭ সালে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা আজ প্রায় ৯,০০,০০০। এ সংকটের সমধান সুদূর পরাহত মনে হলেও সার্বিক অংশগ্রহণ ও সহায়তা বজায় রাখা প্রয়োজন, যেন রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম নির্বাসিত জীবন না কাটাতে হয়।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন “আমরা দাঁড়িয়ে আছি উদ্বাস্তু সমস্যার চূড়ান্তে থাকা একটি দশকে, যেখানে শরণার্থী সংখ্যা অনেক বেড়েছে”।
“প্রথম এই গ্লোবাল রিফিউজি ফোরামে, আমাদের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে সামনের দশকে আমরা কি করতে পারি তা চিন্তা করতে হবে। এর সাথে শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণের জন্য আমরা কি করতে পারি তাও ভাবতে হবে। এই ফোরাম, গ্লোবাল কম্প্যাক্ট অন রিফিউজিস-এর প্রতি আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকারের প্রতিফলন; এবং সবাইকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি)-র প্রতি আমাদের অবিচল আকাঙ্ক্ষার প্রতিক”।
গ্লোবাল কম্প্যাক্ট অন রিফিউজিস সরকারের সকল স্তর থেকে শুরু করে বেসরকারি খাত, উন্নয়ন সংস্থা, অর্থনৈতিক সংগঠন, সুশীল সমাজ, ধর্মীয় সংস্থা এবং এমনকি শরণার্থী পর্যন্ত সকলকে দিকনির্দেশনা দেয় কিভাবে দায়িত্ব নিতে ও নিজ ভূমিকা পালন করতে হয়।
গ্লোবাল রিফিউজি ফোরামে আশা করা হচ্ছে বিভিন্ন পক্ষ শরণার্থী সমস্যার সমাধান হিসেবে আর্থিক, কারিগরি কিংবা বস্তুগত সহায়তা; শরণার্থীদের সমাজের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে আইনী ও নীতিগত পরিবর্তন, পুনর্বাসনের স্থান এবং শরণার্থীদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে অবদান রাখবে।
ফোরামের সহ-পৃষ্ঠপোষক ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো থেকে আসা জোয়েল হানজি বলেন “আমাদের এরকম সাহায্য আরও দরকার। একসাথে কাজ করার অনেক উদাহরণ এরই মধ্যে আমরা দেখেছি; কিন্তু উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া শরণার্থীদের জন্য আরও মানুষ, সরকার, কোম্পানি ও জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে আসতে হবে। শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য আমাদের সবাইকে দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে। এভাবেই আমরা আমাদের স্বাধীনতা ফিরে পাবো, আর শোধ করতে পারবো সবার প্রতি আমাদের ঋণ”।
জেনেভায় তিন দিনব্যাপী আলোচনা, বিভিন্ন বিশেষ আয়োজন এবং উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকগুলোতে মূল ছয়টি বিষয়ের উপর দৃষ্টিপাত করা হবেঃ কিভাবে দায় ও দায়িত্ব বন্টন করা যায়; শিক্ষা; চাকুরি ও জীবিকা; শক্তি ও অবকাঠামো; সমাধান; এবং সুরক্ষার সামর্থ্য। গ্লোবাল কম্প্যাক্ট অন রিফিউজিস কিভাবে একটি বিরাট পরিবর্তন আনতে পারে তা দেখাতে অনেকেই সেখানে শেয়ার করবে বিভিন্ন নতুন উদ্যোগ ও প্রচলিত কার্যক্রম।
এই ফোরামে আরও আলোকপাত করা হবে মানবিক সহায়তা ও উন্নয়ন সহায়তা কিভাবে একে অন্যের সাথে মিশে কাজ করতে পারে, তার উপর। এছাড়াও বেসরকারি খাতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার নিদর্শন হিসেবে, অংশগ্রহণকারী ১০০’রও বেশি কোম্পানি ও ফাউন্ডেশন ঘোষণা দিবে কিভাবে চাকুরি, আর্থিক সাহায্য ও অন্যান্য উপায়ে তারা সাহায্য করতে পারে।
Posted ৬:৪৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Chy