চিন সীমান্তে নিরাপত্তায় কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না ভারত। সীমান্তে আকাশপথে কড়া নজরদারি চলছে বলে জানালেন বায়ুসেনা প্রধান আরকেএস ভাদুড়িয়া। যদিও তিনি জানিয়েছে গত কয়েক মাসে আকাশপথে কোনও চিনা অনুপ্রবেশ হয়নি।
কক্সবাংলা ডটকম(২০ জুন) :: লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় উত্তেজনার মধ্যেই সিকিম সেক্টর ও ডোকলাম সীমান্তেও চোখ রাঙাচ্ছে চীন। গত দুদিন আগে ডোকলাম মালভূমিতে রেকি করে গেছে চীনা সেনারা।
ভারতের সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ভুটান সেনার আউটপোস্টে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে ডোকলাম পর্যন্ত এগিয়ে যায় চীনের সেনারা। তারপর সেখানকার ভূ-কৌশলগত ছবি তোলে তারা।
কার্যত বলা যায় ভারত ও চীনের অপর সীমান্ত ডোকলামে টহল দিয়ে গেছে চীনা সেনারা।
১৫ জুন রাতে লাদাখের গালওয়ান সীমান্তে চীনা সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় ভারতের। এতে ভারতের ২০ সেনা নিহত হয়। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়।
এ অবস্থায় লাদাখে অত্যাধুনিক অ্যাপাচে হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে ভারত। যাতে রয়েছে ট্যাংকবিধ্বংসী মিসাইল ও রকেট।
এদিকে থেমে নেই চীনও। দেশটির পিপলস লিবারেশন আর্মিও (পিএলএ) সেনা সরঞ্জাম বাড়াচ্ছে ভারত সীমান্তে। তারা প্যানগং লেকের উত্তর তীর বরাবর ঘাঁটি বসিয়েছে।
এছাড়া তিব্বতের হোতান ও কাশগড় বিমানঘাঁটিতে অত্যাধুনিক জে-১১ ও জে৮ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে বেইজিং।
ভারতের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, লাদাখ দক্ষিণ চীন সাগর নয় যে, সেখানে একতরফাভাবে চীনা সেনারা দাপিয়ে বেড়াবে। প্রয়োজনে যোগ্য জবাব দেওয়া হবে এবার।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, দেশের ভূখণ্ডের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
বায়ুসেনা প্রধান কানিয়েছেন, কমব্যাট এয়ার পেট্রোলিংও চলছে আকাশ পথে। পার্বত্য অঞ্চলে চিনের একাধিক এয়ারবেস রয়েছে। আর সেখান ধেকে কোনোরকম বেগতিক দেখলেই ভারত এগিয়ে যাওয়ার পুরো প্রস্তুতি নিয়েছে।
কমব্যাট এয়ার পেট্রলিং-এর ক্ষেত্রে অস্ত্র সহ চপার বা যুদ্ধবিমান ওড়ানো হয়। আর লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের কাছে সেটাই ঘটছে।
বৃহস্পতিবারই লাদাখের আকাশে মিগ বিমান বা অ্যাপাচে হেলিকপ্টার ওড়াতে দেখা গিয়েছে। আর তারপরই এমন মন্তব্য করলেন বায়ুসেনা প্রধান।
বায়ুসেনা প্রধান আরও বলেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় যা হচ্ছে, তা আমরা কী করতে পারি তার একটা ছোট ছবি। কম সময়ের মধ্যে আমরা কী করতে পারি এটা তার প্রমাণ। লাদাখকাণ্ড নিয়ে এমনটাই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তিনি।
তিনি জানিয়েছেন, ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী সর্বদা সজাগ। তিনি আরও জানিয়েছেন চিনের এমন ব্যবহার সত্বেও ভারত চায় শান্তিপূর্ণভাবে সীমান্ত সমস্যার সমাধান হোক।
সম্প্রতি, লে ও শ্রীনগরে এয়ারবেস পরিদর্শন করে এসেছেন বায়ুসেনা প্রধান আরকেএস ভাদুরিয়া। এয়ারবেস গুলিতে প্রস্তুতি কেমন, তা দেখার জন্যও তিনি গিয়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। যে কোনও পরিস্থিতিতে যাতে দ্রুত অ্যাকশন নেওয়া যায়, সেই প্রস্তুতিই দেখে এসেছেন তিনি।
ইতিমধ্যেই ভারত একাধিক ফাইটার জেট সাজাতে শুরু করেছে ওইসব এয়ারবেসে। মনে করা হচ্ছে সীমান্তে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে এই এয়ারবেসগুলিই সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
চীনের সঙ্গে উত্তেজনার সময় প্রয়োজনে স্থলবাহিনীকে কৌশলগত সহায়তা দিতে লাদাখ অঞ্চলে অ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে ভারতীয় বিমান বাহিনী (আইএএফ)। পাশাপাশি সেনা ও সরঞ্জাম পরিবহনে সহায়তা করার জন্য চিনুক হেভি লিফট চপারও ব্যবহার করা হচ্ছে।
ওই অঞ্চলে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর তৎপরতাও বেড়েছে। এর মধ্যে নিয়মিত কমব্যাট এয়ার পেট্রল, গোয়েন্দা সংস্থা ও নেভির পি৮১ এয়ারক্রাফটের নজরদারি বিমানের উড্ডয়নও রয়েছে।
মধ্য প্রদেশের গোয়ালিয়র থেকে লাদাখ অঞ্চলের ঘাঁটিতে মিরেজ ২,০০০ ফাইটার এয়ারক্রাফট নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যে সেগুলো যেন লাদাখ অঞ্চলে পৌছতে পারে সেজন্য এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর বুধবার সন্ধ্যায় বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আর কে এস ভাদুরিয়া আকস্মিক সফরে লেহ ও শ্রীনগর যান।
ওই বৈঠকের পর থেকে বিমান ও নৌবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
এর আগের খবরে বলা হয়েছে যে নৌবাহিনীর ইস্টার্ন ফ্লিট থেকে অতিরিক্ত যুদ্ধজাহাজ ভারত মহাসাগরে মোতায়েন করা হয়েছে।
লেহ অঞ্চলে পদাতিক বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি এসব মোতায়েন করা হচ্ছে।
লেহ অঞ্চল-ভিত্তিক ১৪ কোর অস্ত্র ও জনবলে যথেষ্ঠ সুজজ্জিত হলেও সেখানে আরো সেনা পাঠানো হয়েছে রিজার্ভ ও অগ্রবর্তী স্থানে মোতায়েনের জন্য।
তবে আইএএফ আর কি কি অস্ত্র নিয়ে গেছে সে ব্যাপারে মুখ খুলছে না।
তবে সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে যে লাদাখে চিনুক মোতায়েন করা হয়েছে এবং চিনুক যে কাজের জন্য কেনা হয়েছে এগুলো সেই কাজ করছে।
একটি সূত্র বলে, সেখানে এসব সম্পদ কাজে লাগানো হচ্ছে। পদাতিক সেনাদের ক্লোজ এয়ার সাপোর্ট দিতে অ্যাপাচি আনা হয়েছে। চিনুক আনা হয়েছে দ্রুত সেনা ও সরঞ্জাম পরিবহনের জন্য।
Posted ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২১ জুন ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy