কক্সবাংলা ডটকম :: ইন্দোচায়না অঞ্চলে একটি প্যান-এশিয়ান রেলওয়ে নির্মাণে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিল চীন। কিন্তু থাইল্যান্ডে এসে নির্মাণকাজে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। খবর নিক্কেই এশিয়া।
প্যান-এশিয়ান রেলওয়েটির নির্মাণকাজ লাওস পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে। গত ডিসেম্বরে চীন-লাওসের মধ্যে দ্রুতগতির রেলওয়ে চালু হয়। প্রায় ৬০০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত রেলওয়েটির ৭০ শতাংশ অর্থায়ন করেছে বেইজিং। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নে লাওসকে বড় আকারের ঋণসহায়তাও দিয়েছে চীন। এখন পর্যন্ত গৃহীত ঋণের ১০ কোটি ডলারের অধিক ফেরত দিতে সক্ষম হয়নি লাওস।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র ভূবেষ্টিত দেশটি দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনৈতিকভাবে ধুঁকছে। বিআরআই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে লাওসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে—এ প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশটিকে বড় অংকের ঋণসহায়তা দিয়েছে বেইজিং।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রেলওয়ে নেটওয়ার্ক বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে চীন। দক্ষিণ চীন সাগর ও মালাক্কা প্রণালি এড়িয়ে বিকল্প বাণিজ্যপথ হিসেবে রেল নেটওয়ার্কটি নির্মাণের পরিকল্পনা করে আসছিল বেইজিং। এখন এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে থাইল্যান্ডের সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরকে সংযুক্ত করতে থাইল্যান্ডকে দলে রাখতে মরিয়া চীন। লাওস-চীনের মধ্যে চালু হওয়া দ্রুতগতির রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া না হওয়া নিয়ে ব্যাংককের কাছ থেকে দ্রুত উত্তর চাচ্ছে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চ্যান-উচার সরকারকে এ ব্যাপারে ততটা আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না। ব্যাংককের সঙ্গে লাওস সীমান্তবর্তী নং খাই প্রদেশ ও ভিয়েনতিয়েনের মধ্যকার ৬০৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথটি নির্মাণে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বেইজিং। প্যান-এশিয়ান রেলওয়েটিতে যাত্রী ও কার্গোবাহী ট্রেনের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। ২০১৫ সালে ব্যাংককের সঙ্গে বেইজিংয়ের যখন চুক্তি হয় তখন থাই সরকারকে বেশ আন্তরিক মনে হয়েছিল।
প্রাথমিক পরিকল্পনায় রেলওয়ে লিংকটি তৈরিতে প্রয়োজনীয় অর্থসহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চীন। ২০২০ সালের মধ্যে লিংকটির নির্মাণকাজ সম্পন্নের কথা ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে যখন নির্মাণকাজ শুরু হয় তখন প্রকল্পটি নিয়ে পুরো ভিন্ন অবস্থান নেয় ব্যাংকক। চীনের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা চোখ বুঝে মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক পদক্ষেপ নেয়া শুরু করে থাই সরকার। বেইজিংয়ের বেশ কিছু অন্যায্য দাবির মুখেই এমন রক্ষণশীল ভূমিকা নেয় থাইল্যান্ড। বড় অংকের চীনা ঋণের সঙ্গে বিভিন্ন শর্তও আসে। লিংকটি নির্মাণে চীনা উপকরণ ও কর্মী নিয়োগের শর্তারোপ করা হয়।
রেলওয়ে লাইনের আশপাশ মেরামত ও ঠিকঠাকের অধিকারও দাবি করে তারা। এতে পিছু হটে ব্যাংকক এবং লিংকটির দৈর্ঘ্য ৬০ শতাংশ কমিয়ে ২৫৩ কিলোমিটার করা হয়। এছাড়া কার্গো পরিবহন বাদ দিয়ে কেবল যাত্রীবাহী ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিবেগের রেলওয়ের ব্যাপারে রাজি হয় হয় ব্যাংকক।
শুরুতে চীন-থাই যৌথ প্রকল্প হিসেবে কার্যক্রম শুরু হলেও সেখান থেকে সরে আসে ব্যাংকক। ২৫৩ কিলোমিটার রেলওয়ের ৫০০ কোটি ডলার ব্যয়ের পুরোটাই নিজেরা বহন করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রায়ুথ চ্যান-উচার সরকার। এতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের বিআরই বেশ হুমকির সামনে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকক যে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে তাতে পুরো প্রকল্পের অর্থায়ন, নির্মাণ ও পরিচালনা করবে থাইল্যান্ড। অন্যদিকে রেলওয়ের ডিজাইন, সিস্টেম ও দ্রুতগতির ট্রেন সরবরাহ করবে চীন।
শুরুতে যে পরিকল্পনা নিয়ে শুরু হয়েছিল, তা থমকে দাঁড়ানোর ফলে রেলওয়ে লিংক নির্মাণের কাজ ঢিমেতালে চলছে। নির্মাণকাজ শুরুর চার বছর পর ব্যাংকক-নাখন রাচাসিমা সেকশনের মাত্র ৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নিজ দেশের অভ্যন্তরে রেলপথ নির্মাণে আগ্রহী হলেও লাওসের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার ব্যাপারে সম্প্রতি অনিচ্ছা প্রকাশ করছে থাইল্যান্ড। এর একটা কারণ হচ্ছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে লাওসের সঙ্গে একটি রেললাইন রয়েছে।
বেইজিংয়ের বিআরআই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন রেললাইন নির্মাণে যে বড় অংকের ব্যয় হবে তা বহনে অনিচ্ছুক ব্যাংকক। তাছাড়া থাইল্যান্ডে রেলপথ যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নয়। মোট যাত্রী পরিবহনের ২০ শতাংশ এবং কার্গো পরিবহনের মাত্র ২ শতাংশ সম্পন্ন হয় রেলপথে।
Posted ৬:৫৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Chy