কক্সবাংলা ডটকম :: মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে খুব বেশি জনপ্রিয় নন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কট্টর শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি প্রচার করতে গিয়ে তিনি ক্রমাগত বিশ্বের অর্ধেক মানুষকে অপমান করেছেন। ইউরোপের নেতাদের দুর্বল বলা থেকে শুরু করে মেক্সিকানদের ধর্ষকও বলেছেন তিনি। লক্ষ্যবস্তু করেছেন মুসলিমদেরও। এমনকি পুরো আফ্রিকা মহাদেশকে নিঃশেষ করে দিতেও চেয়েছেন তিনি। তারপরও পরাশক্তি চীনা প্রভাবের শিকার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহু দেশ ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। এসব সমর্থক কারা, তাদের চিহ্নিত করে দেখার চেষ্টা করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
হংকং: ‘কেবল ট্রাম্পই কমিউনিস্ট পার্টিকে আঘাত করতে পারেন’
গণতন্ত্রপন্থী ব্যাপক বিক্ষোভ ও চীনবিরোধী আন্দোলনের কারণে বেইজিংয়ের প্রবল চাপের মুখে রয়েছে হংকং। চীনা শাসনের বিরোধিতাকারীদের শায়েস্তা করতে সেখানে নতুন নিরাপত্তা আইন প্রচলন করেছে চীন।
হংকংয়ের বাসিন্দা এরিকা ইউয়েন বলেন, ‘চার বছর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে ভেবেছিলাম যুক্তরাষ্ট্র পাগল হয়ে গেছে। সবসময় আমি ডেমোক্র্যাটদের সমর্থক ছিলাম। যদিও এখন আমি ট্রাম্পকে সমর্থন করি। এর নানা কারণের মধ্যে রয়েছে হংকংয়ের বিক্ষোভে তার সমর্থন।’ এই অ্যাক্টিভিস্ট ও ব্যবসায়ী বলেন, ‘হংকং এমন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পেয়েছে, যিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে আঘাত করতে পারবেন আর সেটাই হংকংয়ের বিক্ষোভকারীদের একমাত্র আশা।’
সেই আশায় জ্বালানি জোগাচ্ছে চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কঠোর সমালোচনা, বিশেষ করে হংকং ইস্যুতে। ট্রাম্পের মেয়াদে হংকংয়ের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছে কংগ্রেস। বলা হয়েছে অঞ্চলটি আর স্বায়ত্তশাসিত না থাকায় বিশেষ মার্কিন অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নয়। এছাড়া হংকংয়ের চীনপন্থী প্রধান নির্বাহী ক্যারি লামসহ দশ শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনও হংকং ইস্যুতে চীনকে শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছেন। চীনা নেতা শি জিনপিংকে দস্যু হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। তারপরও এরিকা ইউয়েন মনে করেন, বর্তমান মার্কিন প্রশাসনই প্রথমবারের মতো চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে ক্ষতিকারক হিসেবে দুনিয়ার মানুষের মনোভাব তৈরি করতে পেরেছে।
তাইওয়ান: ‘যে বড় ভাইয়ের ওপর ভরসা করা যায়’
১৯৪০-এর দশকে গৃহযুদ্ধে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় চীন ও তাইওয়ান। সম্প্রতি তাদের মধ্যে বিরোধ বেড়েছে। বেইজিং মনে করে, যেকোনও মূল্যে আবারও চীনের অংশ হবে তাইওয়ান। প্রয়োজনে সামরিক শক্তির ব্যবহার করতেও ইচ্ছুক তারা। তবে ওয়াশিংটন চায় শান্তিপূর্ণভাবে অঞ্চল দুটি আলাদা হয়ে যাক। আর সে কারণেই তাইওয়ানের হাজার হাজার নাগরিক ট্রাম্পের সমর্থক। আর চীনের ওপর ট্রাম্প প্রশাসন বাণিজ্যিক শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় খুশি হয়েছে তাইওয়ানের বহু বাসিন্দা।
ভিক্টর লিন নামে তাইওয়ানের এক বাসিন্দা বলেন, ট্রাম্পের মনোভাব আমাদের জন্য ভালো। এই ধরনের মিত্র থাকাও ভালো। বৈদেশিক, সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিবেচনায় এটা আমাদের আরও আত্মবিশ্বাসী করে।’ এই ই-কমার্স ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের একজন বড় ভাই আছেন, যার ওপর আমরা ভরসা করতে পারি।’
তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে নিশ্চিতভাবে উদ্যোগী হয়েছেন ট্রাম্প। গত কয়েক মাসে উভয় পক্ষের সরকারই সম্পর্ক উন্নয়নে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন। বাণিজ্যিক চুক্তি চূড়ান্ত করতেও অগ্রগতি হয়েছে তাদের। এটি কার্যকর হলে চীনের ওপর তাইওয়ানের নির্ভরশীলতা কমবে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানি অঞ্চলটিতে বিনিয়োগ করবে। তাছাড়া তাইওয়ানকে সামরিক সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারে ট্রাম্পের অবস্থানের কারণে অনেকে পছন্দের শীর্ষে রেখেছেন তাকে।
ভিয়েতনাম: ‘বেপরোয়ার ক্ষেত্রে সাহসী’
বিগত ৫০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও বেইজিং উভয়েই ভিয়েতনামের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তারপরও ভিয়েতনামের বহু নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রকে অনেকাংশে ক্ষমা করে দিয়েছে, আর চীনকে দেখে থাকে হুমকি হিসেবে।
ভিয়েতনামে ট্রাম্পের ভক্তরা দুই ভাগে বিভক্ত বলে মনে করেন সাংবাদিক ও ব্লগার লিন নুগুয়েন। তিনি মনে করেন, অনেকেই তাকে বিনোদনদাতা হিসেবে পছন্দ করেন। আবার অনেকে আছেন তার কট্টর সমর্থক। হংকং ও তাইওয়ানের অনেকের মতো তারাও মনে করেন, চীন ও ভিয়েতনামের কমিউনিস্টদের নিষ্ঠুরতার জবাব দিতে আবারও ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসা দরকার।
ট্রাম্প কিংবা বাইডেন কেউই ভিয়েতনাম নিয়ে তাদের কৌশল সম্পর্কে মুখ খোলেননি। আর ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন অন্য দেশের বিরোধ কিংবা সংঘাতে হস্তক্ষেপ করতে তাড়াহুড়া করবেন না তিনি।
জাপান: ‘এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়’
জাপার দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবান সহযোগী ও মিত্র বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। কিন্তু ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর জাপানের অনেক নাগরিক তার আমেরিকা ফার্স্ট নীতির প্রভাব দুই দেশের সম্পর্কের ওপর কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি কয়েকটি বহুপাক্ষিক চুক্তিতে ছুরি চালান আর মার্কিন সেনা অবস্থানের জন্য জাপানকে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার চাপ দেন।
ইয়োকো ইশি নামে এক ইউটিউবার বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাদের মিত্র। জাপানে আমরা তাকে সমর্থন দেওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা।’
Posted ৪:৩১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০২ নভেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy