বিশেষ প্রতিবেদক(২৬ অক্টোবর) :: টেকনাফে নাফনদীর কিনারায় দু‘গ্রুপ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে চালান খালাস নিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসময় এক ইয়াবা কারবারীর মৃতদেহ, অস্ত্র, বুলেট ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ইয়াবা কারবারীকে দাফন এবং এই ঘটনায় পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা যায়, ২৬ অক্টোবর ভোররাতে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ প্রদীপ কুমারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ হ্নীলা হতে মাদক বিরোধী অভিযান শেষে ফেরার পথে দমদমিয়া এলাকায় পৌঁছলে নাফনদীর কিনারায় গোলাগুলির শব্দ শুনতে পায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ইয়াবা কারবারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে।
পুলিশও আতœরক্ষার্থে পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। এসময় উভয়পক্ষের প্রায় ৩৫/৪০ রাউন্ড গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে ঘটনাস্থল তল্লাশী করে একটি গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ, ২টি দেশীয় তৈরী অস্ত্র, ১০ রাউন্ড বুলেট ও ৬ হাজার পিস ইয়াবা পাওয়া যায়।
মৃতদেহ থানায় নিয়ে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের উলুচামরী এলাকার কালা মিয়া প্রকাশ কালুর পুত্র মোঃ হাসান ওরফে হামিদুল ইসলাম প্রকাশ লালাইয়া (৩৫) বলে সনাক্ত করে।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ প্রদীপ কুমার দাশ, ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন তার বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানায় ৩টি মাদক, ৪টি মারামারি ও ১টি মানব পাচারসহ বেশ কয়েকটি বিভিন্ন অপরাধের মামলা রয়েছে। তার মৃতদেহ পোস্টমর্টেমের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। উপরোক্ত বিষয়ে পৃথক ৩টি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে থানা সুত্র জানায়। পোস্টমর্টেম শেষে সন্ধ্যায় বন্দুক যুদ্ধে নিহত লালাইয়ার মৃতদেহ বাড়িতে আনায়। বাদে এশা স্থানীয় গোরস্থানে নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।
এরআগে গত ২৪ অক্টোবর ভোরে টেকনাফে দু’পক্ষের বন্দুক যুদ্ধে ৫টি দেশীয় তৈরী অস্ত্র, ২০ রাউন্ড বুলেট ও ইয়াবাসহ এক জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে লাশের পরিচয় সনাক্ত করে নিহত ব্যক্তি উপজেলার হ্নীলা পূর্ব লেদার মৃত লাল মিয়ার পুত্র মুফিজ আলম (৩২) বলে জানা যায়।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা মাদক চোরাকারবারী, অবৈধ অস্ত্রধারী দমনে ব্যর্থ হওয়ায় তারা আজ সমাজে মাথাছড়া দিয়ে রাম-রাজত্ব কায়েম করতে চায়। এখন প্রশাসনের তুমুল অভিযানে মধ্যে এসব অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা প্রাণরক্ষার্থে চাচা আপন পরান বাঁচা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
দিন-মজুর সাধারণ খেটে খাওয়া পরিবারে জন্ম নেওয়া ছেলেটি এক সময় পেটের দায়ে রিক্সা চালাত। স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী অপরাধীদের ডাবার গুটিতে পরিণত হয়ে বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ত হয়ে আজ বন্দুক যুদ্ধের মাধ্যমে শেষ পরিণতি ভোগ করতে হল বৃহৎ অপরাধীদের ছত্র-ছায়ায় গড়ে উঠা ইয়াবা কারবারী লালাইয়াকে। নিহত ইয়াবা কারবারী লালাইয়া স্থানীয় মৃত কালা মিয়ার ২য় স্ত্রীর ৭ ভাই ও ১বোনের মধ্যে লালাইয়া ২য় সন্তান।
এক সময় সে পেটের দায়ে রিক্সা চালাত। এরপর হয়ে উঠে সিএনজি চালক। পেশী শক্তির দাপটে বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হতে হতেই হয়ে উঠে দূধর্ষ অপরাধী।
উক্ত এলাকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত এক ইয়াবা ডনের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করে নিহত লালাইয়া এলাকায় জমি দখল, স্থানীয় বিএনপি নেতা নুরুল বশরের পা কর্তন, গ্রাম্য ডাক্তার মুফিজুর রহমানের বাড়ি ডাকাতি, বন কর্মীদের উপর হামলা, হ্নীলা চৌধুরী পাড়ার মংটিলা স্বর্ণাকারকে গুলি করে স্বর্ণ ছিনতাই, বিভিন্ন স্থানে চুরি, ছিনতাই-ডাকাতি, ডাঙ্গা-হাঙ্গামায় অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন পূর্বক জনমনে ভীতির সঞ্চার করে এলাকায় দূধর্ষ কিলার হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে।
ওখানকার সহজ-সরল খেটে খাওয়া গরীব মানুষ এই চক্রের উৎপাতে অতিষ্ঠ থাকলেও প্রাণ ভয়ে মুখ খুলতে পারেনা। সে বিভিন্ন সংস্থার সোর্স পরিচয়ে নানা অপকর্ম করে জনজীবনকে বিষাক্ত করে তুলেছে।
অবশেষে বন্দুক যুদ্ধে লালাইয়া নিহতের পর উক্ত এলাকায় লালাইয়া আতংকের অবসান হলেও মূল অপরাধীরা ধরা-ছোয়াঁর বাইরে থাকায় সাধারণ মানুষের মুক্তি মিলেনি।
Posted ১০:০৮ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Chy